রমেশ
মানস পুর নামে একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করত রমেশ নামের এক কৃষক। রমেশ খুবই পরিশ্রমী, কিন্তু ফসলের দাম কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। প্রতিদিন ভোরে উঠে সে ক্ষেতে কাজ করত, কিন্তু তার আয়ের অধিকাংশই ঋণ শোধ করতে ব্যয় হয়ে যেত। রমেশের পরিবারের লোকজনও কষ্টে দিন কাটাত, তবুও তাদের মনের মধ্যে ছিল অদম্য লড়াইয়ের জেদ।
একদিন, রমেশ গ্রামের পঞ্চায়েতে গিয়ে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানাল। পঞ্চায়েতের লোকজন তার কথা শুনে তাকে সমবায় গঠনের পরামর্শ দিল। সমবায় তৈরি করে গ্রামের অন্য কৃষকদের সাথে একত্রে কাজ করলে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়তে পারে এবং ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রথমে রমেশ একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু সে গ্রামের অন্য কয়েকজন কৃষকের সাথে আলোচনা করল। সবাই মিলে ঠিক করল, তারা একত্রিত হয়ে একটি সমবায় তৈরি করবে।
কিছুদিনের মধ্যে গ্রামের কৃষকদের সমবায় গঠন হল। তারা সকলে মিলে জমি এবং কৃষিকাজের উপকরণ ভাগ করে ব্যবহার করতে লাগল। এবার তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে গেল। আর সমবায়ের মাধ্যমে একসঙ্গে ফসল বিক্রি করতে গিয়ে তারা ফসলের জন্য বেশ ভালো দাম পেতে লাগল। ফলে লাভও অনেক বেড়ে গেল। রমেশের মতো যেসব কৃষকের ঋণ ছিল, তারাও ধীরে ধীরে ঋণমুক্ত হতে শুরু করল।
এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটল, যা গ্রামের মানুষের জীবনে একটি পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। গ্রামেরই এক বৃদ্ধা মহিলার ছেলে ছিল বিদেশে, যিনি তার মা'র খোঁজখবর একেবারেই নিতেন না। সেই মহিলার আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই দুর্বল, এবং সে প্রায়ই ক্ষুধার্ত থাকত। রমেশ ও তার বন্ধুরা মিলে বৃদ্ধা মহিলাকে সমবায় থেকে কিছু সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তারা তার খাদ্যের ব্যবস্থাও করল এবং তার বাড়িতে গিয়ে তার কাজকর্মেও সহায়তা করতে লাগল।
এই ঘটনাটি গ্রামের মানুষের মধ্যে একটা আবেগের সৃষ্টি করল। গ্রামের লোকেরা অনুভব করল যে একত্রিত হলে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই নয়, একে অপরকে সাহায্য করার শক্তিও অর্জন করা যায়। এই সংহতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা আর ঐক্যের এক নতুন চেতনা সৃষ্টি হল।
সমবায়ের এই উদ্যোগ শুধু রমেশ এবং তার বন্ধুদের নয়, বরং পুরো গ্রামের মানুষের জীবনে উন্নতি এনে দিল। গ্রামের মানুষরা এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখল, একে অপরকে সাহায্য করলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তারা গ্রামের শিক্ষার উন্নতিতেও মনোযোগী হল এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য একটি পরিষ্কার পরিবেশের লক্ষ্য স্থির করল।
গ্রামের মানুষরা আজ রমেশের সেই উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞ। তাদের কাছে রমেশ শুধু একজন কৃষক নয়, তিনি এক নতুন দিনের আলো, একাত্মতার প্রতীক।
0 মন্তব্যসমূহ