ক্লাব বদল
অতনু সরকার
মাঠের দিকে তাকিয়ে বসে হয়তো অতীতের অনেক স্মৃতি মনের মধ্যে দোলা দিয়ে যাচ্ছে অনিশের। আজ নিজেকে বড় নিঃস্ব লাগছে। বড় একা হয়ে পড়েছে অনিশ। আগামীকাল লিগের দলবদল শুরু অথচ ওকে নিয়ে সেই টানাটানি নেই। সুপারে দশটা দল অংশ নেয়, তার নিচে আছে প্রথম ডিভিশন তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
খোলা জানালা দিয়ে বাড়ির পিছনের মাঠটা দেখা যায়। আজ রবিবার ছুটির দিন। একটু পরেই ছেলেরা চলে আসবে মাঠে। তারপর অনুশীলন করবে, নিজেদের মধ্যে ভাগ করে খেলবে। অনিশ মাঝে মাঝে যায় ওদের সঙ্গে খেলে। কিন্তু আজ ওর কিছুই ভাল লাগছে না। টানা ১৬ বছর কলকাতা আর জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ লিগে ওর খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ১৬ টা বছ্র কি কম সময়? দু বছর হল অনিশ অফিস লিগ আর হুগলি জেলা সুপার ডিভিশনে খেলে। হুগলিতে তাকে চেনেনা এমন কেউ নেই। জেলা পর্যায়ে প্রথম দিকে ঘন ঘন দলবদল করলেও শেষ কয়েক বছর করেনি।সূর্য সংঘ ওর কাছে ঘরের মতো হয়ে গেছে। প্রতি বছর আগে ক্লাবের কর্মকর্তারা ওর সঙ্গে আলোচনায় বসে। আরো দু একজন সিনিয়র ফুটবলার থাকে আলোচনায়। কিন্তু ওর গুরুত্ব বেশি।
বিকেল হল। ছেলেরা অনেকে মাঠে অনুশীলন করছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। অনিশ ভাবল ক্লাব থেকে ঘনাদা অথবা ঘনাদার কেউ একজন হবে। উঠে গিয়ে যখন ফোনটা হাতে দেখল ক্লাবের কেউ নয়, ফোন করেছে সুলগ্না।ফোনটা ধরল অনিশ।
সুলগ্না - হ্যালো কি করছো?
অনিশ - বসে আছি।
সুলগ্না - মাঠে আসবে না, একটু দরকার দরকার আছে।
অনিশ- পারলে যাব।
সুলগ্না বিস্মিত হয়ে বললো - ওমা আমার মাসির মেয়ে তানিয়া এসেছে তোমার খেলা দেখবে বলে ……… হ্যালো ...হ্যাঁ ও তোমার খেলা দেখবে।।।
অনিশ - বেশ তো যাবো।
সুলগ্না - কখন ? একটু তাড়াতাড়ি এসো না প্লিজ।
হঠাৎ ফোনটা কেটে দেয় অনিশ। একটু পরে আবার বেজে উঠে ফোনটা। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রঞ্জন ফোন করেছে।
অনিশ - হ্যালো।
রঞ্জন - একটা দিন তুমি আমাদের প্র্যাকটিস করাও দাদা।
অনিশ - যাচ্ছি তোরা রেডি হয়ে নে।
রঞ্জন আবার বলে - আসছে তো?
