নুপূরের শব্দ ১৭

  ১৭ পর্ব 






পরের দিন জয়ার সঙ্গে দেখা হয় অহিনের। অহিনই ডাকে জয়া কে,  তারপর বলে -  কোথায় যাবেন এত হন্তদন্ত হয়ে। 

জয়া - আপনার মত তো আমার চাকরি নেই। যে ধীরে সুস্থে গেলেই হবে। আমি কাজের জন্য মাল আনতে যাচ্ছি। আপনি কোথায় যাবেন?  

অহিন-  বাজারে যাব।  পরশু আমার এক বান্ধবী এসে হাজির।  

জয়া অবাক হয়ে বলে  - তোমার বান্ধবী ? 

অহিন -  না বান্ধবী ঠিক বলা চলে না,  আবার বললেও ক্ষতি হয় না। 

জয়া - আপনার বান্ধবীর কথা আগে তো বলেননি।  আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন না বলে নাকি।  

অহিন একগাল হেসে ব্যাপারটা হালকা করে বলে-  না না তেমন কোন ব্যাপার নয়। আজ রাতেই আপনার সাথে পরিচয় করাব, যদি আপনি আসেন আমার বাড়িতে।  

জয়া হেসে বলে - আপনি যখন বলছেন তা না গিয়ে উপায় আছে?  যাব আর আপনার বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয়ও করে আসব। 

অহিন- দেখবেন ভুলে যাবেন না যেন।  

জয়া - অহিন বাবু আপনার বান্ধবী নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী?  

অহিন - না। খুব সাধারণ একটা মেয়ে।  কিন্তু গুনে অনন্যা।  

জয়া - তাই বুঝি।  কিন্তু আমার তো তা মনে হয়নি।  খুব সুন্দরী ছাড়া আপনার মন জয় করা তো সহজ ব্যাপার নয়। 

অহিন উত্তর দেয়-  বেশ তো,  বিশ্বাস না হয় রাতে গিয়ে দেখবেন।  

জয়া - যাক এবার আর আপনি পালাতে পারবেন না। 

অহিন - কেন? 

জয়া-  এতদিন পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন। কিন্তু এবার আপনাকে বিয়ে করতেই হবে। 

অহিন - দেখি কি করা যায়। যদি ও রাজি হয়। 

জয়া - আরে মশাই আমি রাজি করিয়ে ছাড়বো। 

অহিন -  দেখুন চেষ্টা করে।  

জয়া -  আপনার বাজারের রাস্তা এসে গেছে। আমি চললাম। রাতে দেখা হছহে তাহলে। 

অহিন - নিশ্চয়ই। 

জয়া তার নিজের পথে চলে যায়। অহিন অন্যমনস্কের মত বাজারের পথ চলতে শুরু করে। 

 

আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে অহিন।  তারপর তৃষাকে জয়ার কথাটা বলে।  তৃষা ও প্রস্তুত হয় এক অচেনা বান্ধবীর জন্য। সন্ধ্যেবেলার আড্ডাটা যাতে জমে ওঠে তার জন্য তৃষা নানা রকম ভাজা ভুজির ব্যবস্থা করছে। তৃষা যখন রান্নাঘরে ব্যস্ত তখন দরজার করা নড়ে ওঠে। অহিন গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়।  তারপর তৃষা আর জয়াকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয় পর্ব শেষে জয়াকে বসিয়ে তৃষা এসে ঢোকে আবার রান্না ঘরে। জয়াও তৃষার পিছন পিছন আসে রান্না ঘরে।  তৃষা জয়াকে দেখে বলে -  আপনি এখানে? বসুন  বসুন না ঘরে আমি যাচ্ছি। 

জয়া -  আপনি নয়,  বলো তুমি।  

তৃষা জয়ার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হেসে বলে, আচ্ছা বা বা  তুমি বসো আমি আসছি। 

জয়া - তুমি তোমার কাজ কর।  আমি গল্প করি। 

তৃষা  হাস্তে হাস্তে বলে -  কি গল্প করবে?  

জয়া  কোনো রকম হেয়ালি না করেই বলে -  ইভার কি খবর বলো তো?  

তৃষা - উত্তর দেয় বিয়ে করেছে।  পাড়ার এক বড়লোক ছেলে কে।

জয়া  - আমি কি তোমার সত্যি কারের বান্ধবী হতে পারি?  

তৃষা - কড়াই ভাজাটা নেড়ে দিয়ে খুন্তি টা নামিয়ে রেখে  জয়ার কাছে এসে জয়ার দুহাত ধরে বলে -  এই অচেনা অজানা জায়গায় তোমার মত বান্ধবী ছাড়া আমি চলব কি করে বলতো। যে কথাটা আমার বলার দরকার সেটা তুমি বলে দিলে।  

জয়া - তাহলে একটা কথার উত্তর দাও।  

তৃষা আবার কড়ার কাছে গিয়ে বলে -  কি বলতে হবে বলো। 

জয়া - অহিন বাবুকে তুমি ভালোবাসো তো? 

