শেষ যাত্রা

 শেষ যাত্রা

অতনু সরকার





পূর্বের নব দিগন্তে রক্তিমাভ সূর্য গাছের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে। ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। পূর্ব দিগন্ত লালে লাল। দীর্ঘ নৌযাত্রা শেষ করে সবে তার ঘরে ফিরেছে অর্পণ। মাল্যপুরম শহর থেকে দীর্ঘ নদী পথ ধরে আসতে হয়েছে তাকে। শ্রীলংকার অন্যতম বড় নদী মহাবলী নদী। এই নদী পথ ধরে মাল্যপুরাম থেকে তাকে আসতে হয়েছে গুণেপুরম শহরে। অর্পণ বিগত দু'বছর ধরে রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এখানে প্রচুর বৌদ্ধদের বাস। বর্তমানে অনেক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষও বাস করেন এখানে। তবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের সময় থেকেই এখানে বৌদ্ধ ধর্মের বাড় বাড়ন্ত হয়েছিল। সম্রাট অশোকের সময়ে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার হয়। তারপর বহু ভারতীয় বৌদ্ধ পরিব্রাজক এবং শ্রমন  শ্রীলঙ্কায় এসে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেছেন। অর্পণ ব্যবসার কাজে বর্তমানে রয়েছেন শ্রীলঙ্কায়। দীর্ঘ নদীপথে আসার কারণ অবশ্যই একটা রয়েছে। এখানে নদীপথে ব্যবসা করা যায় কিনা সে বিষয়ে খতিয়ে দেখতে শ্রীলংকা সরকারের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছিল তার। তাই মহাবলী নদীকে কেন্দ্র করে জলপথে মনোরম ভ্রমণের ব্যবস্থা করে সেখানে নতুন একটা দিগন্ত খুলে দিতে চাইছে শ্রীলংকা সরকার। এই মহাবলী নদী কে কেন্দ্র করে শ্রীলঙ্কার জনজীবন অনেকাংশেই নির্ভর করে। গুনেপুরম শহরটি অত্যন্ত নামকরা প্রাচীন একটি শহর। এখানে প্রচুর বৌদ্ধ মঠ হয়েছে। দু বছরে তাকে কষ্ট করে সিংহলি ভাষা শিখতে হয়েছে। কারণ শ্রীলঙ্কায় ব্যবসা করতে গেলে সিংহলি ভাষা জানাটা দরকার।


ভারত থেকে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবসার কাজে নিযুক্ত রয়েছে সে। সম্প্রতি এই নদী পথের ব্যবসা কে কেন্দ্র করে শ্রীলংকার একটি কোম্পানির সঙ্গে তার কোম্পানির মৌ সাক্ষর হয়েছে। এই নদী পথ ধরে চলবে সুদৃশ্য কতগুলি লঞ্চ। ক্লান্ত অর্পণ নিজের ঘরে আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। আজা রান্না করা হবে নাকি  বাইরে থেকে কিছু আনিয়ে নেবে এই ভেবে একটু আরাম করে  শোবার চেষ্টা সে।


তারপর কখন যে চোখ বুজে আসে এবং ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতে পারেনি অর্পণ। যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকেল পাঁচটা। পেটের মধ্যে ছুঁচো ডন মারছে। কিন্তু এই মুহূর্তে খাবার তো কিছু নেই বাড়িতে। অভ্যাসবশত ফ্রিজটা খুলল। দেখল কয়েকটা ফল পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে দুটো ফল নিয়ে  খেয়ে নিল। তারপর ভাবল কিছু একটা রান্না করে নেবে না হয় অনলাইনে অর্ডার করবে। সেই সময় এলেন বৃদ্ধ জোসেফ। অর্পণের অফিসে  কাজ করেন। আর রুমের কাজ ও করেন। আঙ্কেলকে দেখে অর্পণের একটু ভরসা হল। 

অর্পণ বলল - আংকেল কিছু একটা খাবার তৈরি করে দিন না, খুব খিদে পেয়েছে, সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। 

