রাতের রহস্য
অতনু সরকার
গ্রীষ্মের তাপদগ্ধ দুপুর। সাধারনত এই সময়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে আসতেই সমুদ্রতীর অথবা পাহাড়ের কথাই মনে হবে। কিন্তু আমি কিছুটা ব্যতিক্রম তাই আমার ভাবনাগুলো ব্যতিক্রমী। হঠাৎ বন্ধু রূপম কে ডেকে নিলাম। রূপম আমার ছোটবেলার বন্ধু। হঠাৎ হঠাৎ আমরা দুজনে বেরিয়ে পড়ি এমনি করে কোন এক নতুন অজানা জায়গা খুঁজতে।
সত্যি কথা বলতে কি নতুন জায়গার আকর্ষণ আমার কাছে অসাধারণ বলে মনে হয়। কোনরকমে নাকে-মুখে দুটোকে বেরিয়ে পরলাম। কোথায় যাব আপাতত ঠিক নেই। ট্রেনে চেপে বসলাম।
চলতে শুরু করল ট্রেন। কিন্তু আমরা কোথায় যাব সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত তখনো নেওয়া
হলো না। নিজেদের মধ্যে যখন কথাবার্তা বলছি ঠিক তখনই বলে উঠেন - “ যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি একটা জায়গার কথা বলতে পারি জায়গাটা খুবই রোমাঞ্চকর। যদিও সেই জায়গার কোন নাম নেই পর্যটনের জায়গা হিসেবে। আমার আমার সঙ্গেই আপনারা যেতে পারেন। আমার বাড়ি ওই গ্রামেরই কাছে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি নদী। সেই নদীতীরে অনেটা অঞ্চল জুড়ে রয়েছে অরণ্য। শোনা যায় এই অরণ্য বহু বছর আগের কোন এক রাজার রাজধানী ছিল। অরণ্যের ভিতরে নাকি পু্রনো বাড়িটি ভাঙাচোরা অবস্থায় এখনো রয়েছে। আমি দেখিনি কখনো তবে লোকমুখে শুনেছি। আপনারা চাইলে সেখানে যেতে পারেন।”
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম - সেখানে থাকার কি কোন জায়গা আছে?
লোকটি উত্তর দিল - “ শহরে যেমন থাকার জায়গা বা বা হোটেল রয়েছে গ্রামে তেমনটি নেই। থাকার কথা নয় কারণ পর্যটন মানচিত্রে গ্রামের নাম নেই। কিন্তু মাঝে মধ্যেই বহুলোক ওই নদীর
তীরে অরন্যের আশেপাশেই কয়েক দিন ছুটি কাটাতে আসেন। তাদের সুবিধার্থে সেখানে দু-একটি হোটেল এবং থাকার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলি কুঁড়েঘর। এ কথা বলতে পারি ঘরগুলোতে
আপনারা গ্রামের একটা স্বাদ পাবেন’।
আমরা তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম ওখানে যাব। সেই ব্যক্তির সঙ্গে নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। তারপর আবার উঠতে হল বাসে। ভ্যাপসা গরমে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠি। জামাকাপড় প্রায় ভিজে গেছে।
বাস থেকে নেমে বেশ কিছুটা পথ হেঁটে যখন মন্তেশ্বরী নদীর ধারে এসে পৌঁছলাম তখন সূর্য প্রায় ডোবে ডোবে। আপাত শান্ত মন্তেশ্বরী ছুটে চলেছে শান্তভাবে। সেই মন্তেশ্বরী পশ্চিম তীরে অরণ্যঘেরা একটা জঙ্গল। বহুদূর বিস্তৃত হয়ে জঙ্গল টা এসেছে মিছে এই গ্রামের কাছে। গ্রামের নাম ময়নামতি। না বাংলাদেশের ময়নামতি নয়। হুগলী জেলার ময়নামতি। ধু ধু করছে বালির তীর। আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে বিস্তৃত ধানক্ষেত। সেখানে সবুজ ধান বিকেলের বাতাসে মাথা দুলিয়ে একে অপরের সাথে গল্পে মেতেছে। সেই ব্যক্তি আমাদের একটি থাকার জায়গা করে দিলেন। কুঁড়েঘর কিন্তু হোটেল। মাথায় খড় দিয়ে ছাওয়া। বাঁশ দিয়ে ঘেরা সুন্দরভাবে সাজানো ছোট ছোট ঘর। সেখানেই প্রায় সব খাবারই মেলে।রাতে যখন রুটি আর মাংস দিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছি তখন কথায় কথায় কর্মরত এক ব্যক্তির কাছে জেনে নিলাম এলাকাটার কথা। আমি আর রূপম রাত গভীর হলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম নদীর তীরে।
রাতের রুপালী আলো তখন নদীর জলে আপন-মনে খেলা করছে। নির্জন রাতে সেই নদীর তীরে একটু একটু করে হেটে চলেছি ওই জঙ্গলের দিকে। আমরা শহরের ছেলে। এমন বিশ্বাস অন্তত আমাদের নেই। তাই রাতের সেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হেটে চলেছি।নরম জোছনায় মোড়া এক রাত। আকাশে তারারা মিটিমিটি করে জ্বলছে। হঠাৎ রুপম দূরে তাকিয়ে বলল - “ সায়ন সামনে তাকা”।
সামনের দিকে তাকালাম। তারপর নিজেকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। পাদুটো থেমে গেল। আমাদের ঠিক সামনে দিয়ে হেঁটে চলেছে সাদা শাড়ী পরিহিত এক নারী। আমাদের থেকে প্রায় চল্লিশ - পঞ্চাশ হাত দূরে হবে। রাতের নির্জনতায় পায়ের নুপুর আর হাতের কঙ্কনের শব্দ হঠাৎ কানে পৌঁছালো। শরীরটা ছমছম করে উঠল।
রুপম বলল - “ কি করবি যাবি সামনে”?