অনিশ উত্তর দেয় - যাচ্ছি।
অনিশ আর বসে থাকতে পারল না। রবিবার অনেকেই আসে অনুশীলন করতে। ওই দিন ও খেলা শেখায়। তাড়াতাড়ি খেলার পোশাক পরে বেরিয়ে পরলো। মাঠে যেতেই ছেলেরা ঘিরে ধরল।
সকলে প্রায় এক সঙ্গে বললো - অনিশদা তোমায় শনি আর রবিবার দুদিন প্রাক্টিস করাতে হবে। তুমি অন্তত দুটো দিন আমাদের করাও। ওদের কথা শুনে খুশি হয় অনিশ। তারপর ওদের কথা দেয় আসবে। অনিশের চোখ দুটো মাঠের চারপাশে ঘুছিলো। সুলগ্নার আসার কথা ছিল। কিন্তু দেখতে পেল না। প্র্যাকটিসে নেমে পড়ল অনিশ। তারপর পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল ক্লাবের সামনে চেয়ারে বসে আছে বেশ কয়েকটা মেয়ে। সেখানে সুলগ্নাকে দেখলো। কয়েকবার চোখাচোখি হল। রবিবার অনিশ ছাড়াও আরো দু-চারজন সিনিয়র খেলোয়াড় আসে।বি এন আর খেলে অজয়, মহামেডানের সুরজিৎ প্রায় প্রতিদিনই আসে। অনিশ চাকরি করে, তাই তার পক্ষে প্রতিদিন আসা সম্ভব নয়। মোহনবাগানে খেলতে খেলতে চাকরিটা পেয়ে যায় অনিশ। তারপর দু বছর মোহনবাগান থেকে, শেষ দু বছর ইউনাইটেড স্পোর্টসে কাটিয়ে এখন আর অফিস লীগ ছাড়া খেলেনা। কিন্তু শরীর যথেষ্ঠ ফিট। কারণ অফিস টিমেও রীতিমত প্রাক্টিস হয়।
প্রাক্টিস শেষ হতে হতে সন্ধ্যা নেমে এল। প্রাক্টিস শেষে অজয় আর সুরজিৎ অনিশএর কাছে এলো।
সুরজিত বলল - “টালিগঞ্জ ভালো টিম করছে, ওরা অফার করেছে আবার মহামেডান ও ছাড়তে চাইছে না। কি করি বলতো”?
অনীশ - অজয়ের কি খবর?
অজয় - আমি বি এন আরে থাকবো, যদি চাকরিটা পাই।
অনিশ – টালিগঞ্জ এবার কেমন টিম করছে?
সুরজিৎ বলল- একটা বিদেশী নেবে শুনলাম। ভাল করে খোঁজ নিতে হবে।
অনিশ বলল - ভাল করে খোঁজখবর নে, কে কোথায় সই করছে, তারপর সিদ্ধান্ত নিবি। আমি কালকেই খোঁজ করছি একবার।
সুরজিৎ - এখানে কি সূর্য সংগে থাকবে? তুমি থাকলে আমিও থাকবো।
অনিশ - তোদের সাথে কথা বলেছে ওরা?
অজয় বলল - আজ সকালে ঘনাদা গেছিল বাড়িতে।
অনিশ- কি বলল?
অজয় উত্তর দিলো - ঘনা দা বলল “ভাল টিম করছি খেল।এবার চ্যাম্পিয়ন হতে চাই”।
সুরজিৎ- আমাকেও তাই বলল। তুমি তো থাকবে তাই না?
অনিশ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল - আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।
অজয় অবাক হয়ে বললো - কি বলছো তুমি?
সুরজিৎ । তুমি তো ঘরের ছেলে তাই হয়তো পরে বলবে।
অনিশ উত্তর দেয় - আমার আশায় থাকিস না আমি কিন্তু না থাকতে পারি সূর্যতে।
সুরজিৎ - তুমি না থাকলে আমি নেই।
অজয় -
আমরাও সই করবো না।
সুরজিৎ - অনিশদা সুলগ্নাদি অনেকক্ষণ বসে আছে। মনে হয় তোমায় ডাকছে ।
অনিশ - বসুক না ।
সুরজিৎ বলল- আমাদের দিকে রাগ করে তাকিয়ে আছে আমরা পালাই পরে কথা বলব।
ওরা চলে গেল। সুলগ্না আরেকটি মেয়েকে নিয়ে অনিস এর কাছে এল। অনিস তখন পায়ের বুট খুলছে।
সুলাগ্না- এই যে মশাই আর কতক্ষণ দাঁড়াবো বলতো?
অনিস- খেলা দেখতে এলে একটু দাঁড়াতে তো হয় বুঝলে।
সুলাগ্না অভিমান করে বললো - আমার বেলায় যত দেরি। আমি যদি খেলতে পারতাম। পাশের মেয়েটি বলল - তুইও শেখ না ফুটবল খেলা। দুজনে মিলে খেলবি। অনিশ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো - মন্দ হয় না দুজনে মাঠে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক গল্প সারা হয়ে যাবে, কি রাজি আছো?