জোসেফ বললেন - আমি আগে দুবার এসে ঘুরে গেছি। অনেকবার ডাকা ডাকি করেছি কিন্তু আপনি ঘুম থেকে ওঠেননি। 

অর্পণ উত্তর দিল, - যাকে যা হওয়ার হয়েছে আপনি আমাকে কিছু একটা খাওয়ান, না হলে খিদেতে আর চলতে পারছি না। 

জোসেফ চলে গেল খাবার তৈরি করতে। অর্পণ ওয়াশরুমে গেলে স্নান করতে। কাল থেকে একই জামা কাপড় পড়ে রয়েছে।  স্নান করাও হয়নি। শাওয়ারের নিচে বেশ ভালো করে গা টা ধুয়ে নিতে হবে। অনেকক্ষণ ধরে স্নান করে ফিরে আসতেই আংকেল খাবারের প্লেট নিয়ে এগিয়ে এলো। 

অর্পণ বলল, এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল আঙ্কেল? 

জোসেফ বললেন, আপনার খিদে পেয়েছে তাই যতটা পারলাম তাড়াতাড়ি করলাম। 

অর্পণ খাবারের প্লেট টা তাড়াতাড়ি নিয়ে খেয়ে ফেললো সব। 


রাত নটা বাজে। অল্প কিছু খেয়ে ল্যাপটপটা টেনে নিল হাতের কাছে। প্রজেক্ট টা ভালো করে দেখছিল। এমন সময় ফোনটা উঠলো বেজে। ফোনে ভেসে উঠেছে আনুথার নাম। কাজের চাপে আনুথা র সঙ্গে দুদিন কথা বলা হয়নি। আনুথা অর্পণের বান্ধবী। বছর দুয়েক আগে যখন কন্যাকুমারীতে ছিল সেই সময় তার সঙ্গে পরিচয়। আনুথা মুথু র ডাকনাম আমু। 

অর্পণ ফোনটা ধরলো। অপরপ্রান্তে অভিমানী গলায় আমু বলল -ভুলে গেলেন নাকি আমায়। কাল থেকে আপনার পাত্তা নেই। শুনুন আপনি ভোরে চলে আসুন কলম্ব। আমি রাতের প্লেনে যাচ্ছি। রাত তিনটের সময় নামবো। আপনি তো জানেন সময়। বাকি রাত টা লাউঞ্জে কাটিয়ে দেব। ভোরে দেখা হচ্ছে।

অর্পণ উত্তর দেয় - দুদিন এতটা ব্যস্ত ছিলাম। ফোন করবো করবো করেও করা হয়নি। তার মধ্যে আপনি প্লেনে টিকিট কেটে ফেললেন?

আমু - অনেক দিন দেখা হয়নি আপনার সাথে। তাই যাচ্ছি। একটা ঘর যেন পাই। আমার এখন দশ দিন ছুটি। 

অর্পণ - সত্যি আপনি আসছেন। কাকু জানেন? 

আমু - হা বাবাই ত বলল, যা ঘুরে আয়। অফিস টা দেখে আয় একবার। আপনি খুশি না মনে হয়।

অর্পণ -আরে কি বলছেন কি। আমি খুশি না হওয়ার তো কোন কারণই দেখছি না। আমু আমি খুব খুশি আপনি আসবেন শুনে। আমি তো ভাবতেই পারছি না আপনি আসবেন। 

