অধ্যায় ৫: সময়ের পর্দা
বিয়ের পর কেটে গেছে তিন বছর।
কলকাতার ব্যস্ত জীবন আর সংসারের দায়িত্বে অভিরূপ আর রাধা—দুজনেই একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে।কি ভাবে যে তিন টে বছর পেরিয়ে গেল আজ ভাবতেই অবাক লাগে।
তাদের ভালোবাসা এখন আর শুধু চোখে চোখ রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ছোট ছোট দায়িত্ব, ব্যস্ত সময়, ক্লান্ত সন্ধ্যা, আর ভাগ করে নেওয়া স্বপ্নের ভিতরে।
একদিন রাধা চুপচাপ ছিল সকাল থেকে।
অভিরূপ টের পেয়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
রাধা অভিরূপের কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, একটু হাসল, তারপর বলল, “তুই শুধু স্বামীই নয় রে, এবার বাবা হতে চলেছিস।”
অভিরূপ স্তব্ধ হয়ে গেল। তার চোখে জল জমে উঠল—এতোদিনের চিঠি, অপেক্ষা আর স্বপ্নের সব উত্তর যেন মিলল এই এক বাক্যে।
সেইদিন রাতেই সে রাধার কপালে চুমু খেয়ে বলেছিল—
“এই নতুন চিঠিটার নাম আমরা রাখব ‘জীবন’।"
রাধার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তারা সিদ্ধান্ত নিল তাদের সন্তান জন্মাবে গ্রামে। গ্রামের শান্ত, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পরিচিত মুখ, আর মাটির গন্ধ—সব যেন ডেকে নিয়ে যাচ্ছিল তাদের।
গ্রামে ফিরে তারা। আবার নদীর পাড়ে হেঁটে বেড়াতে লাগল, যেখানে অপেক্ষা করত রাধা, আর চিঠি লিখত অভিরূপ।
রাধা বলল,
“দেখেছিস? এই পাড়েই তো শুরু হয়েছিল আমাদের গল্প, আবার এখানেই এক নতুন গল্প শুরু হতে চলেছে।”
সন্তানের জন্মের পর অভিরূপ আবার একটা চিঠি লেখে।
তবে এবার সে পাঠায় না ডাকবাক্সে,
সে চিঠি সে পড়ে শোনায় তার সদ্যজাত কন্যাকে—
প্রিয় মেয়ে,
তুই জন্মানোর আগেই আমাদের সব কষ্টের উত্তর হয়ে গেছিস।
তোকে নিয়েই আমাদের নতুন অধ্যায়।
তুই যেন শিখিস—ভালোবাসা মানে শুধু ফুল আর হাসি নয়,
ভালোবাসা মানে প্রতিদিন একে অপরের পাশে থাকা,
প্রতিটি কঠিন দিন একসাথে পেরিয়ে যাওয়া।
একদিন, গ্রামেরই এক স্কুল থেকে ডাক এল।
বাচ্চাদের জন্য “ভালোবাসা ও পরিবারের মূল্য” বিষয়ে গল্প বলার জন্য।
রাধা আর অভিরূপ গেল সেখানে।
একদল শিশু তাদের ঘিরে বসে শুনল—
“একটা চিঠি…
যা হারিয়ে গিয়েছিল,
তবু ভালোবাসা হারায়নি…”
সেদিন অভিরূপ বলেছিল—
ভালোবাসা চিঠির মতোই…
ঠিক সময়ে না পৌঁছালেও যদি সত্য হয়,
একদিন ঠিক ঠিকানা খুঁজে নেয়।
এটা কোনও গল্পের শেষ নয়।
এটা সেইসব সম্পর্কের গল্প, যেগুলো সময়ের পর্দা পেরিয়ে নিজেকে প্রমাণ করে।
তবে রাধা আর অভিরূপের যাত্রা চিরকাল চলতে থাকবে।
0 মন্তব্যসমূহ