আমি উত্তর দিলাম - তোর কি মত?
রুপম বললো- “ চল এগিয়ে যাই, যা হওয়ার হবে”।
আমরা আমাদের মতো করে এগিয়ে চলেছি। মেয়েটিও হেঁটে চলেছে আপন মনে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর মেয়েটা থামল।
আমরাও একটু থামলাম। তারপর বুকে সাহস সঞ্চয় করে এগোলাম সামনের দিকে। আমাদের ভয় বাড়িয়ে, হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি দ্বিগুণ করে মেয়েটি আমাদের দিকে ঘুরলো। একপা দুপা করে এগিয়ে আসতে লাগল আমাদের দিকে। আমি রুপমকে বললাম - এত রাতে এই মেয়েটি কে হতে পারে?
রুপম আমার কথার কোন উত্তর দিল না। আমার হাতটা ধরে দাঁড় করিয়ে দিল। ততক্ষণে মেয়েটিকেও অনেকটা কাছে এসে গেছে।
কিছুটা কাছে আসার পর সেই মেয়েটি শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল - “ আপনারা কারা আগে কখনো দেখিনি”?
রুপম ততক্ষণে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি কাকে জড়িয়ে ধরব ভাবছিলাম। ঠিক তখনই মধুর কন্ঠে প্রশ্ন
করল - “ বললেন না তো আপনারা কারা”?
আমি উত্তর দিলাম - “ আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি, আমাদের আপনি চিনবেন না। কিন্তু এত রাতে আপনি একা এইভাবে ঘুরছেন কেন? আপনার ভয় করে না?
মেয়েটি আমার কথা শুনে এমনভাবে হেসে উঠলো, যে সেই হাসি রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান করে দিল। আমার শরীর তখন ভয়ে কাঁপছে। মেয়েটি উত্তর দিলো - “আমি বিদিশা। আমাকে আপনারা চিনবেন না।
আমি এই গ্রামেরই মেয়ে। আমার বাবা নদী থেকে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তাকে খুঁজতে বেরিয়েছি।”
মেয়েটার কথা শুনেই একটু আশ্বস্ত হলাম। ভাবলাম সত্যি হতো তাই। তারপর প্রশ্ন করলাম - কিন্তু এই রাতে এভাবেই এখানে আপনার ভয় করে না?