তৃষা জয়া চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে - ভীষণ।  

জয়া - ব্যাস।  এইটুকু জানার ছিল।  এবার একটা ভালো দিন দেখতে হবে। 

তৃষা উত্তর দেয় -  দিনের কথা পরে চিন্তা করা যাবে, এখন চলো গরম গরম চপ আর বেগুনি খাই।  না হলে গল্প জম্বে না। 

তিনজন অনেকক্ষণ আড্ডা দিল।  রাত ন'টা নাগাদ জয়া উঠে পড়ে।  অহিন যায় জয়াকে এগিয়ে দিতে।  ফাঁকা ঘরে তৃষা অহিনের ফটোর কাছে গিয়ে আপন মনে বলে- তুমি থাকলে আমি সব পারবো। তোমাকে ভালোবেসে যেন আমার জীবন সার্থক হয়। আমি যেন তোমার সব দুঃখকে ভুলিয়ে দিতে পারি। 

কথাগুলো বলতে বলতে নতজানু  হয়ে বসে পড়ে।  দরজার কড়া নাড়ার শব্দ হতে থাকে।  বাইরে অহিন বারবার ডাকতে থাকে। অনেকক্ষণ পর ওর খেয়াল হয় অহিন বাইরে থেকে ডাকছে।  

সেই রাতে তৃষা তার  চিঠি লেখে তার মাকে। অহিন কে দেখিয়ে বলে দেখতো ঠিক হলো কিনা চিঠি টা।   

অহিন - তোমার চিঠি আমি কেনো দেখবো। শুধু এই কথাটা লিখে দিও, তুমি কয়েক বছরের মধ্যে ফিরছো না। তোমার মা যেন কোন চিন্তা না করে। 

তৃষা - দেখইনা চিঠিটা একবার। 

অহিন - পড়ো শুনি।  

তৃষা -  পড়তে শুরু করে - 

পূজানীয়া মা,  

প্রথমে আমার শতকোটি প্রণাম নিও। আমি ভালোভাবেই বাঁকুড়া পৌঁছেছি। তুমি হয়তো জানো না কেন আমি বাঁকুড়া এসেছিলাম।  মাসির বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে আমার ছিল না।  আমি এসেছি অহিনদার কাছে। তোমাকে জানানো হয়নি আমি মনে মনে ওকে ভালবাসতাম। এখানে এসে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করব।  আশীর্বাদ করো।  আশা করি তোমার অমত হবে না।  দাদাকে বল সব কথা। দাদা যেন রাগ না করে।  অহিনের কোন দোষ ছিল না। আমি ওকে ভালোবেসে ছিলাম।  এই মুহূর্তে ওখানে ফিরছি না। ওর কাজের চাপ আছে। তাছাড়া এখান থেকে একেবারে বদলি হয়ে ওখানে ফিরবে।  তোমার কিছু জানা থাকলে এই ঠিকানায় চিঠি লিখো।  ভালো থেকো।

 

ইতি তোমার 

তৃষা 

অহিন শুনে বলে -  আর কিছু লেখার দরকার নেই।  

তৃষা - কাল কিন্তু তোমায় চিঠিটা পোস্ট করে দিতে হবে। 

অহিন - তাহলে ওটা আমার জামার পকেটে রাখো।  

তৃষা - মনে থাকবে তোমার?  

অহিন -  থাকবে।  

দুদিন পর এক সন্ধ্যায় জয়া এসে হাজির। অহিন তখন বাড়ি ছিল না। তৃষা আপন মনে একটা গল্পের বই পড়ছিল। জয়ার ডাকে হুস ফেরে। 

জয়া - আরে এতো মন দিয়ে কি পড়ছ?

তৃষা - আরে তুমি এসো। আর বল না একটা গল্পের বই পড়ছিলাম। 

জয়া - তাহলে তো আমার ঠিক কাজ হল না। 

তৃষা - ছি ও কথা বলে আমায় লজ্জা দিও না। এসে বসো তো দুটো গল্প করি। 

জয়া - এই ভাবে থাকলে লোকে মন্দ বলবে। কাল ভাল দিন আছে। বিয়েরও লগ্ন আছে। কাল কেই তোমাদের বিয়ে করতে হবে। এই ভাবে থাকলে পাড়ায় নানান কথা উঠছে। 

তৃষা- তাই নাকি। তাহলে তো শুভ কাজ সেরে ফেলা ভাল। একটু বসে যাও ও আসলে বল ব্যাপার টা। ঠিক সেই সময় দরজার কড়া নড়ে ওঠে। তৃষা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। অহিন ঘরে ঢুকে জয়া কে দেখে বলে - আরে জয়া আপনি? কি মনে করে।?  

জয়া - আপনার বাড়ি আসতে গেলে কি কিছু মনে না করে আসা যাবে না মশাই। বলি আমার বান্ধবীর সাথেও তো দেখা করতে আসতে পারি নাকি?

অহিন একগাল হেসে উত্তর দেয় - আরে না না আমি ইয়ারকি করলাম। আপনি যখন ইচ্ছা আসুন না।

জয়া - আজ কিন্তু আমি দরকারে এসেছি।

অহিন - দরকার। কি দরকার?

জয়া - আপনারা বিয়ে না করে আছেন এক ঘরে। পাড়ায় নানা লোকে নানা কথা বলছে। তাই আমি আমাদের এখানে মন্দিরের পুরোহিতের কাছে গেছিলাম। তিনি বললেন কাল কে ভালো একটা দিন আছে। শুনুন অহিন বাবু আমি কোন কথা শুনব না। কাল ই বিয়ে। অফিস আপনি সাম্লে নেবেন।

অহিন - বলেন কি কাল ই। কাল কে একটা ছুটি নিয়ে ছিলাম তৃষা কে বেরাতে যাবো বলে। 

জয়া - ছুটি যখন আছে তখন আর কি। শুভ দিন ও আছে, লগ্নও আছে।

অহিন - জয়া আমিও ভাবছিলাম। এভাবে থাকাটা ঠিক না। তাই আপনি যখন সব ঠিক করে ফেলেছেন আমার আর আপত্তি নেই। 

জয়া -  তৃষা চলো আমারা কিছু কেনা কাটা করতে যাবো। আর শোনো তোয়ামার যা লাগবে আমি দেব। গুছিয়ে নাও তো তাড়াতাড়ি। 

তখন সবে সাতটা বাজে। জয়া তৃষা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কেনাকাটা করতে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