ইসাবেলা
অতনু সরকার
আমি এক যাযাবর প্রকৃতির টানে আমি বারবার ছুটে যাই পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, নদী আর ঝর্ণার কাছে। জীবনের এমন অনেক সময় আসে যখন মনের দুয়ার খুলে যায় বিশ্ব মাঝে। কাজের সূত্রে আমাকে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে হয় আমাকে। সমগ্র ইউরোপ ও আফ্রিকা জুড়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ সম্প্রসারণের জন্য মনিন্দ্র সেন চলেছেন বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে। আমি তার সফর সঙ্গী। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো যেন সুযোগ এসে গেল আমার কাছে। সম্মেলন হবে মিশরের কায়রোতে। কিন্তু ফেরার পথে আরো কয়েকটি দেশ ঘুরে তবে ফিরব। লম্বা সফর। আমি মিস্টার সেন কে অনুরোধ করেছিলাম জাহাজে যাওয়ার জন্য।
বোম্বে থেকে জাহাজ ছাড়ে আলেকজান্ডারিয়া পর্যন্ত। আমরা আরব সাগরের বুক চিরে সেই পথে চলেছি। জাহাজের ডেকে এসে দেখতে লাগলাম দূর থেকে ভারতকে। তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ বিশাল বিশাল ডেউ গুলি আছাড় খেয়ে পড়ছে জাহাজের গায়ে। আকাশের নীল রং সমুদ্রে পড়ে নীলাভ করে তুলেছে আরব সাগরের জলকে। আরব সাগরের ফেনীল জলরাশি গুলি শুভ্র বর্ণ ধারণ করে পেজা তুলোর মতো বিচরণ করছে। কখনো দুরন্ত আরবের জল জাহাজের কানা স্পর্শ করছে। চারিদিকে শুধু জল আর জল। সারাদিন তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র দেখে রাতে নিজের কেবিনে গেলাম। জাহাজটা দুলছে অনবরত।গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে তখন বারোটা বাজে। রাতের সমুদ্র দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। গায়ে জামাটা গলিয়ে চলে এলাম ডেকে। ভেবেছিলাম আমি হয়তো একা। কিন্তু দেখলাম কত লোক সেখানে। কেউ বা বসে আছে, কেউ বা রেলিং ধরে অন্ধকার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউবা ভাব বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর দেখছে অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চলা এই জাহাজটাকে। আমি একটা ফাঁকা মতন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। নীল আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা জ্বলজ্বল করছে। ওই দূরে এক ফালি বাঁকা চাঁদ উঠেছে, দূর সমুদ্রে সাদা সাদা ফেনা গুলি শুধু জলের ঢেউয়ে দুলছে। মাঝে মাঝে বড় বড় ঢেউ জাহাজের গায়ে এসে পড়ছে আর জলের ছিটে এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমাকে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর লক্ষ্য করলাম আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এক তরুণী। বিদেশিনী। কিন্তু কথা হল না। এরপর আমি চলে এলাম নিজের কেবিনে। পাশের কেবিনে সেনবাবু তখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন। পরের দিন ভোরবেলা আমাদের একটু বিস্ময় লাগলো। জাহাজটি আর আগের মত দুলছে না। