ছবির ফ্রেমে লেখা ভালোবাসার ডায়েরি। বাংলা গল্প।

 ছবির ফ্রেমে লেখা ভালোবাসার ডায়েরি

বাংলা গল্প। golpobitan.in 

অতনু সরকার

ছবির ফ্রেমে লেখা ভালোবাসার ডায়েরি



রোহান, একজন নবীন এবং প্রতিভাবান ফোটোগ্রাফার। তার দিন কাটে জীবনের নানা রঙ ক্যামেরার ফ্রেমে ধরতে ধরতে। তার বিশ্বাস, প্রতিটি ফ্রেম একটি গল্প বলে, আর সে সেই গল্পগুলোকে আরও জীবন্ত করে তোলে তার ছবির মধ্যে। 

এক বিকেলে, রোহান প্রকৃতির ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়ল। নদীর ধারে সে হঠাৎই খেয়াল করল একটি সুন্দরী মেয়েকে। মেয়েটি ডায়েরি লিখছে, আর তার চারপাশের পড়ন্ত বেলার আলো যেন এক আশ্চর্য আবহ তৈরি করেছে। রোহান তার অভ্যাসবশত মুগ্ধ হয়ে একটি ছবি তুলে নেয়।

কিন্তু শব্দ শুনে মেয়েটি পেছনে তাকায়। রোহানের হাতের ক্যামেরার দিকে চোখ পড়তেই সে বুঝে যায় ঘটনাটা। নেহা একটু রাগি ভাবেই বলে- আমার ছবি তুললেন কেন?

রোহান লাজুকভাবে বলল - দৃশ্যটা এত সুন্দর ছিল, আটকাতে পারিনি। আপনি যদি চান, আমি মুছে দিচ্ছি।

নেহা একটু মুচকি হেসে বলল,- ছবি তোলার আগে অনুমতি নেওয়া উচিত। তবে এখন যেহেতু তুলেছেন, ছবিটা আমায় দেখাতে হবে।

রোহান দেখায় ছবিটি। মেয়েটি বলে -  বাঃ কি সুন্দর, তাই না। ধন্যবাদ আপনাকে। এই ছবিটি আমাকে দিন।

রোহন - অবশ্যই দেব। 

মেয়েটি বলে-  আচ্ছা আপনার নাম টা তো জানা হল না।  

রোহান বলে  -আমার নাম রোহান রায়। আপনার ?

মেয়েটি উত্তর দেয়- আমার নাম নেহা।

সেই মুহূর্ত থেকেই তাদের আলাপ শুরু। রোহান তার তোলা ছবিগুলোতে জীবনের ছোট ছোট সৌন্দর্য তুলে ধরার কথা বলল, আর নেহা তার ডায়েরির গল্পগুলো শোনালো।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। রোহান তার ক্যামেরার  লেন্স দিয়ে নেহার ডায়েরির গল্পগুলোকে চিত্রায়িত করতে শুরু করল। নেহার লেখা আর রোহানের তোলা ছবি একসঙ্গে মিলে এমন একটি সংকলন তৈরি করল, যা ভালোবাসা, অনুভূতি আর স্বপ্নের এক সুন্দর মিশ্রণ। 

একদিন, নদীর ধারে বকুল গাছের নিচে বসে রোহান নেহাকে বলল- তোমার ডায়েরি আর আমার ছবিগুলো নিয়ে একটা বই বানালে কেমন হয়? 

নেহা বলে- বেশ ভালো বলেছ তো। এটা তো আমি ভেবে দেখিনি। তাহলে আজ থেকেই কাজে নেমে পড়া যাক। কি বল?

রোহান বলল- একদম। তুমি লিখবে আর আমি সেই লেখা কে ছবির মধ্যে ধরার চেস্টা করব।   কিন্তু বইয়ের শেষ অধ্যায়টা তোমার হাতে।

নেহা মৃদু হেসে বলল- শেষটা আমাদের একসঙ্গে লেখা উচিত। কারণ আমাদের গল্প তো এখানেই শেষ নয়! হয়তো আবার তো নতুন করে লিখতে হতে পারে। আর একটা নতুন গল্প তাই  না। সেখানে প্রেমের গল্প থাকবে। থাকবে জীবনের গল্প। 

রোহান - সকালের সূর্য যেমন দিনের সূচনা করে তেমন এই তোমার গল্প আর আমার ছবি আমাদের নতুন জীবনের দিক গুলি উন্মুক্ত করবে। 

নেহা - আচ্ছা সে টা ছাপা হবে। সেখানে কি আমার নাম থাকবে?

