গাঁয়ের বধূ

 গাঁয়ের বধূ

অতনু সরকার






জীবন এখানে থেমে থাকে না। এখানে জীবন থেমে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। চলমান একটা জীবন। ব্যস্ততম একটা শহর। এখানে সবুজ নেই শুধু কংক্রিট,ইট, কাঠ পাথরের এক জনজীবন। থমকে আছে সাধারণ মানবিকতা।  কেউ কারো সঙ্গে মানবিকতা দেখানোর পর্যন্ত সময় এখানে নেই। কেউ অসুস্থ হলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হলেই ঘুরে দেখার সময় হয় না কারোর। তবু মানুষ এখানে বাস করে হাজারে হাজারে লাখে লাখ। কারণ এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে প্রচুর অফিস এবং কর্মক্ষেত্র। কর্মীর তাগিদে সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে এখানে থাকতে হয়। এখানকার প্রতিটা রাত রহস্যময় প্রতিটা রাত রমণীয়।কারণ সারাদিনের কর্মব্যস্ততা ভুলতে রাতকেই বেছে নেয় মানুষ। আমেরিকার ব্যস্ততম শহর লস এঞ্জেল। এই ব্যস্ততম শহর থেকে সদ্য ফিরে এসেছ পাড়াগাঁ য়ে জন্ম নেওয়া অর্থাৎ এই গ্রামেরই ছেলে সুবিনয়। পাঁচ বছর আগে মেধাতালিকায় প্রথম হয়ে ফরেন স্কলারশিপ নিয়ে সে গিয়েছিল আমেরিকায়। তারপর সেখানকার পড়াশুনা দ্রুত শেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে সুবিনয়। লস এঞ্জেল তার কর্মক্ষেত্র। ব্যস্ততম এই শহরে এখন আর মন বসছে না তার। পাইছি যেতে চাই ফ্রান্সে। তুই একটা কোম্পানির সঙ্গে ইতিমধ্যেই তার কথা হয়েছে। সেলারি আগে থেকেও অনেকটা বেশি। কিন্তু বর্তমান কোম্পানির সঙ্গে তার এখনো ছয় মাসের চুক্তি রয়েছে। শেষ করে তাকে যেতে হবে অন্য কোন কোম্পানিতে। ছুটি পাওনা রয়েছে একমাস। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেশে ফিরেছে সে। বাড়ির লোক স্বাভাবিকভাবে খুব খুশি। ইতিমধ্যেই তার চাকরির টাকায় নতুন বাড়ি হচ্ছে। ধার দেনা যা কিছু ছিল প্রায় শোধ হয়ে এসেছে। বিদেশে পড়তে গিয়ে অনেক টাকা ধার হয়েছিল তার। এমনকি বাড়ির কিছু জমি জায়গা ও বিক্রি করতে হয়েছিল। সে কথা দিয়েছে তার মাকে দু এক বছরের মধ্যে কিছু জমি জায়গা আবার কিনে নেবে। সুবিনয় মনে মনে ঠিক করেছে ৪-৫ বছর বিদেশে কাটিয়ে ফিরবে দেশে। দেশের কোন বড় কোম্পানিতে ট্রাই করবে তখন। আপাতত বিদেশেই থাকতে চাই সে। কারণ সেখানে মাইনে অনেক বেশি। সেখানকার জীবনযাত্রা এখানকার গ্রামীণ জীবনযাত্রা অথবা যেকোনো শহরে জীবনযাত্রাকে অনায়াসে হার মানিয়ে দেবে। ইউরোপে থাকার লোক আমরা তো অনেকেই সামলাতে পারি না। সেখানে সুবিনয়ের মতন সদ্য প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া একজন যুবকের কাছে এই চিন্তা ভাবনা তো একেবারে স্বাভাবিক। এখানে কয়েকদিন থাকার পর তাকে ফিরতে হবে আমেরিকায়। যে কদিন এখানে থাকবে সে কদিন পুরোপুরি বিশ্রাম নেওয়ার পরিকল্পনাই আছে তার। সুবিনয়ের মামা অনেকবার বলেছে তাকে সেখানে যেতে কিন্তু সুবিনয় এই মুহূর্তে কোথাও যেতে চাইছে না কারণ ব্যস্ততম জীবনের থেকে কিছুটা রিফ্রেশমেন্ট নেওয়ার জন্য এসেছে নিজের গ্রামে। গ্রামটা সবুজ মায়াময় একটা গ্রাম। চারিদিকে প্রচুর ধানক্ষেত সবজি খেয়ে আর ঠিক তার মাঝখান দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে গ্রামের ভিতর। এই ধান মাঠে সুবিনয়েদেরও জমি রয়েছে। এই পথ ধরেই কিছুটা এগিয়ে যেতেই পড়বে সুবিনয়ের গ্রাম পল্লীশ্রী। নামের সঙ্গে এই গ্রামের শ্রী যুক্ত হওয়ার কারণ আছে কিনা জানিনা। কিন্তু যখনই গ্রামের পথে ঢুকবেন দেখবেন কালো বীজের রাস্তার দুধহার দিয়ে সারি সারি গাছ আপনাকে স্বাগত জানাবে। গ্রামের রাস্তায় ঢুকবে, মাটি র সরুপথ ধরে আমি এগিয়ে যাবেন তখন দেখবেন গাছ আপনাকে ছায়া প্রদান করছে ছাতার মতন।। কিছু দূরে একটা বাঁশ বাগান রাস্তার দু'ধারে বাঁশ গাছগুলো একে অপরের মধ্যে কোলাকুলি করছে। তার ভিতর দিয়ে যখন হেঁটে যাবেন তখন মনে হবে অপূর্ব মায়া-ময় পরিবেশ। চারিদিকে কত পাখির কলকা কলিতে মুখরিত হতে হবে আপনাকে। বহুদিন পর গ্রামে ফির এই পথ দিয়েই হাঁটছিল সুবিনয়। এই পথটা দিয়ে একটু এগিয়ে গেলে পড়বে একটা নদী। নদীটি এখন বুঝে গেছে। বর্ষাকালে জল থাকলেও সারা বছর এখানে খুব একটা জল থাকে না। সুবিনয় ওই নদীর পাড়ে গিয়ে একটু বসবে। এখানে কেটেছে তার ছোটবেলা। একটা কদবিল ছিল সেখানে। ওই কত বেল গাছের তলায় বসে বন্ধুদের সঙ্গে কত গল্প কত আড্ডা আর খেলাধুলা করত সে। আড্ডা দিলেও নিজের পড়ায় কখনো ফাঁকি দিত না সে। আজ বহুদিন পর সেই গাছটা তলায় গিয়ে বসতে ইচ্ছা হলো তার। হাতি দামি মোবাইল ফোন। সেই মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে তুলতে হেঁটে যাচ্ছিল সুবিনয়। এই ছবিগুলো সে দেখাবে তার আমেরিকার সহকর্মীদের। সে যখন দেশে ফিরছিল তখন তার সহকর্মী মিগুয়েল অনুরোধ করেছিল তার গ্রামের কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসার জন্য। সময়টাও ভালোভাবে বেছে নিয়েছে সুবিনয়। এখন শরৎকাল আর শরৎকাল মানে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। আজ ষষ্ঠী। পাড়ায় যে দূর্গা মন্ডপ আছে সেখানে ঢাক বাজছে। ঢাকের শব্দ কানে এলে মনটা বড়ই উতলা হয়ে ওঠে তার। পাঁচ বছর পর ঢাকের শব্দ শুনছে। নদীর পাড়ে কিছুক্ষণ বসার পর সে ফিরে যাবে পূজা মন্ডপে সেখানে কিছুক্ষণ বসবে। পাড়ার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা হবে, দেখা হবে বয়জ্যেষ্ঠ অনেকের সঙ্গে। আপন মনে হেঁটে যাচ্ছিল সুবিনয়। হঠাৎ সুবিনয় দেখল উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসছে লাল পা ড় সাদা শাড়ি পরিহিতা এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতী। হাতে তার পূজার থালি। ষষ্ঠী পূজা উপলক্ষে হয়তো বা সে চলেছে পূজা মন্ডপের দিকে। সুবিনয় এক পলক দেখে আর চোখ ফেরাতে পারলো না। অসম্ভব সুন্দরী আর নারী। নারী ঠিক নয় যুবতী সত্য স্নান করা চুলের রাশি ছড়িয়ে পড়েছে তার মাথা থেকে পিঠ পর্যন্ত। চোখে মুখে অদ্ভুত সুন্দর স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে। হাতি পূজার থালি নিয়ে সে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। সুবিনয় অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো তারপর মেয়েটির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিল সে। মেয়েটি কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল-আরে সুবিনয় দা না? পাড়ার লোকেরা বলছিল তুমি ফিরে এসেছো, কেমন আছো? 