সুলাগ্না - না বাবা। তারপর হাত পা ভেঙ্গে পড়ি তখন আর আমার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাবে না। গরিব ঘরের মেয়ে হাত পা ভাঙলে কে দেখবে।
পাশের মেয়েটি চটপট উত্তর দেয় - কেন অনিশদা।
সুলগ্না মাসির মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, তারপর হাঁটতে হাঁটতে তিনজন মাঠের চারদিকে ঘুরতে থাকে।
অনিশ আর সুলগ্নার ব্যাপারটা সবাই জানে।অনিশের বাড়িতে কেউ নেই। মা থাকে ভাইয়ের কাছে হায়দ্রাবাদে। বাড়িতে শুধু বাবা। সুলগ্নার বাবা মাছ বিক্রি করে বাজারে। অনেক ছোটবেলা থেকেই ওদের আলাপ পরিচয়। সুলগ্না সুন্দরী ।সুন্দরী বললে ভুল হবে, একটু বেশী রকমের সুন্দরী। পাড়া সকলের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব। অনেক ছেলে যখন অনিশকে কিছু বলতে পারে না তখন তারা সুলগ্নার কাছে যায়। সুলগ্না ওদের হয়ে অনেক কথা বলে দেয় অনিশকে।
রাত আটটা বাজে। চায়ের নিমন্ত্রণ আছে সুলগ্নাদের বাড়িতে। বাড়ি থেকে বের হতে যাবে এমন সময় সুরঞ্জন এসে হাজির। ছোটবেলার বন্ধু এখনো একসঙ্গে খেলে সূর্যতে ওরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার পর উদয়নে সই করে। অনিশ অকে দেখে দেখে হাসতে হাসতে বলল - অনেক দিন পর পথ ভুল করে এলি নাকি?
সুরঞ্জন - না রে একটা কথা বলতে এলাম।
অনিস - চল হাঁটতে শুনবো শুনবো।
সুরঞ্জন - একটু দাঁড়া আমি কথাটা বলেই চলে যাব।
অনিস বলল - বল।
সুরঞ্জন বলল - এই মাত্র শুনে এলাম সূর্য তোকে সই করাবে না ।সব নতুন ছেলেদের নিয়ে দল গঠন করবে।
অনিস একটু হেসে বললো - এত ভাল কথা আমরা আর কতদিন বল।
কথাটা বলল বটে।কিন্তু ওর মনটা যেন তোলপাড় করে উঠলো।
সুরঞ্জন - কি ভাবছিস?
অনিশ - কিছু না।
সুরঞ্জন - আমাদের ক্লাবে আয়।
অনিস - উদয়ন সংঘে?
সুরঞ্জন - হ্যাঁ ভাল টিম হচ্ছে। তুই মাঝ মাঠে থাকলে আমরা নিশ্চিন্ত।
অনিশ - কটা দিন যাক, তোকে জানাবো।
সুরঞ্জন চলে যায়। অনিস হাঁটতে থাকে ।
একটু আগে সুলগ্নার কাছ থেকে ফিরেছে। অন্য রবিবার গুলোতে কিছুটা নিরিবিলিতে সুলগ্নার এর সঙ্গে গল্প করতে পারে। আজ আর হলো না।তবে ভালোই কাটলো। আড্ডাটা জমিয়ে রেখেছিল তানিয়া। বাড়ি ফিরতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল এখনো চাইলে বড় ক্লাবে খেলতে পারে। শরীর এখনো দুরন্ত ফিট। তাহলে সূর্য সংঘ হঠাৎ চায় না কেন? ভাবল হয়তো পরে বলবে।
বেশ কয়েকটা দিন হয়ে গেল একদিন রাতে সুরজিৎ, অজয় আর তরুণ এসে হাজির।অনিশ তখন সবে খেয়ে উঠেছে।
সুরজিৎ ডাকলো - অনিশদা বাড়ি আছো?
অনিস দরজা খুলে ওদের দেখে অবাক হল। বলল - কিরে তোরা?
অজয় - দরকার আছে।
অনিশ ওদের ঘরে ডেকে বসায়। তারপর বলল - বল কি হয়েছে?
সুরজিৎ বলল - দাদা ঘনাদা আর মনাদা আমাদের কাছে গিয়েছিল ওরা সূর্য তে সই করার কথা বলেছে।
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম তুমি আছ কি না ওরা বললো না তোমাকে সই করাবে না। কৌশলে তোমাকে সহকারী কোচ করে দেবে।
সুরজিৎ - তুমি যদি সূর্য তে না থাকো, তাহলে আমরা উদয়নের সই করবো। ওরা আরও বেশি টাকা দেবে।
অনিশ - তরুণের কি মত?
তরুন - আমার আমারও ওই একই কথা।
অনিশ - সূর্য সংঘ কাদেরকে সই করিয়েছে জানিস?