মেয়েটি আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো, তারপর বলল - “ ভয়? ভয় বলে কি জিনিস তা আমার নেই।
আপনারা ফিরে যান এদিকে আসবেন না, এদিকে জঙ্গল বড়ই ভয়ংকর। রাতের বেলায় দিকে কেউ আসে না। ওই যে দূরে দেখুন একদল হিংস্র পশু জল পান করছে।”
আমরা দুজন সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম একদল পশু নদীর পাড়ে নেমে জল পান করছে। মেয়েটি আবার বলল- “ ফিরে যাও”।
আমরা ফিরে এলাম। যখন ঘরে ফিরে এলাম ঘড়ির কাটায় তখন রাত দুটো। পরদিন সেই হোটেলের রাধুনী মার কাছে শুনেছিলাম সেই মেয়েটির ইতিহাস। আসলে এই মেয়েটি মানুষ নয়। মানুষের প্রেতাত্মা। বহু বছর আগে ওই জঙ্গলের তীরে মেয়েটি মারা যায়। মারা যাবার এক সপ্তা পর খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তার লাশ।
কুড়ি বছর আগের কথা। লোকের মুখেমুখে আজও সেই কথা সেই গল্প ছড়িয়ে আছে। ঘটনা হচ্ছে ঐ জঙ্গলে কেউ প্রবেশ করতে পারেনা। ওই জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ওই মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মা। জঙ্গলের আরো গভীরে গেলে মিলবে একটা পোড়োবাড়ি। কথাটা শুনে ওই জঙ্গলের গভীরে যাওয়ার জন্য আমাদের মন উদাস হয়ে উঠলো। সেই দুপুরে কিছু শুকনো খাবার আর খাবার জল নিয়ে নদীর তীর ধরে একটু একটু করে এগিয়ে চললাম সেই গভীর জঙ্গলে দিকে। ক্রমে ঘন হয়ে আসছে জঙ্গল। চারিদিক থেকে ভেসে আসছে নানা রকম পাখির কলকাকলি।গা ছমছম করা সেই অরণ্যের মধ্যে হঠাৎ একটা উচ্চ ঢিপি মতন চোখে পড়লো। এগিয়ে গেলাম সেই দিকে। বহুদিনের পরিত্যক্ত একটা বাড়ি ভেঙেচুরে পড়ে আছে । পুরনো দিনের ইট দেখে বোঝা যায় বহু বছরের পুরোনো। সেখানে এখন নানান জংলি গাছে ভরা। সেই ভগ্নাবশেষের উপরে বাসা বেধেছে নাম না জানা কত গাছ। আমরা ঠিক করলাম এখানেই রাত কাটাবো। নিজেদের মতো কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর সেই ভগ্নাবশেষ বাড়িটির চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ আমাদের নজরে এলো একটা সরু পথ এই পথে প্রতিদিন কেউ-না-কেউ চলাচল করে। তা নাহলে এত গভীর জঙ্গলে বহুদিন আগের কোন পথের রেখা থাকতে পারেনা। সন্দেহের তীর দানা বাঁধতে লাগলো আমাদের মনে। একেই রাজার প্রাসাদ বাড়ি তার উপর ঘন জঙ্গল। কোন রহস্য হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কি অপেক্ষা করছে জানিনা। কিন্তু যেখানে এই পথ শেষ হয়েছে সেটা হলো এই বাড়িটার পিছন দিক। এবং সেখান একটা সুরঙ্গপথ। আমরা খুব অবাক হলাম। রহস্য আরো দানা বাঁধল। পথটা যে ভুতের নয় সে কথা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রাতের অন্ধকারে এই জঙ্গলে কি হয় আমাদের দেখতে হবে। ভৌতিক না লৌকিক নাকি মানুষের কার্যকলাপ তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা। গভীর অরণ্যে যখন সন্ধ্যার চাদর নেমে এসেছে। আশপাশটা বেশ ভালো করে দেখে নিলাম। দুজনের থাকার মত আপাত একটা জায়গা বার করে বসে পড়লাম সেখানে। যাতে সহজে কারোর নজর না পড়ে। একটু একটু করে যখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সেই রাত জঙ্গলের ভয়ঙ্কর গভীরতা নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়ালো। ব্যাপারটা যে ভৌতিক নয় সেটা বেশ বুঝতে পারছি। তাই নতুন এক রোমাঞ্চের আশায় মনের মধ্যে উৎফুল্লতা দেখা দিয়েছে। রাত তখন নটা হবে। জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ দেখা দিল আলোর রেখা। মশাল হাতে কে বা কারা এগিয়ে আসছে এই বাড়িটার দিকে। মুহূর্তের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় জন লোক এসে দাঁড়ালো সেই সুড়ঙ্গ পথের সামনে। সুরঙ্গপথ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো। সেই দলে ছিল সাদা কাপড় পড়া শান্ত গলায় সেই মেয়েটি। তার গলার স্বরখুব চেনা। তাদের কথাবার্তা আমরা বেশ শুনতে পাচ্ছি।
একজন বলল - “মালবিকা তুই চলে যা নদীর দিকে। দেখবি কেউ যেন দিকে না আসে”।