সুবিনয় একটু হাসার চেষ্টা করল লজ্জাও পেল। পাড়ার মেয়ে এত চোখ কিছুতেই মনে করতে পারছে না পাঁচ বছর আগে দেখা। পাঁচ বছরে মেয়েদের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয় কিশোরী মেয়ে এখন যুবতী হয়েছে। সুবিনয় একটু হাসার চেষ্টা করল তারপর বলল -আমি ভালোই আছি? তুমি কেমন আছো? তোমার নামটা যেন কি? 

মেয়েটি হাতের থালাটা এক হাতে নিয়ে অন্য হাত কোমরে দিয়ে এমন ভাবে দাঁড়ালো যেন মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঝগড়া শুরু করে দেবে। তারপর বলল - সে কি সুবিনয় দা তুমি আমাকে চিনতে পারছ না? আমি জয়ী, জয়িতা।

সুমন আরো লজ্জা পেল। সে যখন স্কুলে পড়ে তখন থেকেই এই জয়ীতা কে সুবিনয়ের ভালো লাগতো। সুবিনয় যখন আমেরিকায় যায় তখন জয়িতা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। জয়িতা খিলখিল করে সে বলল -বা-বা আমেরিকা থেকে ফিরে গ্রামের মানুষকেই চিনতে পারছে না দেখছি? তা পারবেই বা কি করে আমেরিকায় মেম সাহেব দেখে দেখে অভ্যাস তো তাই হয়তো আমাদের চিনতেই পারছে না। 

সুবিনয় কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না। জয়ী আবার বলল -যাক গে আমাদের না হয় চিনতে না পারো কোন অসুবিধা নেই কিন্তু এখন এই দিকে চললে কোথায়? 

সুবিনয় এবার উত্তর দেবার মতন একটা জায়গা পেল বলল-  নদীর ঘাটে যাব।

জয়ী বলল -নদীর ঘাটে কিন্তু এখন তো সেখানে কেউ বসে না কেউ যাইও না। 

সুবিনয় -কেউ যায় না সেখানে? বসেও না? পাশে যাইহোক আমি গিয়ে কিছুক্ষণ বসবো। 

জয়ী বললো - যাও সাবধানে যেও আমেরিকা থেকে ফিরেছো নদীর ঘাট কি আর ভালো লাগবে তোমার।

কথাটা বলে জয়ী যেমন যৌবনবতী গজগামিনী গতিতে হেঁটে এসেছিল ঠিক সেই ভাবে ধীরে ধীরে ধমকে থমকে চন্ডী মন্ডবের দিকে হেঁটে গেল। সুবিনয় দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখল। যতদূর পর্যন্ত দেখা যায় ততদূর পর্যন্তই দেখল বুকের ভেতরটা কেমন যেন একটা নড়েচড়ে উঠলো। জয়িতা সরকার। অত্যন্ত বুদ্ধিমতি মেধাবী ছাত্রী ছিল সে। বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছে। সুবিনয় আবার হাঁটতে শুরু করল। খুব ইচ্ছা করছিল তার একটা ছবি মোবাইলে তুলে নেবার। কিন্তু জয়িতা যে রাজি হবে না বা জয়িতাকে এ কথা বলা যায় না এটা সে ভালোভাবেই জানে। একটু হেঁটে সে যখন নদীর পাড়ে গিয়ে বসলো তখন নদীর মৃদু জলে দলে দলে হাঁস ভেসে চলেছে। পাড়ার কেউ হয়তো পুষেছে এই হাঁসগুলি। অথবা অন্য কোথাও থেকেও আসতে পারে। কত বেল গাছটা এখন আর নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তার কোনো চিহ্ন খুঁজে পেল না। পাশের একটা আম গাছ ছিল। নদী থেকে বেশ কিছুটা পিছন দিকে। কদিন গাছটা ছিল একেবারে নদীর ধারে ঘাটের পাশে। ঘাটে রোদ্দুরের জন্য বসতে পারল না সে। ঘাটের কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে পিছনে যে আমগাছতে ছিল সেই আম গাছের শিকড়ের উপর বসলো সুবিনয়। 