আমু -আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো কলম্বোতে। 


কোনটা কেটে দিল। আসলে অর্পণ আমুকে কে অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ তার ব্যবহার। যেমন সুন্দর তার ব্যবহার তেমনি তার রূপ। যেকোনো তামিল অভিনেত্রীকে অনায়াসে হারিয়ে দিতে পারে আমুর সৌন্দর্য। অথচ খুব সহজ-সরল একটা জীবন তার। এমন একটা মেয়ের সংসার ভেঙে যাবে ভাবতে কষ্ট হয়। তবুও বিধাতার বিধান কেউ তো খণ্ডন করতে পারেনা। মনে মনে আমুর বন্ধুত্বকে অর্পণ স্যালুট করে। আমুর  জন্যই আজ অর্পণ এখানে। সুকমল কাকুর বিরাট ব্যবসা। তিন তিনটে স্কুলের চেয়ারম্যান তিনি। অর্থাৎ তিন তিনটি স্কুলের পঞ্চাশ শতাংশ শেয়ার তার একার। ওনার স্ত্রী আন্না মুথু পারিবারিক সূত্রে সমস্ত সম্পত্তি পেয়েছেন। যার মালিক এখন সুকমল বিশ্বাস এবং আন্না মুথু বিশ্বাস।  সেই সঙ্গে রয়েছে আমদানি রপ্তানির বিরাট ব্যবসা। এই মুহূর্তে স্কুলের দেখাশুনাগুলো করেন তার ছেলে আনন্দ মুথু বিশ্বাস। তিনটি স্কুল রয়েছে তার অধীনে। থাকবে নাই বা কেন সে এবং আমু এর উত্তরাধিকারী। একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল আমু। খুব শীঘ্রই সে ওই চাকরি ছেড়ে সরাসরি চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেবে। বাকি দুটি স্কুলের চেয়ারম্যান হবে তা আনন্দ। সেই সঙ্গে আমদানি রপ্তানির ব্যবসার ও সম্পূর্ণ দেখভাল করেন আনন্দ। অর্পণ  আম্মুর সুপারিশে এবং সুকোমল কাকুর ছাত্র হিসেবে তাদের কোম্পানি আন্না ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার। আনন্দ সম্পূর্ণভাবে অর্পনকে বিশ্বাস করে। আনন্দের সঙ্গে  রিলেশনটাও খুবই মধুর। কারণ অবশ্যই সুকমল কাকু। যদিও আনন্দের থেকে অর্পণ অনেকটাই বয়সে বড়। আনন্দ সবে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছে তাদের কোম্পানিতে। তাই সে দেখাশোনা করলেও সব দায়িত্ব অর্পণের উপরেই আছে। দু'বছর শ্রীলঙ্কায় আছে অর্পণ। বিভিন্ন কাজে তাকে থাকতে হয়। মাসে একবার করে তাকে ফিরতে হয় তামিলনাড়ুতে। শ্রীলঙ্কার গুনেপুরামে রয়েছে অফিস। আর অফিসের পিছনেই রয়েছে অর্পণের থাকার জায়গা। অর্পণের এই উত্থানের পিছনে সম্পূর্ণ কাজ করেছে আমুর হাত। সুকমল কাকুর সঙ্গে যতই  চেনাশোনা থাকুক না কেন আমু যদি তাকে না বলতো তাহলে কি হতো কি ঠিক নেই। তাই আমুর অবদান অর্পণ  ভুলতে পারবে না কোনো দিন। 


ফোনটা রেখে দিযে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল সে। আমু আসবে সুতরাং তাকে অবশ্যই রিসিভ করা তার কর্তব্য। বন্ধুর থেকেও বড় কথা সে এই কোম্পানির পঞ্চশ শতাংশ মালিক। সুকমল কাকুর পরিবর্তে এই সম্পত্তির মালিক হবে সে আর তার ভাই। তাই কর্মচারী হিসাবে তাকে আনতে যাওয়া অর্পনের কর্তব্য। 

রাত দুটোর সময় অর্পণ রওনা  হল কলম্ব। দু'ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে সে পৌঁছালো কলম্বো এয়ারপোর্টে। ঘড়ির কাঁটায় তখন চারটে। 


অর্পণ যখন আমু কে নিয়ে ফিরে এলো তখন সাড়ে ছটা বাজে। জোসেফ আঙ্কেল খুব সকাল সকাল কাজে আসেন। তিনি আমু দেখে খুবই খুশি হলেন।  আঙ্কেল খুব ভালো তামিল বলতে পারেন। আমু সঙ্গে তার গল্প ও জমে গেল। ছোটবেলায় এবং বেশ কয়েক বছর আগে আমু এখানে এসেছিল কয়েকবার সুকমল কাকুর সঙ্গে।

