অধ্যায় ৩: চিঠির খোঁজে
দেবগ্রামের মনোরম এক সকাল। রাধা সেদিন খুব মনমরা হয়ে বসে ছিল নদীর পাড়ে। হঠাৎ স্কুল থেকে ছুটে এল ছোটভাই রতন—হাতে একটা হলুদ খাম।
রতন এক নিঃশ্বাসে বলল - দিদি! দেখ, আজ আমাদের স্কুলে এক সাংবাদিক এসেছিল কলকাতা থেকে। উনি এই চিঠিটা দিতে বলেছে তোমায়!
রাধা হতবাক হয়ে ভাবল - আমার জন্য?
চিঠির খামে লেখা ছিল –
“রাধার হাতে পৌঁছাতে অনুরোধ করা হল।”
হস্তাক্ষরটা চেনা… সেই অভিরূপেরই!
সে কাঁপা হাতে খাম খুলল। ভেতরে তিন পাতার একটি দীর্ঘ চিঠি।
রাধা,
আমি জানি, তুই ভাবছিস কেন আমি কোনো দিন ফিরলাম না, কেন একটাও চিঠির জবাব দিলাম না। অথচ আমি রোজ লিখতাম তোকে…
জানিস, কলকাতায় যখন ফুটপাথে ঘুমাতাম, তখনও লিখতাম তোকে। পরে জেনেছি—তোর পোস্ট অফিসেই হারিয়ে গিয়েছিল আমার শত শত চিঠি। হয়তো সে কথা তুই জানিস না। আজ হঠাৎই আমার এক প্রতিবেদন করতে গিয়ে গিয়েছিলাম দেবগ্রামের পোস্ট অফিসে।
সেখানে পড়ে ছিল সেই পুরনো চিঠিগুলোর স্তূপ।
সবগুলোতেই তোর নাম... আমার লেখা... আমার অপেক্ষা। রাধা, আমি আর অপেক্ষা করব না। এবার ফিরছি।
আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই— এই আমি, অভিরূপ, তোর অভি, ফিরে এসেছি, তোর জন্য।
চিঠির শেষে একটি লাইন:
“কাল বিকেল চারটায় নদীর পাড়ে থাকিস, ঠিক যেখানে আমি প্রথম ‘ভালোবাসি’ বলেছিলাম।”
পরের দিন
রাধা নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায়—লাল শাড়ি পরে, হাতে সেই পুরনো চুড়ি। যেটা অভি ওকে দিয়েছিলো। মনের মাঝে একটা উত্তেজনা। তার চোখে জল, কিন্তু ঠোঁটে এক অজানা হাসি। কিছুতেই সময় কাটতে চাইছে না। এক সময় বসে পড়ে নদীর পাড়ে। ঠিক চারটায় কাঁচা রাস্তার ধুলো উড়িয়ে এগিয়ে এল একটা বাইসাইকেল। সাইকেল থেমে যায় ঠিক তার সামনে। উত্তেজনায় ওর বুক দুরু দুরু করছে। সেই চেনা চোখদুটো তাকিয়ে আছে তার দিকে।
অভিরূপ!
রাধা কিছু বলে না, কেবল এগিয়ে গিয়ে চিঠিটার উপর হাত রাখে।
এইবার ভুলব না, — বলে অভিরূপ।
আমিও ছাড়ব না, — উত্তর দেয় রাধা।
0 মন্তব্যসমূহ