হঠাৎ তার মনের মনিকোঠায় ভেসে এলো কিশোরী জয়িতা। কিশোরী জয়ী তাকে সে সত্যিই ভালোবাসতো মনে মনে তখন জয়িতাকে কিছু বলার সাহস তার ছিল না। সেও তখন যুবক। পাড়াগাঁয়ে মেয়েদের প্রেম নিবেদন করা খুব একটা সহজ কথা নয়। এখন যদিও মোবাইলের দৌড়াতে সেসব অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সুবিনাই যখন কলেজে পড়তো তখন তাদের কাছে মোবাইল থাকলেও এত আধুনিকতায় পৌঁছে যেতে  পারেনি। মোবাইল ছিল একেবারেই সাধারণ সাদামাটা। এখন যেমন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম রয়েছে তখন হয়তো ছিল কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে এসব ছিল দুরস্ত। বারবার ভেসে উঠছিল জয়িতার সঙ্গে কাটানো কিছু কিছু মুহূর্ত। পাড়ার মেয়ে হয় পাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পূজা পারবনি একসঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে তারা সেখানেই অংশ নিত পাড়ার ছেলে মেয়েরা। একসঙ্গে নাটক হত মেয়েরা আলাদা করে নাচেরে অনুষ্ঠান করতো ছেলেরা আবৃত্তি পরিবেশন করত কেউবা গান করতো পুজোর কটা দিন তাদের কাটতো বেশ ভালো করে। হঠাৎ জয়িতা যেন মনের মধ্যে গেঁথে গেল। আমেরিকার বান্ধবীদের গ্ল্যামার আছে সৌন্দর্য আছে কিন্তু তাদের মধ্যে জয়িতার মতো স্নিগ্ধতা নেই। নেই জয়িতার মতো অপরূপ সৌন্দর্য। সেই কারণে মিগুয়েল জুলিয়ান তার বান্ধবী হলেও প্রেমিকা হতে পারেনি। আজ জয়িতাকে দেখে তার মনে হলো জীবনের পরিপূর্ণতা পেতে জয়ী থাকে তার দরকার। কিন্তু দরকার বললেই তো আর পাওয়া যায় না। যুবতী স্বাধীনচেতা ইচ্ছা করলেই তাকে আর পাওয়া যায় না। যদিও আগেও পাওয়া যেত না। জয়িতা ছিল অত্যন্ত স্বাধীনচেতা, মননশীল এবং অত্যন্ত রক্ষণশীল একজন। জয়িতার জন্য মনটা তার উদ্বেগ হয়ে উঠলো এখানে আর বসতে ভালো লাগলো না তাই হাঁটতে শুরু করল পূজা মন্ডপের দিকে। সেখানে গেলে হয়তো আর একবার যদি থাকে দেখতে পাবে সে। 

পাড়ার পূজা মন্ডপে গিয়ে দেখল সেখানে জয়িতা অন্য অনেকের সঙ্গে ফুলের মালা তৈরি করতে ব্যস্ত। মন্ডপে প্রতিমা এসেছে সেই প্রতিমা দেখার অছিলায় কিছুটা এগিয়ে গেল সে। কয়েক পলক প্রতিমার দিকে তাকালেও তার চোখ যে জয়িতার দিকে ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। জয়িতা আর চোখে একবার দেখেছিল সুবিনয় কে। সেখান থেকে জয়িতা বলল -অনেকদিন পর গ্রামে পুজোতে কেমন লাগছে। 

সুবিনয় বলল -ছোটবেলা থেকেই পূজোর সঙ্গে যুক্ত সে তো তুমি জানো আর ঢাকে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আজ সকাল থেকে এই মনটা কেমন উতলা ছিল। 

জয়িতা -বাঙালি তো তাই ঢাকে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মন উতালা তো হবেই। 

জয়িতার সঙ্গে ফুলের মালা তৈরি করছিল পাড়ার আরো কয়েকটি মেয়ে তারা আগেই দেখেছে সুবিনয় কে। তাদের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে মালা কাঁদতে কাঁদতে উঠে এল সুবিনয়ের দিকে  বললো - কিরে সুবিনয় দা কেমন আছিস? চিনতে পারছিস আমাকে? আমি মনোমিতা। 

সুবিনয় অনেকক্ষণ দেখলো তার দিকে তারপর বলল - চিনতে পারছি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছিস তুই। তারপর কি খবর বল কি করছিস এখন। 

মনোমিতা বলল -কিছু না চেষ্টা করছি পরীক্ষা দিচ্ছি দেখা যাক।

মনোমিতা আবার তার জায়গায় গিয়ে বসলো। আবার সে নিজের কাজে মন দিল। সুবিনয়ে একটা চেয়ার দিয়ে কিছুটা দূরে বসলো। তার ঠিক উল্টোদিকে বসে রয়েছে ঢাকি তার ছেলেকে নিয়ে। ডাকি কে বললো, ঢাকি মশাই একটু বাজান শুনি। পাঁচ বছর পর ফিরছি গ্রামে। কতদিন ঢাকের শব্দ শুনি না।

ঢাকি আক্তার হেসে বলল - তা বাবুমশাই কবে ফিরলেন। আমি কিন্তু আপনাকে চিনি।আপনি বড় বাড়ির ছেলে না। 

সুবিনয় বলল - হ্যাঁ।

ঢাকি ঢাক বাজাতে শুরু করল।

সুবিনয়দের বাড়িকে সকলেই বড়বাড়ি বলে। এক সময় এই সুবিনয়ের দাদু ছিলেন এই গ্রামের খুব নামকরা একজন ব্যক্তি। খেলাধুলা শিল্প ও সাহিত্য। খেলাধুলাতে তার খ্যাতি ছিল রাজ্যজোড়া। তিনি খেলাধুলা করে অনেক টাকা আয় করেছিলেন এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি বাড়ি তৈরি করেছিলেন বড় করে। তাই গ্রামের সকলেই বড় বাড়ি নামেই চিনি তাদের বাড়িকে।


আজ সপ্তমী পূজা। সপ্তমী পূজা শেষ হলে পাড়ার ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে একটি নাটক। তার জন্য তৈরি হয়েছে স্টেজ। সেখানেও নেতৃত্ব দিচ্ছে জয়িতা। এইসব কাজে জয়িতাকে সব সময় পাওয়া যায়। সুবিনয় মন্ডপে আসে আর জয়িতা কে দুচোখ ভরে দেখতে থাকে। মাঝেমধ্যে জয়িতার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায়। তারমানে যদি ও তাকে দেখছে। দু একটা কথাও হয় কিন্তু সেই ভাবে সময় করে উঠতে পারছে না যে বসে দুটো কথা বলবে। সপ্তমী পুজো শেষ হতেই শুরু নৃত্য অনুষ্ঠান। সেখানে জয়িতার নাচ দেখল সে। অসাধারণ একটা নৃত্য সকলেই মোহিত হয়ে দেখছিল সেই নাচ। আসলে যে রাধে সে চুলও বাধে, সে পড়াশুনাও করে পূজা করে, সে নাচও করে। সুবিনয় জয়িতাকে যত দেখছে ততই তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করছে কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কোন সাড়া নেই। 

