আলো





 অয়নের বয়স ছিল ৪৪ বছর। সে শহরের প্রান্তে একটি ছোট্ট, নিরিবিলি অ্যাপার্টমেন্টে থাকত। তার জীবন ছিল সাদামাটা—রুটিন, কাজ, আর একাকীত্বে পূর্ণ। অনেক বছর ধরে সে একাই ছিল, কারণ তার নিজেরই মনে হয়েছিল এমন জীবন যাপন করা সহজ।






তবে একদিন অয়ন এক বৃষ্টির দিনে, যখন সে জানালার ধারে বসে বই পড়ছিল, তখন হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনল। দরজা খুলতেই দেখল, এক মহিলা ভিজে গেছে বৃষ্টিতে, হাতে ছোট একটা প্যাকেট।


“আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত,” মহিলাটি একটু হাসি দিয়ে বলল। “মনে হয় এটি ভুল ঠিকানায় পৌঁছে গেছে।”


 তার হাতে প্যাকেটটি তুলে নিয়ে। অয়ন বলল  “ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে এই বৃষ্টির মধ্যে আসতে হল কেন?”


“এটা কোনো সমস্যা নয়,” সে হেসে বলল, “আমি উপরের ফ্লোরেই থাকি। আমি মীরা।”


অয়ন একটু হতচকিত হয়ে গেল। এই ভবনে সে তাকে আগে দেখেছে বটে, কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি। মীরার মুখে এমন একটি উষ্ণতা ছিল যা তাকে আকর্ষণ করল।


“আমার নাম অয়ন,” সে হাসি দিয়ে বলল “ ভিতরে এসে এক কাপ  চা খেয়ে যাবেন?” 

অয়নের নিজেরই অবাক লাগল, কারণ অনেকদিন পর এমন একটা নিমন্ত্রণ সে করল।


মীরা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “হ্যাঁ, সেটা ভালো হবে।”


তারা বসে চা খেতে খেতে গল্প করতে লাগল। প্রথমে সাধারণ আলাপ হলেও, সময়ের সাথে তাদের কথাবার্তা গভীর হতে লাগল। মীরা একজন ফ্রিল্যান্স শিল্পী, তার কাজের গল্প, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্তগুলো সে ভাগ করে নিল।


তারপর থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে লাগল। প্রতিদিনকার দেখা হওয়া, একসাথে হাঁটা, আড্ডা দেওয়া, আর একসময় মনে হল যেন জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তারা তৈরি করেছে।


একদিন সন্ধ্যাবেলায়, যখন তারা পার্কে বসে সূর্যাস্ত দেখছিল, মীরা বলল, “অয়ন, আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। তুমি আমার জন্য বাড়ির মতো।”


অয়ন তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমিও তোমার সাথে থাকতে চাই।” 

সেই মুহূর্তে অয়ন জানল, সে একা নয়, আর মীরার সাথে জীবন কাটানোর নতুন স্বপ্ন বুনল।


কয়েক সপ্তাহ পরে, অয়ন একটি সুন্দর জায়গায় মীরাকে নিয়ে গেল। সূর্যাস্তের আলোয় মীরার হাতে একটি আংটি পরিয়ে বলল, “মীরা, তুমি আমার জীবনে আলো এনেছো। তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?”


মীরার চোখে অশ্রু ঝরে পড়ল, সে হাসিমুখে বলল, “হ্যাঁ, অয়ন”


তাদের বিয়ে ছোট্ট এক অনুষ্ঠানে হল, শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুরা উপস্থিত ছিল। একে অপরকে প্রতিজ্ঞা করল যে জীবনের প্রতিটি উত্থান-পতনে তারা একে অপরের পাশে থাকবে।


বিয়ের পরে তারা হাতে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে অয়ন অনুভব করল, তার একাকীত্বের দিনগুলি শেষ। একে অপরের হাত ধরে নতুন জীবনে পা বাড়াল। মীরার জন্যই তার জীবনে নতুন আলো এসেছে, ভালোবাসায় ভরা এক নতুন শুরু।


এভাবেই তারা দুজন একে অপরের জীবনে পূর্ণতা এনে দিল, আর জীবনের বাকি দিনগুলো একসাথে কাটানোর অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলল।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