তরুণ - বিকাশ পাল, ত্রিবেনীর মন্টু , চুঁচুড়ার অমিত আছে শুনলাম।
অনিস ততক্ষনে রঞ্জন কে ফোনে পেয়ে গেছে - হ্যালো সুরঞ্জন ,হ্যাঁ আমি অনিস। এক্ষুনি একবার আমার বাড়িতে আয় দরকার আছে। ফোনটা কেটে দিলো। অনিশ - আমার কাছে আগেই সে খবর ছিল, তোরা কি উদয়নে খেলবি?
সুরজিৎ - অনেক টাকা দেবে । তাছাড়া তুমি থাকবে না, আমরা কি করে থাকি বল। তুমি এখনো আমাদের থেকে অনেক বেশি ফিট। আসলে সূর্য সংঘে কিছু নতুন ক্লাব মেম্বার হয়েছে, যারা তোমার নাম ডাক সহ্য করতে পারে না। তোমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আছে অনেকে। বাইরে একটা গাড়ির হর্ন বাজলো।অনিশ দরজা খুলে সুরঞ্জন কে ঘরে নিয়ে এল। সুরঞ্জন, সুরজিৎ আর তরুণকে দেখে একটু অবাক হল।
সুরঞ্জন একটা সোফায় বসল , তারপর বলল - কার্ড এনেছি।
অনিশ বলল - কি করে জানলি আমি কি জন্য ডেকেছি।
সুরঞ্জন - মনে রাখিস তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
অনিশ - এরাও খেলবে সঙ্গে আমিও।
সুরঞ্জন কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল - বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হচ্ছে তোকে মোহনবাগানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছি।
কথাটা বলেই সুরঞ্জন ফোন করল উদয়নের সম্পাদক বাবুদা কে। মুহূর্তের মধ্যে বাবুদা এসে হাজির। সেই রাতে অনিশের ঘরে বসে সুরজিৎরা সই করলো উদয়নে। বেশ ভালো রকম টাকার অঙ্কে চুক্তি হলো। এর দুদিন পর ঘনাদা ছুটে এলো অনিশের বাড়িতে।
ঘনাদা বাড়িতে এসে বলল - কিরে তুই নাকি ……………। অনিশ - তোমরা তো কোনো যোগাযোগই করলে না।
ঘনাদা ব্যস্ত ভাবে বললো - এবার তুই আমাদের সহকারী কোচ।
অনিস হাসতে হাসতে বললো - এখনো খেলা ছাড়িনি।
ঘনাদা মুখ ভার করে বলল আমাদের হয়ে খেল।
অনিশ - আমার সই করা হয়ে গেছে।
ঘনাদা ফিরে গেল। এই মুহূর্তে হুগলি জেলা ফুটবল দল গুলোর কাছে একটাই আলোচনার বিষয় এক ঝাঁক তরুণদের নিয়ে গড়া উদয়নের টিম।যাদের মধ্যে অনেকেই কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবে খেলে।
দুর্গা পুজোর পরেই শুরু হয়ে গেল সুপার লিগ। কলকাতা লিগ প্রায় শেষ। মহামেডান দ্বিতীয় এবং টালিগঞ্জ তৃতীয় হয়ে লিগ শেষ করলো। আর দু একটা ম্যাচ হয়তো বাকি আছে।অনিশের অফিস লীগ শুরু হয়েছে। সুপার এর খেলা থাকলে অনিস অফিস লীগ খেলবে না, কারণ এ বছর উদয়ন কে লীগ কাপ দিতেই হবে। প্রমাণ করতে হবে এখনো শেষ হয়ে যায়নি। মাঝে মাঝে উদয়নের প্র্যাকটিস থাকলে যায় প্র্যাকটিস করতে। লীগের প্রথম ম্যাচ বড়বাজার ক্লাবের সঙ্গে। আগের দিন সুলাগ্না এসে বলল - একটা কথা বলবো তোমায়?
অনিস - বলো ।
সুলগ্না - কাল আমরা খেলা দেখতে যাব।
অনিস - কাল তোমরা খেলা দেখতে যাবে?
সুলগ্না - তোমার খেলা কোনদিন দেখি নি, তাছাড়া সুরজিৎ এর খেলা দেখার জন্য তানিয়া খুব করে ধরেছে, দেখনা আজ ই এখানে এসে হাজির।
অনিশ - সুরজিৎ এর খেলা কেন ?