আজ অষ্টমী পূজা। পূজা মন্ডপে অনেক ভিড়। অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার জন্য নতুন নতুন পোশাকে হাজির হয়েছে সবাই। নতুন ধুতি আর পাঞ্জাবিতে সুবিনয় কে বেশ মানিয়েছে আজ। জীবনে এই প্রথম সে ধুতি পাঞ্জাবি পড়ল বাবা-মার অনুরোধে। সঙ্গে রয়েছে সুবিনয়ের বোন সুনিতা। অষ্টমী পূজো শুরু হওয়ার মুখে। মন্ডপে ঠেলাঠেলি আর ভিড়। ঠেলা খেতে খেতে সে একটু এগিয়ে গেল। পাড়ার এক কাকিমা সবাইকে ফুল দিচ্ছিল। সুবিনয়ের হাতে ফুল এলো না। সুনিতা সুবিনয় থেকে অনেকটা এগিয়ে গেছে। সুবিনয় ফুলের জন্য এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। হঠাৎ তার পাশ থেকে জয়িতা তার হাতে ফুল গুজে দিয়ে নিজের মতন জোর হাত করে দাঁড়ালো। সুবিনয় এক পলক দেখল তাকে। সুবিনয়ের ঠিক পাশে লাল পাওয়ার সাদা শাড়ি অসামান্য সুন্দরী এক যুবতী নারী। তার চুল থেকে মৃদু মৃদ ু জুঁই ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। মাথার খোপায় রয়েছে জুঁই ফুলের মালা। অপরূপ এক স্নিগ্ধকর মমতা যেন ছড়িয়ে দিয়েছিল সুবিনয়ের শরীরে। জয়িতা নিজের মতন অঞ্জলি শেষ করে ফিরে যাচ্ছিল। 

সুবিনয় বলল - থ্যাঙ্ক ইউ।

জয়িতা একটুখানি হেসে মাথাটা নামিয়ে নিজের কাজে চলে গেলে। 

অষ্টমী পুজোতে পাড়ার সকলেই আসে মন্ডপে। অনেকেই সঙ্গে দেখা হলো তার। পাড়ার অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ সমবয়সী বন্ধু ছোট ভাই বোন কত মানুষের সঙ্গে তাকে কথা বলতে হল। সকলেই জানে সুবিনয় আমেরিকায় বড় চাকরি করে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাই সকলেই তাকে সম্মান করছে। করারই কথা। মানুষ যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য সম্মান করবে এটাই তো রীতি। মন্ডপে বসে বন্ধুদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আড্ডা দিল সে। সুনিতা ফিরে গেছে ঘরে। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে অবশ্যই তার চোখ ছিল জয়ীর দিকে।

সন্ধ্যেবেলায় অষ্টমী পুজোর আরতি দেখছিল সে। প্রচুর মানুষের ভিড়। গ্রামের সব মানুষ এসেছে এখানে। বড় মাঠটায় মেলা বসেছে। চারিদিকে লোক গিজ গিজ করছে। ছেলে বুড়ো বুড়ি মেয়েরা কেউ মেলা দেখছি কেউবা সন্ধ্যা আরতি দেখছে। সুবিনয় কে একহাতে বসে থাকতে দেখে মনোমিতা এগিয়ে এলো তার দিকে। 

মনোমিতা বলল - কিরে একা বসে আছিস? 

সুবিনয় -এইতো এলাম আসুক সবাই বন্ধুরা তখন আড্ডা দেবো। 

মনোমিতা -তোর সঙ্গে যে কথা বলবো সেটুকুও সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সব সময় তোর পাশে লোক ভর্তি। 

সুবিনয় - বল কি বলবি।

মনোমিতা একটু ইতস্তত করল তারপর বলল - সব কথা কি আর সব জায়গায় বলা যায়। কলেজ জীবনের কথাগুলো তোর আর মনে নেই না?

সুবিনয় জানে মনোমিতা তাকে ভালোবাসতো। কিন্তু সুবিনয়ের কখনোই মনে নেই তাকে ভালো লাগত না। মনোমিতা অনেকবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে সে সুবিনয় কে ভালোবাসে। সুবিনয় কখনোই সাড়া দেয়নি তার ভালোবাসায়। বলা যায় সাড়া দেওয়ার মতন পরিস্থিতি তার কাছে ছিল না তখন। সুবিনয়ের একটাই লক্ষ্য ছিল ভালো পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। তাই সেই সময়ে কাউকে ভালোবাসা বা ভালোবাসার প্রস্তাব দেওয়া তার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। হ্যাঁ জয়িতা কে সে মনে মনে ভালোবাসতো এবং বোঝাতে চেয়েছিল এই পর্যন্ত। কিন্তু কখনো জয়িতার পিছন পিছন ঘুরে বেড়াইনি সে। উল্টো দিকে মনোমিতা ঘুরতে তার পিছন পিছন। 

মনমিতা আবার বলল-  কিরে কি ভাবছিস?

সুবিনয় বলল -ফিরে আসা দিনের কথা মনে থাকলেও এখন তা গুরুত্বহীন। কম বয়সী আমরা কত কিছুই করে থাকি তাই না। তা তোর কি খবর বল বিয়েথা কবে করবি? 

মনোমিতা -আমাকে আর কি বিয়ে করবে বল? কাজের চেষ্টা করছি রে কাজ। তোর মতন তার বড় চাকরি পাবো না। ছোটখাটো জায়গায় চেষ্টা করছি যদি পাই। 

সুবিনয় - কোন কাজের ছোটো নয়। যেটা পাবি সেটাই করবি। তা তোর বাড়ি থেকে বিয়ের চেষ্টা  করছে না। বয়স তো হলো। 

মনোমিতা -তোরও তো বয়স হবে বিয়েটা কর। বিয়ে করবি আমায়। তোকে তো অনেক বার জানিয়েছি আমি তোকে ভালোবাসি। 

সুবিনয় কি বলবে বুঝতে পারল না। তবুও একটা ঢোক দিলে বলল -দেখ মনোমিতা, তুই আমাকে বলেছিলি ঠিক কিন্তু আমি তোকে বন্ধু ভাবতে পারি তার বাইরে অন্য কিছু ভাবতে চাই না। প্লিজ কিছু মনে করিস না। আমার নিজস্ব একটা ভালোলাগা আছে। 

মনোমিতা বলল - আমি জানি সুবিনয় দা তোর ভালোলাগা। জয়িতা কে তুই ভালবাসিস। কিন্তু যেইটা তোকে পাত্তা দিত না এখনো দেবে কিনা জানিনা। 

সুবিনয় - কি কাকে পাত্তা দিল আর না দিল তাতে আমার কোন যায় আসে না। মনোমিতা তুই শুনলে হয়তো অবাক হবি অনেক ইউরোপীয় সুন্দরী আমাকে পেতে চায়। 

কথাটা বলে সুবিনয় হো হো করে হেসে উঠল। 

মোনোমিতা বলল - তা তো হবেই এত বড় চাকরি, স্মার্ট, তোকে ছাড়া কাকে ভালবাসবে বল। 

জয়িতা দূর থেকে দেখছিল দুজনকে। মনে মনে হয়তো একটু হিংসাও হচ্ছিল মনোনীতাকে দেখে। তাহলে জয়িতাও কি সুবিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে চায়?