সাদা শাড়ি পরা ঘোমটার আড়ালে থাকা বিদিশা যে আসলে মালবিকা একথা আমাদের বুঝতে বাকি রইল না।
মালবিকা জঙ্গলের পথ ধরে টর্চলাইট নিয়ে এগিয়ে গেল।
আরেকজন বলল - “ খুব সাবধানে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করবি। আজ নিশ্চয়ই গুপ্তধনের সন্ধান পাব”
আরেকজন বলল - “ দশ বছর ধরে খুঁজে চলেছি। কাল যে দিকটায় খোঁড়া হয়েছিল আজ সেদিকেই খুঁড়তে হবে”।
অন্য একজন বলল - “দেরি করিস না চল ঢুকে পড়ি”।
লোকগুলোর হাতে ছিল শাবল কোদাল এবং আরো কিছু যন্ত্রপাতি। একজন একজন করে টর্চ নিয়ে ঢুকতে লাগল সুড়ঙ্গপথে। শেষের জন মশাল নিয়ে প্রবেশ করলো। আমরা দুষ্টুমি করার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে পারলাম না। ওরা যখন সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছে, সেই অবসরে আমরা আমাদের খাবার গুলো খেয়ে নিলাম তারপর সাহসের সঙ্গে সেই সুড়ঙ্গ পথের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমাদের কাছে ছিল শক্তিশালী টর্চ। সেটা জ্বালাতেই সুড়ঙ্গের ভেতরটা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো। কিছুটা পথ আমরা এগিয়ে গেলাম সুড়ঙ্গপথে। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর সুরঙ্গ টা দু'ভাগে ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গেছে। আমরা কোন পথে যাব
বুঝতে পারছিলাম না। যাইহোক ডানদিকে ধরে একটু এগোতেই লোকগুলোর কথাবার্তা শুনতে পেলাম।
হঠাৎ একজন চিৎকার করে উঠল - “ পেয়েছি পেয়েছি”।
আমরা ভাবলাম গুপ্তধন পেল। ব্যাপারটা জানার জন্য একটু একটু করে এগিয়ে চলেছি। কিছুটা যাওয়ার পর শুনলাম একজন বলছে - “ দূর গুপ্তধন কোথায় কলসিতে কলসিতে ভরা বহুদিনের নষ্ট হয়ে যাওয়া চাল, ডাল”।
মনে হল লোক গুলো হতাশ হয়ে বসে পড়ল মাটিতে। সেই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করলাম না। আমরা দুজন খনা গলায় চিৎকার করে উঠলাম - “ কা রা রে ও খা ...নে। কে খোঁজে আমাদের গু...প্ত ধন।
হঠাৎ একটা কলরব শুরু হয়ে গেল গুহার মধ্যে। ভূত, ভূত, ভূত ওরে বাবারে বাঁচা রে বাঁচা ………
তারপর কিছুক্ষণ সবাই চুপ। না পেলাম ওদের শব্দ। না করলাম আমরা শব্দ। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার বললাম - “ পালা রে পা লা, পা লা রে পা লা"। বলার পরই ওই সুরঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে এসে আমরা পাশের সুড়ঙ্গে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এবং
দেখলাম আমাদের সামনে দিয়ে পাঁচজনের সেই দল ভয়ে কম্পমান হয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে। আমরা হাসি সামলাতে পারলাম না। খিলখিল করে হেসে উঠেলাম। আর সেই হাসি সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে ধাক্কা খেয়ে বিশ্রীভাবে ফিরে এলো আমাদের কাছে। আমরাও সাবধানে বেরিয়ে এলাম। কাছেপিঠে কোথাও সেই লোকগুলোকে আর দেখলাম না। অনেক দূরে সেই মশালটি জ্বলতে দেখলাম।
বাড়ীটার পাশ দিয়ে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলের দিকে ফিরতে শুরু করলাম। এসে যখন পৌছালাম তখন সাদা শাড়ী পরিহিতা মালবিকা ওরফে বিদিশা জঙ্গলের ভিতর নদীর দিকে আপন মনে হেঁটে চলেছে। রুপম চিৎকার করে ডাকলো - “ বিদিশা বিদিশা”।
অপরিচিত গলার স্বর হয়তো মালবিকা কে অবাক করেছিল। রাতের অন্ধকারে তাকে যে কেউ নামে ডাকবে? একথা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। হয়তো তাই হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। আমাদের দিকে তাকায়। রুপমের হাতের টর্চের আলো তখন পড়েছে মালবিকার মুখে। মালবিকা ওরফে বিদিশা দৌড়ে পালায় জঙ্গলের দিকে।
আমরা ফিরে আসি আমাদের ঘরে। পরেরদিন সকালে আমাদের ব্যাগ পত্র নিয়ে সবুজ ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে আমরা এসে দাঁড়াই বাসস্ট্যান্ডে। সেই লোকগুলি আর কখনো সেখানে গিয়েছিল কিনা আমার আর জানা হয়নি। কিন্তু সেই রাতের সেই মজার রোমাঞ্চকর ঘটনা মন থেকে ভুলেও যায়নি।
0 মন্তব্যসমূহ