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম ডেকে। তখন সেখানে মানুষের ভিড়। একজনের কাছে শুনলাম আমরা আরব সাগর পার হয়ে লোহিত সাগরে পড়েছি। লোহিতের জল লাল এবং শান্ত। অপার বিষয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ডেকের ধারে। মাঝে মাঝে ডলফিন এর দল জল কেলি করতে করতে জাহাজের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। মনে হলো ওরা বুঝি আমাদের পথপ্রদর্শক। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সেই তরুণী বিদেশিনী আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ কয়েকটি ডলফিন ডেকের একেবারে কাছে লাফিয়ে উঠলো। মেয়েটি উত্তেজিত হয়ে বলল- “বাও। কি সুন্দর তাই না”।
কথাগুলি আমাকেই লক্ষ্য করে বলা কারণ আশেপাশে কেউ নেই। আমি বললাম- সত্যি সুন্দর তবে আপনার মত সুন্দর না।
মেয়েটি লজ্জা পেল। তারপর বলল - আপনি কোথায় যাবেন? আমি হেঁয়ালি করে উত্তর দিলাম - যেখানে মন যেতে চায় সেখানে।
মেয়েটি বলে - “বাহ এতো ঠিক আমার মত”।
যাইহোক এরপর সেই বিদেশিনীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার নাম অ্যানা ইসাবেলা, প্যারিসে থাকে। ভারত ভ্রমণ করে ফিরছে। তবে তারও গন্তব্যস্থল কায়রো। সেও যোগ দিতে যাবে বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে। দুপুরের খাওয়া শেষ করে আবার দাঁড়িয়েছি ডেকে। হঠাৎ প্রবল বাতাসের মুখে পড়লাম। মনে মনে ভয় পেলাম। সমুদ্র ঝড় হবে নাতো? ডেক থেকে থেকে সরে যাওয়ার পথে এক সহকারি ক্যাপ্টেনের মুখে শুনলাম ১৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে ইরিত্রিয়া থেকে ২৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এই ধরনের প্রবল বায়ুর প্রবাহিত হয়। তিনি কেবিনে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। সন্ধ্যার সময় অ্যানা আমার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। আমায় ডেকে ইসাবেলা বলল - “আসুন দেখুন বাইরের দৃশ্যটা কি সুন্দর”।
ব্যবসায়ীর মেয়ে হলেও মনের মধ্যে যেন রয়েছে একটা শিল্পসত্ত্বা। আমি অ্যানার সঙ্গে এসে দাঁড়ালাম ডেকে। দুদিনের পরিচয় বন্ধুত্বটা বেশ ভালই হয়েছে। দূরে আরও অনেক জাহাজের মাস্তুলের আলো দেখা যাচ্ছে। বাঁকা চাঁদের আলোটি সমুদ্রে পড়ে মুক্তোর মত লাগছে। কি বিস্ময়। পাশের এক ফরাসি সুন্দরীর শীতল স্পর্শ আর সামনে অপার বিস্ময় সমুদ্র। আমার বলতে ইচ্ছা করছিল -”এই পথ যদি না শেষ হয়”।
লোহিত সাগর পার হয়ে আমরা পড়লাম সুয়েজ খালে, ভোর হয়েছে রক্তিম সূর্যের আভায় চারদিক লাল হয়ে গিয়েছে। এই পথে জাহাজ একটু ধীর গতিতে চলে। ডেকে দাঁড়ালে মাঝে মাঝে হাঙর দেখা যায়। পরিষ্কার জলের নিচে হাঙ্গর গুলি স্পষ্ট দেখা যায়। প্রায় দশ ঘণ্টা পর সুইস পেরিয়ে এসে পড়লাম ভূমধ্যসাগরে। আমার স্বপ্নের সাগর। কত ইতিহাস আজ মনের মধ্যে উঁকি দিতে লাগলো। কত স্বপ্ন এই সাগরকে কেন্দ্র করে। এই সাগরের একদিকে উন্নত ইউরোপ আরেক দিকে অনুন্নত আফ্রিকা। সন্ধ্যার ঘন অন্ধকারে ইসাবেলা পাশে এসে দাঁড়ায়। আমার মনে পড়ে মনে পড়ে যায় কিলিওপেট্রার কথা। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে কেবিনে ফিরে গেলাম। সেইদিন রাত একটার সময় আমরা আলেকজান্ডারিয়া বন্দরে নামলাম। বিরাট বন্দর। সেখানে একটা হোটেলে থেকে। তারপর সেই দিন সকালে একটা বোর্ডে করে নীলনদে ধরে চললাম কায়রো দিকে, আমার মনে পড়ে গেল গঙ্গার কথা, পৃথিবীর প্রাচীন দুই নদী। কতকিছুর সাক্ষী এরা। দুধারে সবুজ গাছপালা সারি। নীল নদের অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে এসে পৌছালাম কায়রো। এখানে আমারা যে হোটেলে উঠলাম সেই হোটেলে দেখা হল ইসাবেলার সঙ্গে। সম্মেলনে যোগ দিলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না যে এত বড় সম্মেলন এত সুন্দর ভাবে হতে পারে।পরের দিন মি. সেন ব্যস্ত ছিলেন। আমি নতুন বান্ধবী ইসাবেলাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কিংস অফ ভ্যালি দিকে। শহর থেকে প্রচুর গাড়ি যায়। আমরা দুজন একটা গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম। কি জানি কোন জাদু বলে আমি ইসাবেলার এত কাছের হয়ে গেলাম। বেলা চারটের সময় আমরা পৌঁছালাম কিংস অব ভ্যালিতে। চারিদিকে বিস্ময় ভরা। ভাবতে অবাক লাগে কত বছর আগে এক প্রাচীন মানব সভ্যতা এই কীর্তি স্থাপন করেছিলেন। ফ্যারাও টুটুন খামেন থেকে শুরু করে আমেন হোটেপের স্মৃতি। কত পিরামিড গুনে শেষ করা যায় না। বেলা একটু বাড়লে অস্তায়মান সূর্যের ম্লান আলোয় ঐতিহাসিক স্থানটি যে স্বপ্নের মায়াজাল তৈরি করেছিল তা অবিস্মরণীয়। আমার মত ইসাবেলাও অপার বিষয় নিয়ে দেখেছিল সেই মায়াবী সন্ধ্যার ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
মিশর ছেড়ে এবার ফ্রান্স। মি. ম ব্লামোর সঙ্গে মনিন্দ্র সেনের নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি হবে। প্যারিসে চলেছি আমরা। ইসাবেলা যাবে প্লেনে আর আমরা যাব জাহাজে। আবার ভূমধ্য সাগরের বুক চিরে চলেছি ইউরোপের দিকে। প্যারিসে এসে যখন মি. ম ব্লামোর বাড়িতে পৌঁছালাম তখন আরো বিস্ময়ে অভিভূত হলাম। প্রথমেই যিনি আমাদের সামনে এলেন তিনি ইসাবেলা। পরে জানতে পারলাম মি. ম ব্লামোর একমাত্র কন্যা ইসাবেলা। সেও প্রথমে আমাদের দেখে অবাক হয়েছিল। যাই হোক পরিচয় যখন আরো গভীর হল, বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হল। আমরা দুই তরুণ তরুণী সমুদ্র তীরবর্তী স্যাতেলু পর্বত দেখতে গেলাম। ইসাবেলা বেশ ভালো গাড়ি চালায়। রাস্তা দুধার দিয়ে সারিসারি গাছ। প্রায় ঘন্টা দুয়েক যাওয়ার পর এলো এক নির্জন পথ। একদিকে সিন নদী আর অন্য দিকে পাহাড়। সাড়ে তিন ঘন্টা গাড়ি চালানোর পর আমরা এসে পৌছালাম গির্জার শহর রুয়াতে। রুয়াতে কিছুক্ষণ ঘুরলাম। সেখানে প্রচুর গির্জা রয়েছে। আবার গাড়ি চলতে শুরু করল। এবার এলাম জেরিম্যায়া। সেখান থেকে সোজা স্যাতেলুর পার্বত্য উপত্যকা। চারিদিকে আপেল বাগান আর আঙ্গুর ক্ষেত। এই পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সিন নদী। সবুজ পার্বত্য অঞ্চলের বুকের মধ্যে দিয়ে কাঁচের মতো স্বচ্ছ সিন ভূমধ্যসাগরের মিলিত হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা এসে পৌছালাম মোহনায়। সেখানে সিন মিলিত হয়েছে ভূমধ্যসাগরের নীল জলে। উপরে একটি জলপাই বাগান। জলপাই পাতা এদের কাছে খুবই পবিত্র ও জনপ্রিয়।