আর দু একটা ভালো মন্দ কথা বলে মনোমিতা জনতার ভিড়ে হারিয়ে গেল। সুবিনয় যেভাবে বসে ছিল সেখানেই বসে সন্ধ্যারতি দেখছিল। মন্ডপ থেকে কিছুটা পিছনে একটু একা। একাকী সুবিনাই কে দেখে জয়িতা ঠাকুর ঘর থেকে একটা প্রসাদের থালা নিয়ে এগিয়ে এলো সুবিনয়ের দিকে। সুবিনয়ের কাছে এগিয়ে গেল সে। এখন সন্ধ্যেবেলা পড়নি জামদানি একটা শাড়ি। হালকা সবুজ রংয়ের শাড়িতে অসাধারণ মানিয়েছে জয়িতা কে। সুবিনয়ের কাছে গিয়ে বলল - অষ্টমী পূজার প্রসাদ। 

সুবিনয় - পূজা তো শেষ হয়নি এখনো।

জয়ী -সকালের প্রসাদ তোমার জন্য রেখেছিলাম আলাদা করে। 

সুবিনয় জয়ী চোখের দিকে তাকালো একবার। জয় হোক সুবিনয় দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নিল। প্রসাদটা সুবিনয়ের হাতে দিয়ে ধীরে ধীরে ফিরে এলো ঠাকুর ঘরে। জয়ী হয়তো জানিয়ে গেল সেও রয়েছে তার কাছাকাছি। সত্যিই কি তাই নাকি অন্য কিছু। আসলেই মেয়েদের মন বোঝা খুবই কঠিন। দেখতে দেখতে বন্ধু-বান্ধবরা চলে এলো মন্ডপে। অনেক রাত পর্যন্ত চলল আড্ডা। রাত বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরলো সুবিনয়। রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না সুবিনয়ের। বারবার মনে পড়ছিল জয়ীর কথা। সেই রাতে জয়ীর ও ঘুম এলো না। সারারাত ভাবছিল সুবিনয়ের কথা। পাশাপাশি ভাবছিল তার দীর্ঘদিনের বন্ধু অর্পণের কথা। অর্পণের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব কিন্তু আজ ও কেউ কাউকে বলে উঠতে পারেনি। আজও অনেকক্ষণ অর্পণের সঙ্গে কথা হয়েছে ফোনে।  অর্পণ রয়েছে শহরের বাইরে। অর্পণ আর সুবিনয় দুজন ভিন্ন জগতের লোক। একজন খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত আর আরেকজন মস্ত বড় চাকরি। সুবিনয় বিরাট বড়লোক হতে চলেছে। কিন্তু অর্পণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। একেবারে সহজ সরল সাদামাটা একটা জীবন। তার মধ্যে নেই কোন অহংকার নেই আত্ম গরিমা। অথচ সুবিনয় কে যচনা লোকে চেনে তার থেকে অনেক বেশি চেনেন অর্পণকে। কারণ অর্পণ একজন ফুটবলার। তার খেলা লোকে বাড়িতে বসে দেখে টিভিতে।। স্বাভাবিকভাবেই তার জনপ্রিয়তা সুবিনয়ের থেকে থেকে অনেক বেশি। আবার সুবিনয়ের টাকা পয়সা অনেক বেশি। বড় বাড়ি বিদেশে চাকরি বিদেশ ভ্রমণ আরো কত কি। জয়িতা দোলা চলে দুলতে থাকে। যদিও সুবিনয়ের সঙ্গে জয়িতার কখনো বন্ধুত্ব হয়নি। জয়িতা মনে মনে ভালোবাসে অর্পণকে। আর অর্পণ প্রকাশ্যে জানিয়েছে তার ভালোবাসার কথা। খেলাধুলার মহলে অনেকেই সে কথা হয়তো জানে। আইএসএল খেলতে পর পর রয়েছে হায়দ্রাবাদে। আগামী কাল তার ফেরার কথা। কথা দিয়েছে ফিরেই সে আসবে জয়িতার সঙ্গে দেখা করতে। জয়িতা অর্থ কি মনে মনে ভালোবাসে এ কথা যেমন সত্যি তেমনি সুবিনয়কে দেখার পর ছবি নায়কের কি ভালোবেসে ফেলল। জয়ী তার মন দুলতে থাকে দুলতে থাকে আর দুলতে থাকে। সারারাত ঘুমাতে পারে না সে। ভোররাতে একটুখানি ঘুম এসেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জয়িতার মা ডেকে তুললে তাকে। পাড়ার মন্ডপের মাইকে জয়িতাকে বারবার ডাকছে। আজ একটু পরেই নবমী পূজা শুরু হবে। পূজার দায়িত্বে রয়েছে জয়িতা সহ আরো কয়েকজন। সবাই সেখানে গেলেও জয়িতার দেখা নেই। মায়ের ডাকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যত দ্রুত সম্ভব নতুন শাড়ি পড়ে ধীরে ধীরে পূজা মন্ডপে গিয়ে উপস্থিত হল। কিন্তু মনের মধ্যে তখনো দোলা চল। জয়িতা জানে সুবিনয় একসময় তাকে ভালোবাসার চেষ্টা করেছিল। যদিও সেসব অতীত। এখন জয়িতার সঙ্গে ফুটবলার অর্পণের বেশ সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যদি তোর বাড়িতেও সেটা জানে। অর্পণ কি মেনে নিতে কারোরই আপত্তি নেই থাকার কথা না। হয়তো সুবিনয় কেউ মেনে নিতে আপত্তি হবে না। যেই তার কোন কাজেই মন লাগছে না।বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে সে। 