অর্পণ জোসেফ আঙ্কেল কে বলল -আঙ্কেল  আমু সারারাত তো কিছু খেয়ে আসেননি। কিছু খাবার ব্যবস্থা করুন। আমারও তো খিদে পেয়ে গেল।

আঙ্কেল বললেন -তাইতো আমি তো ভুলেই গেছি, আচ্ছা আপনারা প্রস্তুত হয়ে নিন আমি খাবার রেডি করছি।

সন্ধ্যার সময় তারা দুজনে রওনা দিল গুনেপুরাম শহরের দিকে। সেখানে একটা রেস্তোরাঁতে ঢুকে কিছু খাবার নিয়ে চলল মহাবলী নদীর তীরে। সেখানে তাদেরই একটা লঞ্চ ছিল। সেই লঞ্চে গিয়ে উঠল তারা। প্রমদ তোরী হিসেবে এই লঞ্চগুলিকেই ব্যবহার করা হবে মহাবলী নদীতে। আপাতত একটি লঞ্চ রয়েছে এখানে। সন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে যখন বাঁকা চাঁদের আলো উঠেছে, তখন লঞ্চের ডেকে গিয়ে বসে দুজন। যেন কত দিনের কত পরিচিত কত আপন দুটি মানুষ। কিশোরীর মতন  খোলা চুল আর শাড়ির আঁচলটা হাওয়ায় উড়িয়ে ডেকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আমু। ফুরফুরে বাতাসে উড়েছিল তার চুল। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন - আপনি জানেন কেন আপনার কাছে ছুটে আসি। কেন আপনাকে এত ফোন করি। 

অর্পণ বলল - বন্ধুত্বের নিগড় বন্ধনে বাধা পড়েছি তুমি আর আমি। তুমি কি একাই ফোন করো আমায়? আমি তোমায় করি না। 

আমু বলল -এই বন্ধুত্ব আছে বলেই জীবনে আবার সুন্দর করে স্বপ্ন দেখতে চাই। 

অর্পণ বলল -কিন্তু আমু মালিক আর কর্মচারীর মধ্যে বোধহয় একটা দাঁড়ি অথবা কমা থাকে।

কথাটা শুনে আমু অর্পনের কাছে এগিয়ে এল। বলল -  মালিক আর কর্মচারী নয়। আপনি আমার বন্ধু। আমিও আপনার বন্ধু হতে চেয়েছি কি জানি কতটা পারলাম জানিনা।

অর্পণ -আমিও তো আপনার বন্ধু হতেই চেয়েছি। এবং বন্ধু হতে পেরেছি। বন্ধু হতে পেরেছি বলেই আপনি ছুটে এসেছেন আমার কাছে। আমি জানি শুধু ব্যবসা দেখার জন্য আপনি আসেননি। আপনি বন্ধু বলেই আমিও প্রতিমাসে একবার করে ছুটে যাই। শুধু আপনাকে দেখব বলে আর কথা বলবো বলে।

আমু নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে - মাঝে মাঝে যখন নিজেকে খুব  একা লাগে তখন মনে হয় আপনার মতন একজন বন্ধু পাশে থাকাটা খুব জরুরী।

অর্পণ সাহসে ভর করে আমুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর তার কাঁধে হাত রেখে বলে - আমারও ঠিক তাই মনে হয় জানেন। 

আমু অর্পণকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। তারপর অর্পনের বুকের মাঝে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। 

অর্পণ বলে -কি হলো কাঁদছেন কেন? আমি তো রয়েছি আপনার পাশে। আমি আপনার পাশে বন্ধু হয়ে থাকবো সারা জীবন। 

আমু অর্পণ কে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। আবারো কাঁদতে থাকে সে। অর্পণ বুঝতে পারেনা তার কান্নার কারণ কি। তাই সে জিজ্ঞাসা করে - আমু কাঁদছেন কেন? 