আমি একটু দুষ্টুমি করে একটি কচি পাতার জলপাই ডগা ইসাবেলার মাথায় গুঁজে দিলাম। দুজনের চোখ আটকে গেল চোখে। স্মিত হেসে ইসাবেলা বলল- “এখানে জলপাই পাতা ভালোবাসার মানুষের প্রতীক”।
আমি বললাম - আমি না জেনেই তোমাকে ভালোবেসেই দিলাম।
ইসাবেলা কি একটা ভাবল, তারপর বলল - “তাই”
আমি বললাম - বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি।
ইসাবেলা- “কি করে বিশ্বাস করব”।
আমি জানি মেয়েরা লাজুক কোনদিন মনের কথা সহজে প্রকাশ করবে না। তাই এক ঝটকায় তাকে টেনে নিলাম আমার দুই বাহুর বন্ধনে বুকের মধ্যে। তারপর একটি দীর্ঘ চুম্বন দিলাম ওর রাঙা ঠোঁটে।
সমুদ্রের গর্জন আর জলপাই বনের পাখির কলরবে দুই তরুণ তরুণীর আলিঙ্গনের কেউ সাক্ষী থাকলো কিনা জানিনা। শুধু জানি সেদিন থেকে দুজনের সম্পর্ক আরও দীর্ঘ হল। সেই জলপাই বাগানের নির্জনতায় ইসাবেলার কোলে মাথা রেখে ওর কথা শুনেছি। সেদিন রাতে ফিরে এলাম প্যারিসে। পরের দিন ঘুরলাম সমগ্র প্যারিস। গোটা শহরটাই যেন কোন শিল্পীর তুলির টানে ছবির মতন আঁকা। চারিদিকে শত শত ভাস্কর্য। নানান জনের মূর্তি। যত দেখি ততই স্বপ্নের ঘোর লাগে দুচোখে। কি অসম্ভব সুন্দর সব কারুকার্য। রাতে দেখলাম বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার। আহা কি সুন্দর আইফেল টাওয়ার। যখন ফিরলাম তখন রাত দশটা। সময়টা এটা এখানে কোন ব্যাপার নয়। বাড়ি ফিরে এলাম। আমার ঘর থেকে দেখলাম প্যারিস যেন মোহময়ী হয়ে উঠেছে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছি । ঠিক তখনই আমার পাশে এসে দাঁড়ালো এক নারী। ভয়ংকর এক নারী মূর্তি। আমি চিৎকার করে উঠলাম। পাশের ঘর থেকে ছুটে এলো ইসাবেলা আমি ওকে বললাম। ও বলল - “তোমার মনের ভুল”।
আমি ভাবলাম হবে হয়তো। ইসাবেলা বলল- “ভয় পেয়েছো না”? আমি বললাম - না ঠিক বুঝতে পারছি না।
ইসাবেলা বলল- “এস আমার ঘরে, গল্প করব দুজনে”।
গেলাম ওর ঘরে। ইসাবেলা গেল কফি আনতে। কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম ইসাবেলার চিৎকার। ছুটে গেলাম। ইসাবেলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল - “তুমি ঠিক বলেছ। তুমি ঠিক দেখেছো। একটা মেয়ে জানো, এখানে এসেছিল”।
আমি ওকে নিয়ে এলাম ওর ঘরে। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই দেখি একটা সুন্দরী মেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল- “এই বাড়িতে তোমার গাড়ির মধ্যে আমার লাশ রয়েছে। তোমরা যখন আইফেল টাওয়ার দেখছিলে তখন দুটো ছেলে আমার উপর অত্যাচার চালিয়ে আমাকে খুন করে। তারপর তোমাদের গাড়ির বনেট খুলে আমাকে ওখানে রেখে ওরা পালায়। এই দেখো ওদের একজনের গলার হার আমার কাছে। তোমরা গাড়ি নিয়ে ওখানে যাও। আর পুলিশকে খবর দাও।