সকাল দশটায় কলকাতা বিমানবন্দরে নামলো অর্পণ। সেখান থেকে সরাসরি চলে এলো বাড়িতে। পল্লীশ্রী গ্রামের ঠিক পাশের গ্রাম সর্বপল্লী। এই গ্রামেই বাড়ি অর্পণের। বাংলা কেন ভারতবর্ষের ফুটবলে এবং খেলাধুলার জগতে তাকে চেনে না এমন লোকের সংখ্যা কম। পাঁচপাড়া গাড়ি র ছেলে অর্পণ ধীরে ধীরে  পৌঁছে গেছে তার লক্ষ্যে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অর্পনের দুটো বেজে গেল। কোনরকমে দুটো নাকে মুখেই বুঝে সে তার গাড়ি নিয়ে চলে এলো পল্লীশ্রী গ্রামের চন্ডী মন্ডপে। সর্বপল্লী গ্রামেও দুর্গাপূজা হয়। কিন্তু পূজার সময় জয়িতার সঙ্গে দেখা করাটা খুবই প্রয়োজন তার কাছে। সাদা রঙের একটা হোন্ডা সিটি এসে দাঁড়ালো মন্ডপে সামনে। মনটাকে তখন বেশ কয়েকজনের ভিড় ছিল সামনে মেলা বসেছে। গ্রামগঞ্জে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মেলা জমজমাট থাকে  রাতে খুব একটা লোক মেলায় থাকে না। রাস্তাঘাট অন্ধকার। তাই সন্ধ্যে হলে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। লোক থাকে পূজা মন্ডপে।

অর্পণ বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। পাড়ার একদল ছেলে ছুটল সেই দিকে। অর্পনের জন্যই এদিকে ফুটবল  জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আবার। ছেলেরা ছুটলো অর্পণ এর কাছে। একদম তরুণীয় এগিয়ে গেল সেই দিকে। মন্ডপের একটি চেয়ারে বসে সুবিনয় এবং কিছু লোক ছেলে দেখছিল সেই সব। 

সুবিনয় বলল -ছেলেটি কে রে? সবাই ছুটে যাচ্ছে ওদিকে, সিনেমার নায়ক নাকি? 

সুবিনয় স্কুল এবং কলেজ জীবনের এক বন্ধু অমর বসেছিল সেখানে। অমর বললো -সিনেমার নায়ক নয় তবে নায়ক বটে। এই মুহূর্তে বাংলা খেলাধুলার জগতের অন্যতম সেরা তারকা। তাই ছেলেমেয়েরা দৌড়ে তো যাবেই। 

সুবিনয় -কি নাম রে ছেলেটার আগে দেখিনি তো?

অমর - সর্বপল্লী গ্রামে থাকে নাম অর্পণ। গ্রামে গঞ্জে নয় শহর অঞ্চলেও ওকে দেখতে ভিড় জমে যায়। কলকাতা কয়েকটা পূজো উদ্বোধনীতেও ওর থাকার কথা ছিল কিন্তু খেলা থাকায় তোকে চলে যেতে হয়েছিল হায়দ্রাবাদে। 

সুবিনয় - বলল -বাবা তাহলে তো বিরাট জনপ্রিয়।

অমর  - সে কথা আর বলতে।

সুবিনয় যখন তার বন্ধুদের সঙ্গে অর্পণ কে নিয়ে আলোচনা করছিল ঠিক সেই সময় জয়ী অষ্টমীর দিন পরা হালকা সবুজ রঙের জামদানি শাড়িটা পড়ে এগিয়ে গেল অর্পনের দিকে। সুবিনয় তাকিয়ে ছিল সেই দিকে। যদিও সে দেখছিল জয়ী কে।

পাড়ার অনেকেই জানে অর্পণের সঙ্গে জয়ী তার বন্ধুত্বের কথা। পাড়া ঘরে যদিও সেটাকে বলে পিরিত করা। সে যাই হোক, পিরিত প্রেম হোক, লোকে যাই বলুক জয়িতা কিছুকেই তোয়াক্কা করে না। সে বরাবর অত্যন্ত স্বাধীনচেতা এবং আত্মসম্মানবোধে ভরপুর। নিজের যেটা ভালো বোঝে সেটা করতে পিছপা হয় না। দুজনের পরিচয় একটা খেলার মাঠে। জয়িতা অর্থনীতিকে এগিয়ে যেতেই পাড়ার ছেলে মেয়েরা সরে এল  মন্ডপের দিকে। তারপর জয়িতা অর্পণ কে নিয়ে এলো মণ্ডপে ঠাকুর দেখানোর জন্য। সবার সামনেই বসালো একটা চেয়ারে। তারপর যারা ভিড় করেছিল তাদের কেউ ডেকে নিল কাছে। তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে গল্প সময় কাটাল আর। চারটি নাগাদ অর্পনজয়িতাকে নিয়ে এলো তার গাড়ির কাছে। তারপর তাকে গাড়ির সামনের সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভ করে বেরিয়ে গেল।

সুবিনয় অনেকক্ষণ ধরে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিল। মোটেই ভালো লাগছিল না তার। ইতিমধ্যে ইটিভিতে কান পেতে শুনেছে অর্পণের সঙ্গে জয়িতার প্রেমের কথা।

সুবিনয় মনে মনে ভাবল এই গ্রামে কেন এই জেলাতে তার মতন চাকরি করা ছেলে আর আর একটাও নেই। সুতরাং সে চাইছে যদি তাকে বিয়ে করতে আর জয়িতা করবে না তা কি করে সম্ভব। সমস্ত অসম্ভবকে সে সম্ভব করেছে। মনে মনে ঠিক করল সে জয়ী তাকেই বিয়ে করবে। সন্ধি সাতটার সময় অর্পণের গাড়িতেই ফিরে এলো জয়িতা। অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল হাসিখুশি লাগছিল তাকে। প্রায় তিন মাস অর্পণের সঙ্গে তার দেখা হয়নি। এই সময়ে অর্পণ আইএসএল খেলার জন্য তার টিমের সঙ্গে গ্রামের বাইরে ছিল। আর এখন যেহেতু আইএসএল চলছে তাই তাকে অবশ্যই গ্রাম কেন শহরের বাইরেও থাকতে হবে। পুজোর ছুটি মিটে গেলে আর অর্পণের নাগাল পাওয়া যাবে না সেজন্য কিছুটা সময় তার সঙ্গে একান্তে ঘুরে এলো। আর তারপর তার মন যেন খুশিতে আরো ভরে উঠল।

অর্পণ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে পাড়ার একদল ছেলে মেয়েরা ঘিরে ধরল তাকে। সবাই আবদার করল বিজয়া দশমীর দিন অর্থাৎ আগামীকাল সিঁদুর খেলার সময় তাকে আসতে হবে। ঠাকুর বিসর্জনের সময় তাকে থাকতে হবে। পুজো কমিটির সম্পাদক নৃপেন রায় ছুটে এলো অর্পণকে দেখে। তিনিও অনুরোধ করলেন অর্পণকে আগামীকাল আসার জন্য। নিপেন কাকুর কথা ফেলতে পারল না অর্পণ। সে কথা দিল আগামীকাল অবশ্যই আসবে। 