রোহান হেসে বলল-  আরে তোমার আমার দুজনের নামই থাকবে। একেবারে ছাপা অক্ষরে।

নেহা খুব খুশি হয়। 

এই ভাবে দিন কাটে। আর তাদের গল্প এগিয়ে চলে সময়ের স্রোতে। তার পর একদিন তাদের স্বপ্নের সেই বই তারা বাস্তবায়িত করে ফেলে। নেহা আর রোহান একসঙ্গে একটি বই তৈরি প্রকাশ করে। যেখানে নেহার ডায়েরির লেখা এবং রোহানের ক্যামেরায় ধরা মুহূর্তগুলোর সংমিশ্রণে সৃষ্টি হল এক অনবদ্য গল্প আর কোলাজ। বইটি তরুন হৃদয়ের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।  এই বইটির নাম দিয়েছিল "জীবনের গল্পগুচ্ছ", যা তাদের গল্পের মতোই সাধারণ কিন্তু হয়ে উঠেছিল রঙিন আর  অসাধারণ। 

ছবির ফ্রেমে লেখা ভালোবাসার ডায়েরি

  

তাদের বই দ্রুত তরুন হৃদয়ে জনপ্রিয় হতে শুরু করল। অনেক পাঠক বইটি পড়ে তাদের মনের অনুভূতি এবং জীবনযাত্রার প্রতি নতুনভাবে ভাবতে শিখল। খুলে গেল এক নতুন দিগন্ত কিন্তু এই সাফল্য রোহান এবং নেহার জীবনে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এল।

একটি বড় পাবলিশিং কোম্পানি তাদের বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের জন্য প্রস্তাব দেয়, যেখানে তাদের লিখন এবং ছবিগুলোর আরো অনেক পরিবর্তন চাই। নেহা এই প্রস্তাবে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তার লেখা তার নিজস্ব অনুভূতির প্রতিফলন, আর সে চায়নি বাণিজ্যিকতার কারণে তার লেখার সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হোক।

রোহানও নিজের ছবিগুলোর সম্পর্কে একইভাবে অনুভব করেছিল। কিন্তু সে নেহাকে বলল- নেহা এই বড় সুযোগ তাদের স্বপ্নকে আরও বড় করতে পারে। কেন তুমি এমন করছ?

নেহা- এই প্রস্তাব আমার শিল্প স্বত্তাকে আঘাত করছে। এখানে আমাকে পাল্টে ফেলতে হবে আমার আগের মননশীল ভাবনা যা আমি সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে লিখেছিলাম। এটা আমি পরিবর্তন করতে পারব না।  

এই দ্বন্দ্ব তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি ছোট ফাটল সৃষ্টি করল। কিন্তু তারা একসঙ্গে বসে আলোচনা করল এবং সিদ্ধান্ত নিল, তাদের শিল্পকর্মের খাঁটি ভাব বজায় রাখাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। তারা সেই বড় কোম্পানিকে প্রত্যাখ্যান করল এবং তাদের নিজের পথে এগিয়ে গেল।

সময়ের সাথে সাথে তারা আরও অনেক ছোট গল্প এবং ছবি সংকলন তৈরি করল এবং তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম খুলল যেখানে পাঠকরা সরাসরি তাদের কাছ থেকে বই কিনতে পারত।

এই সিদ্ধান্ত তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করল। নেহা এবং রোহান বুঝতে পারল, তাদের ভালোবাসা শুধু তাদের সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের শিল্প এবং দর্শনের মধ্যেও সমান ভাবে ছড়িয়ে গেছে। যা ভালোবাসার সীমানা অতিক্রম করে এক অন্য দিগন্তে নিয়ে যায়। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