সুলাগ্না বলল - তোমাকে তো বলাই হয়নি, না মানে সুরজিৎ বলতে বারণ করেছিল। তানিয়া আরা সুরজিৎ এর মধ্যে ইয়ে ……………...।।
মাঠে নামার আগে সুজিতের কানে কানে অনিশ বলল - তানিয়ার খেলা দেখতে এসেছে, আমাদের পিছনে তাকা।
সুজিত একবার পেছনে তাকাল দেখল তানিয়াকে। সেদিন ৪-০ গোলে জয় পেল উদয়ন। অসাধারণ খেলল ৩২ বছর এর যুবক অনিশ, আর স্টপারে সুরজিত তো চীনের প্রাচীরের মত। ওকে টপকাতে হিমশিম খেয়ে গেল ইউনাইটেড থেকে আসা সুরাজ। পরপর ৫ ম্যাচ জিতে পয়েন্ট যখন ১৫, তখন সূর্য সংঘের পাঁচ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট। অনিশ প্রত্যেকটা খেলায সুলগ্নাকে, তানিয়াকে নিয়ে যেতে বলত।সুলগ্নার দলে আরো একজন বেড়ে গেল, অজয়ের বান্ধবী মধুপর্ণা। সুরঞ্জন বলল - মাঠে তিন জন যেতে নেই।
ও বাবা কয়েকদিন পর একদিন মাঠে গিয়ে শুনি সুরঞ্জনের বউ রিয়া এসেছে। যাইহোক চারজনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেল। মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে ওরা খেলা দেখত। একদিন ক্লাব সম্পাদক ব্যাপারটা দেখে নিজে গিয়ে ওদেরকে ডেকে নিয়ে বসালো, নিজের পাসে। তারপর থেকেই ওরা মাঠে আসে। ছেলেদের উৎসাহ দ্বিগু বেড়ে গেল। একটা ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ান হল উদয়ন। শেষ ম্যাচ সূর্য সংঘর সঙ্গে। লীগ টেবিলে সূর্য সংঘ রয়েছে ৭তম স্থানে। আজকে জিততে পারলে একধাপ উপরে উঠতে পারে। খেলা শুরু হলো । অনিস মিড ফিল্ডার। মাঝমাঠ থেকে দারুন বল বাড়ায়। আর বিপক্ষের আক্রমনকে ভোঁতা করে দেয়। ওর নিখুঁত বল গিয়ে পড়ে অজয় আর তরু নের পায়ে। স্টপারে সুরজিৎ মানে নিশ্চিন্ত। গোল শূন্য অবস্থায় প্রথম পর্ব শেষ হল। বিরতির পর খেলা শুরু হল। তানিয়া হঠাৎ চিৎকার করে বলল - অনিশদা আজ তোমার একটা গোল দেখতে চাই।
অনিশের পায়ের পেশী সতেজ হয়ে উঠলো। তাই তো এতগুলো খেলা হয়ে গেল আর কোন গোল নেই ওর। খেলা শুরুতেই জনকে কাটিয়ে বল বাড়াল অজয়কে। অজয় দিল তরুণকে, ততক্ষনে অনেকটা উঠে গেছে অনিশ। তরুনের লম্বা বল বক্সের মাথায় হেড দিতে গিয়ে পারলো না অজয়। বল এসে পড়লো অনিশের বুকে। বল টা বুকের উপর একটু তুলে নিয়ে নিজের গোলের দিকে দাঁড়িয়ে চকিতে একটা ব্যাক ভলি করল অনিস। গোল বলে চিৎকার করে উঠল সারা মাঠ।অনিশ দেখল সুলগ্না আর তানিয়া উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। তার ৫ মিনিট পর দ্বিতীয় গোলটা করল অনিশ। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে কয়েক জন কে কাটিয়ে গোলার মতো শর্ট করল। বল জড়িয়ে গেল জালে। স্তম্ভিত হয়ে গেল গোটা মাঠ। খেলা শেষে অনিশ মাঠে শুয়ে পড়েছে। সুরজিত কাছে গেল, দেখল অনিশ কাঁদছে। ও বুঝতে পারল না কি হয়েছে। সুরঞ্জন কে ডাকল। সুরঞ্জন বলল ওকে কাঁদতে দে। ও যে শেষ হয়ে যায়নি, প্রমাণ করলো। ও এখনও মাঝে মাঠে রাজা। ওকে কাঁদতে দে। সুলগ্না শুনল সব। কখন যেন এক ফোটা জল ওর চোখ দিয়েও বেরিয়ে এলো ভাগ্যিস কেউ দেখতে পায়নি।।
20সেপ্টেম্বর 2014 রাত 12 টা
0 মন্তব্যসমূহ