সমস্ত ঘটনা মন্ডপে বসে প্রত্যক্ষ করছিল সুবিনয়। সুবিনয় এখানে এসে অনেক টাকা ওড়ালো। বন্ধুদেরকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া মজা করা। সবই হলো কিন্তু মনটা কিছুতেই স্থির হলো না। পাড়ার ছেলেমেয়েরা কেউ তার কাছে ছুটে আসলো না। অথচ ছুটে গেল অর্পণ এর কাছে। পাড়ার ছেলে মেয়েরা কেউ তার কাছাকাছি এসে কোন কিছু আবদার করল না। বিদেশে চাকরি করা অর্পণের মনে যে অহংকার জমে ছিল সেই অহংকার এক নিমেষে মাটিতে মিশে গেল মনে হল যেন। আসলে বিরাট চাকরি বিদেশে থাকা এসব কিছু জনমানুষে প্রভাব ফেলে না। জনমানুষের প্রভাব ফেলে সমাজে দেশে বা কর্মক্ষেত্রে তার প্রভাব প্রতিপত্তি অথবা খেলোয়াড় বা শিল্পীর নৈপুণ্যতায়।

রাত আটটা নাগাদ জয়ীর মুখোমুখি হয় সুবিনয়। সুবিনয় সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেয় জয়ী কে। 

জয়ী একটুও হতবাক হয় না। যেই উত্তর দেয় -তুমি তো দেখেছো বিকেলে আমি অর্পণের সঙ্গে ঘুরতে গেছি নিশ্চয়ই তোমার বন্ধুরা বলেছে সে অর্পণের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা।

সুবিনয় বলল - সে যে যাই বলুক। আমি শুধু আমার কথা তোমাকে জানালাম। তুমি চাইলে আমি তোমাকে এ মাসেই বিয়ে করে আমেরিকায় নিয়ে যেতে চাই। 

জয়ী বলিষ্ঠভাবে উত্তর দেয় -টাকা পয়সা অথবা বিদেশের লোভ আমার নেই আমি গায়ের মেয়ে গায়ের বধূ হতে আপত্তি নেই। আমি জানি তোমার অনেক টাকা বিদেশে বড় চাকরি করো তোমার কপালে অনেক সুন্দরী মেয়ে জুটে যাবে। আমার মতন এই আওয়াজ পাড়াগাই পড়ে থাকা মেয়েরা তোমার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। আমেরিকার জীবনযাত্রা অনেক ফাস্ট। সেখানে তুমি মানিয়ে নিয়েছো সেখানকার জীবনযাত্রায় তুমি অভ্যস্ত। আমার ও সব ভালো লাগেনা আমার ভালো লাগে গ্রাম, সবুজ মাঠ, সবুজ গাছপালা। গ্রামের রাস্তা আর এই যে পুজো পণ্ডপ নিয়ে আছি। পুজো পার্বণ। 

সুবিনয় বলল - এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না। তুমি কবে বিয়ে করতে চাও বলো।

জয়ী উত্তর দেয় -আমি ভেবেছিলাম তুমি বুদ্ধিমান চালাক। আমি তো উত্তর দিয়েই দিয়েছি তুমি মনে হয় বুঝতে পারোনি তোমার অহংকার তোমাকে বুঝতে দেয়নি।। সুবিনয় দা তোমার টাকা থাকতে পারে গ্রামেই তোমাদের বড় বাড়ি থাকতে পারে হতে পারে আমেরিকায় তোমার ফ্ল্যাট আছে কিন্তু আমি অর্পণকে ভালোবাসি। ভালোবাসি মানে সত্যিকারের ভালবাসি। যতদূর জানি ওর ফোনে আমাকে খুবই ভালোবাসে। 

সুবিনয় আর কোন কথা বলে না সোজা বাড়ি ফিরে যায়। বাড়ি ফিরে তার বাবা মাকে জানায় যে সে জয়িতাকে বিয়ে করতে চায় আর এই মাসেই। তার বাবা মা যেন জয়িতার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে। সুবিনয়ের মা কাকে বলে পুজো মিটে গেলে বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে। 

সুবিনয় আর চন্ডীমন্ডলের দিকে যাইনি।। বিসর্জনের বাজনা বেজেছে। পাড়ার লোক ভেঙ্গে এসেছে চণ্ডীপাণ্ডপে। হয়তো অর্পণও এসেছে। বাড়িতে বসে আছে সুবিনয়। ওর বোন সুনিতা কয়েকবার ডেকেছিল ওকে পূজা মন্ডপে যাওয়ার জন্য। সুবিনয় শরীর খারাপ লাগছে বলে শুয়ে পড়লো।

দুদিন পর সুবিনয়ের বাবা-মা এক সন্ধ্যেবেলায় পৌঁছালো জয়ীদের বাড়িতে। জয়িতার বাবা-মাকে জানালো বিয়ের প্রস্তাব। জয়ীর বাবা-মা হতভম্ব হয়ে গেল কি করবে কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। পাশের ঘর থেকে জয়িতা শুনছিল সব।

জয়ীতার বাবা বলল -এ তো উত্তম প্রস্তাব কিন্তু আমাকে একটু ভেবে দেখার সময় দিন।

সুবিনয়ের বাবা-মা চলে যেতেই পাশের ঘর থেকে জয়িতা বেরিয়ে এলো। জয়িতা তার মাকে বলল -তুই তো জানো আমি…

যেই তার মা বলল -আমি জানি আমি কি কথা দিয়েছি? 