ইসাবেলা ভয়ে ভয়ে বলল- “ কিন্তু পুলিশ যে আমাদের ধরবে।
সেই মেয়েটা বলল -”না তোমাদের ধরবে না, ওদের ধরবে। পিছনে ঢাকনাটা খুললেই পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করবে”।
ইসাবেলা বললে - “আমি যাব না। পুলিশ আমাকেই ধরে ফেলবে”। মেয়েটি কর্কশ উত্তর দিলে - “বেশ তাহলে তোমরাও মরার জন্য প্রস্তুত হও”।
এই কথা শুনে ইসাবেলা আমাকে আরো জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম - চলো যাব।
ইসাবেলা একপ্রকার বাধ্য হয়ে গেল আমার সাথে। আইফেল টাওয়ারের কাছে ফাঁকা জায়গায় এসে পৌঁছালাম। কেউ নেই। গাড়ি থেকে লাশটা নামালাম। ওর হাতে তখনো মুঠো করে ধরা একটা হার।লাশটা নামিয়ে একটু আড়ালে শুইয়ে দিলাম। তারপর আবার গাড়িতে উঠে চলে এলাম। তখন রাত সাড়ে বারোটা হবে । বাড়ি ফিরে শুনলাম মিস্টার সেন এবং ম ব্লামো দম্পতি একটি পার্টিতে গেছেন। কখন ফিরবেন ঠিক নেই। আমি ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকলাম। ইসাবেলা ছুটে এলো আমার ঘরে। আমি বললাম কি হলো।
ইসাবেলা - “ও আবার এসেছে আমার ঘরে, বলছে পুলিশকে খবর দিতে। ওরা উদ্ধার করে নিয়ে যাবে”।
আমি বললাম - দাও।
ইসাবেলা যন্ত্রের মত মোবাইলের বোতাম টিপে ফোনটা করল। পুলিশকে কথাটা বেশ বুদ্ধি করেই বলেছিল। সত্যি মেয়েটার বুদ্ধি আছে।
সেই ছায়া মূর্তি তার ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে আবার উপস্থিত হলো এবং ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। ইসাবেলা ইতি মধ্যেই আমার শরীরের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। জিবনে এমন ঘটানার মুখমুখি হইনি কখনো। ঘোর জেন কাটতেই চায় না।
সে বলল -“আমি তোমার কাছে থাকবো”।
আমি বললাম- ওনারা এসে দেখলে খারাপ ভাববে না।
ও বলল- “কেউ উপরে আসবে না”।
এই কথা বলে আমাকে চুম্বন করল।
ওর নরম যুবতী শরীর আমার শরীরে তখন ঝড় তুলে দিয়েছে। আমি ওকে সরিয়ে দিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। তখন আমি আমার আলিঙ্গনে দেখে ফেললাম ওকে। ধীরে ধীরে দুজনে মিশে গেলাম অন্ধকারে।
পরদিন ঘুম ভাঙতেই ও চলে গেল ওর ঘরে। এক অনাবিল সুখের রাত যেন আমাকে উপহার দিয়ে গেল ইসাবেলা।
দুদিন পর দেশে ফেরার পালা। বিদায় নিতে ওর ঘরে গেলাম। দেখি মুখ বুঝে শুয়ে আছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম - অপেক্ষা কর, আমি তোমার জন্য আসবো।
ইসাবেলা মুখ তুলে বলল -”আসবে তো”?
ওকে কথা দিয়ে ফিরলাম। প্লেন থেকে দমদমে নামার পরও যেন ঘোর কাটতে চায় না। প্রথমত সেই ভয়ংকর ঘটনাটা আর দ্বিতীয়ত সেই ঘটনার পরেই মধুর একটা রাত্রি। কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে গেল আমাকে বুঝতে পারলাম না। হয়তো ইসাবেলার টানে আবার প্যারিসে যেতে হবে। না হলে কথাটা রাখা হবে না।
0 মন্তব্যসমূহ