আমু ধীরে ধীরে মুখ তুলে অর্পনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে - আমি আপনাকে চাই সারা জীবন। 

অর্পণ আমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে -সুকমল কাকু বিষয়টা মেনে নেবেন না। আপনার পরিবার ও মেনে নেবে না। তাই বন্ধুত্বটা বাঁচিয়ে রাখবো কথা দিলাম। কথা দিচ্ছি আপনার বন্ধুত্ব বাঁচিয়ে রাখতে আমি কখনো বিয়ে করব না। 

আমু - আমার মা ছিলেন বিরাট ধনী পরিবারের মেয়ে। সেই তুলনায় বাবা ছিলেন মাত্র প্রফেসর। মায়ের পরিবার মেনে নিয়েছিলেন বাবাকে। 

অর্পণ বলে - দেখা যাক যদি কখনো সামাজিক মিল না হয় মনের মিল তো হবে। 

ঠিক সেই সময় আমুর ফোনে  একটা কল আসে। আনন্দ ফোন করেছে তাকে। ফোন করে জানালো যে বাবার শরীর খুবই খারাপ তাকে ভর্তি করা হয়েছে হসপিটালে। তাই এই মুহূর্তে সে যেন ফিরে আসে। খবরটা সোনা মাত্রই অর্পণ আমু কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এখানকার লোকাল ম্যানেজার কে দুটো এয়ার টিকিট কাটার জন্য বলে দিল। অফিসে ফিরে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর পোশাক পরিবর্তন করে সেই মুহূর্তে তারা বেরিয়ে গেল কলম্বো এয়ারপোর্টে। 


নাগরকোয়িলের সব থেকে বড় বেসরকারি হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে সুকমল বাবুকে। আই সি ইউ তে রাখা হয়েছে তাকে। আই সি ইউ এর বাইরে একটা চেয়ার মাথা নিচু করে বসে আছেন তার স্ত্রী আন্না দেবী। 

অনেক চেষ্টা করিও বাঁচানো গেল না সুখময় বিশ্বাসকে। পরিবারের সকলের মধ্যেই নেমে এসেছে এক অসম্ভব শোকের ছায়া। এখানকার সমস্ত নিয়ম অনুযায়ী মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু আন্না দেবী বললেন - আমু এই শেষ যাত্রায় আমি থাকতেও পারবো না দেখতেও পারবোনা।  আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়। 

পাশে দাঁড়িয়ে ছিল আনন্দ। সে সঙ্গে সঙ্গে তার মাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। অর্পণরা অপেক্ষা করতে লাগলো আনন্দের জন্য। 

বহু লোক জড়ো হয়েছে সেখানে। এখানে তার বহুল পরিচিতি। সকলে চলেছে শেষ যাত্রা। আমু এবং অর্পণ পাশাপাশি হাঁটছে। আনন্দ হয়েছে সামনের দিকে। আনন্দ জানে তার দিদি অর্পণকে খুবই ভালোবাসে। তাই সে নিশ্চিন্তে তার বাবার মরদেহের সঙ্গে হাঁটতে থাকে। আমু হাটতে পারছে না। পা গুলো চলছে তার। অর্পণ বলল -আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে। 

আমু কিছু বলল না। শুধু নিজেকে নিজেকে সামলাতে না পেরে হঠাৎ অর্পণের হাতটা ধরল শক্ত করে। তারপর তার শরীরের মধ্যে পড়ে গেল।  দু-একজন দৌড়ে এলো।ছুটে এলো আনন্দ। দিদিকে ছোটবেলা থেকেই সে খুব ভালোবাসে। অর্পণ আমু কে এক হাতে বেষ্টন করে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলো। আনন্দ ফিরে গেল আবার সামনের দিকে। আমুর পা গুলো টলোমলো করছে। চোখে জল। সেই অবস্থায় অর্পণের দিকে তাকিয়ে বলল - আমায় ছেড়ে দেবেন না প্লিজ। 

অর্পণ বলল - আপনি নিশ্চিন্তে হাঁটতে থাকুন। ধরে রইলাম সারা জীবনের জন্য। 

সুকমল বাবুর শেষ যাত্রা ধীরে ধীরে ধীরে এগিয়ে  যেতে লাগলো।













একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