যেই তার বাবা বললো - একবার ভালো করে ভেবে দেখ, বড় চাকরি বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা। কত জায়গা ঘুরে দেখতে পারবি ভাবতো। 

জয়ী উত্তর দেয় -দেখো বাবা বিদেশে যাওয়ার লোক আমার নেই। আর তুমি তো জানো শহর আমার ভালো লাগেনা। এইসব বিদেশে থাকা ছেলেরা না বিদেশি মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে তারপর ভুলে যায় দেশি মেয়েদের। আমার ওকে নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। তোমরা তো জানো আমি অর্পণকে ভালোবাসি। আচ্ছা বাবা সুবিনয় থেকে অর্পণ কোন অংশ খারাপ বলতো। মেনে নিচ্ছি সুবিনয়ের অনেক বড় চাকরি। অর্থনীতি দেশ জোড়া খ্যাতি তা কি তোমরা জানো না। তোমরা তো জানো এখন ফুটবল খেলে কত টাকা আয় করা যায়। আর তাছাড়া টাকা আয় করুক আর না করুক। চাকরি করুক আর না করুক আমি অর্পণকে ভালোবাসি মানে ভালোবাসি। যখন ও আইএসএলে খেলেনি তখনও আমি ওকে ভালোবেসে ছিলাম আজও বাসি। 

কথাটা শেষ করে হাতের ফোন থেকে সরাসরি অর্পণ কে ফোন করে। 

জয়িতা - হ্যালো একবার আসতে পারবে বাড়িতে, খুব দরকার।

অপর প্রান্ত থেকে অর্পণ বলে - কেন কোন বিপদ হলো নাকি। 

জয়ী - একবার এসো না প্লিজ। 

অর্পণ  -৫ মিনিটের মধ্যে আছি। 

ফোনটা কেটে দিয়ে যদি তার বাবা মাকে বলে অর্পণ আসছে চাইলে তোমরা কথা বলে দিতে পারো। 

জয়ী বাবা-মা জানি ছোটবেলা থেকে এসে একরকম এবং অত্যন্ত স্বাধীনচেতা। তাই তারা নিঃশব্দে বিষয়টা মেনে নিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে অর্পণ এসে পৌঁছিল তাদের বাড়ি তে।

জয়ী পুরো বিষয়টা খুলে বলল তাকে। সব কথা শুনে অর্পণ বলল - চলো জয়ী কালকেই বিয়ে করে নেব। জয়ীর বাবা বলল-  কাল কেই?

অর্পণ - কাকু আমার কালকে ছাড়া আর হবেনা। আর তিন চার দিন পর আমাকে চলে যেতে হবে। সামনে খেলা আছে আমি আর ছুটি পাব না। তাছাড়া এসব বিষয় ফেলে ঠিক হবে না। আমি জয়িতাকে ছাড়া বাঁচবো না। ও আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। দয়া করে আপনারা না করবেন। 

জয়ীর মা বললো -তোমার বাড়িতেও তো কথাটা বলতে হবে বাবা? তারা বিষয়টা কেমন ভাবে নেবেন।

অর্পণ উত্তর দেয় - বাবা মাকে বলে এসেছি তোমার বউ মা আনতে যাচ্ছি। আমি ওদের অনেক আগেই বলেছি জয়ীর কথা। ওরা সবটাই জানে ওরা আপনাদের বাড়িতে আসতে চাইছিল অনেক আগেই কিন্তু আমি আসতে দেই নি। আপনাদের বাড়িতে আসার সময় তুমিও মণ্ডলের পূজা করে যে ব্রাহ্মণ কি জানি নাম। 

জয়ী চটপট উত্তর দেয় - নারায়ণ কাকা। 

অর্পণ - হ্যাঁ হ্যাঁ ওনাকে আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম বিয়ের দিন ভালো আছে কিনা। উনি বললেন কালকের দিনটা ভালো। এর মধ্যে তেমন কোনো ভালো দিন বা বিয়ের দিন কিছু নেই। 

আমি গাড়ির ব্যবস্থা করছি বাড়ি গিয়ে। আপনারা প্রস্তুত হয়ে থাকবেন। আমি সকাল দশটার মধ্যে চলে আসবো বাবা মাকে নিয়ে। এখান থেকে আমরা চলে যাব কোন মন্দিরে।

জয়ী উত্তর দেয় - চিন্তা করো না আমরা গুছিয়ে থাকব। কিন্তু ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল তাই না। 

অর্পণ -তুমি কি চাও আমি তোমাকে হারাই। তুমি চাইলেও আমি তো চাইছি না। 

জয়ী বলে -তোমার কি মনে হয় আমি চাইছি তোমাকে হারাবো। তাহলে ডাকলাম কেন। 

জয়ীর মা বলে কিরে তোরা কি ঝগড়া শুরু করবি নাকি। 

অর্পণ -না না আমি কেন ঝগড়া  করব? আপনার মেয়েই তো ঝগড়া করছে। 

জয়ী - আমি?

জয়ির বাবা মা ধীরে ধীরে ওখান থেকে চলে যায়। অর্পণ দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে -আসছি তাহলে কাল। নিয়ে যাব আমার রাজরানী কে। 

জয়ী উত্তর দেয় -সুবিনয় দা খুব ভেঙে পড়বে মনে হয়। 

অর্পণ - ভেঙে পড়ার আগে পূজা মন্ডপ থেকে একটা বাস খুলে নিয়ে যেও। পিঠে বেধে দিও যাতে ভেঙে পড়তে না পারে। 

জয়ী হাসতে হাসতে বলে - ধ্যাৎ তুমি না?

অর্পণ - বাই।

জয়ী - বাই।

সেই দিন সন্ধ্যেবেলার টিভি চ্যানেলের খবরে উঠে এলো ফুটবলার অর্পণের হঠাৎ বিয়ে করার খবর। জয়ীর বাবা মা বাড়িতে বসে খবর দেখছিল। ততক্ষণে জয়ী পৌঁছে গেছে শ্বশুর বাড়ি। খবর দেখতে দেখতে আনন্দে চোখে জল এলো তাদের। পাড়ার লোকজন হৈ হৈ করে ছুটে এলো তাদের বাড়িতে মিষ্টি খাওয়ার জন্য। সেই রাতে যদি বাবাকে ছুটতে হলো মিষ্টির দোকানে। 

পরের দিন খবরের কাগজের হেডলাইনে অর্পনের বিয়ের কথা। “দীর্ঘদিনের বান্ধবী জয়িতাকে বিয়ে করল ফুটবলার অর্পণ”। হেডলাইনটা পড়তে পড়তে সুমিতা খবের কাগজটা নিয়ে ঢোকে সুবিনয়ের ঘরে। দেখ দাদা দেখ আমাদের পাড়ার জয়িতাদি বিয়ে করে ফেলল অর্পণ দা। আমাদের পাড়ার নাম আজ খবরের কাগজে উঠে গেল।

সুবিনয় খবরের কাগজটা হাতে নিল। হেডলাইনের সঙ্গে বেরিয়েছে বড় একটা ছবিও। ছবিতে সুবিনয়ের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে জয়িতা। কাগজটা দেখে ছুঁড়ে ফেলে দিল সে। তারপর সুনিতা কে বলল তুই যা আমাকে একটু একা থাকতে দে। 

ঠিক সেই সময় সুবিনয়ের হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ এলো। “কিছু মনে করো না সুবিনয় দা। আমি গাঁয়ের বধূ হতে   চেয়েছিলাম। তাই গাঁয়ের বধূ হলাম।













একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