উর্মি ও প্রীতিশ এর মধ্যে কোন দেখা নেই, অপরাজিত, পর্ব ১৫

 



প্রায় কুড়ি বাইশ দিন হলো উর্মি ও প্রীতিশ এর মধ্যে কোন দেখা নেই। স্বাভাবিকভাবেই দুজনের মন অস্থির হয়ে পড়েছে। জগতারিণী পুরস্কার এবং ডিলিট পাওয়ার পর তার নিজের গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য কয়েকদিন ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। দেখা করার সময় একদমই হয়ে ওঠেনি যেদিন চাকরির চিঠি এলো বাড়িতে একটা খুশির উৎসব শুরু হল। সকাল থেকে প্রীতিশ ঠিক  করে রেখেছে আজ বিকেলে উর্মির সঙ্গে দেখা করে তবে বাড়ি ফিরবে। সেইমতো প্রস্তুত হয়ে রওনা হলো বিকেলে কিন্তু উর্মিদের বাড়ির সামনে এসে একটু অবাক হলো। গেটে তালা ঝুলছে তবে কি বাড়িতে নেই কেউ? মীরা শুয়ে আপন মনে হাঁটতে থাকে। গুনগুন করে গান গাইছে আর হেঁটে চলেছে আপন মনে। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন একটা হাত টেনে ধরল প্রীতিশ অবাক হয়ে ঘুরে দেখে উর্মি। 

প্রীতিশ অবাক হয়ে বলে - একি তুমি?

উর্মি উত্তর দেয় -  আমি তোমাদের পাড়া থেকে যাচ্ছি আসার পথে দেখি তুমি এদিকে আসছে তাই তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে এলাম।

প্রীতিশ -আমি তো তোমার জন্য এলাম কিন্তু তুমি আমাদের এদিকে কি ব্যাপার? তারপর তোমাদের বাড়িতে তালা ঝুলছে। 

উর্মি- কতদিন হল বলতো? আমি তোমায় দেখার জন্য গিয়েছিলাম। চলনা একটু গ্রীন পার্কের দিকে যাই। 

প্রীতিশ - বাড়িতে কেউ নেই বুঝি?

উর্মি নানা বাবা-মা দুজনেই কলকাতায় পিসির বাড়ি গেছে রাতে ফিরবে। 

প্রীতিশ - চলো আজ আমি তোমায় একটা সুখবর দেব।

উর্মি - তাই নাকি তাহলে তো জোরে পা চালাতে হয়। 

কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুজন গ্রীন পার্কে এসে পৌঁছালো। বিরাট বড় পার্ক চারিদিকে আরো কত লোকজন। গ্রিন পার্কের আর একটা পরিচয় প্রেমের পার্ক। চারিদিকে নানা ধরনের ফুল গাছ ঝাউ গাছ কোথাও বা বসার জন্য বেঞ্চ। পার্কে ঠিক মাঝে একটা দিঘী আছে তার চার ধার দিয়ে ছোট ছোট ফুলের গাছ লাগানো আর রয়েছে সারি সারি বেঞ্চ। দুজন দিঘির পার সংলগ্ন একটা বেঞ্চের উপর বসলো। চারিদিকে ফুল গাছ গুলোতে নানা রকমের ফুল ফুটে আছে। 

উর্মী বলল - এবার তোমার সুখবরটা শুনি।

প্রীতিশ - এখনই বলবো?

উর্মি -তাই না তো কি কখন বলবে? আগে তো সুখবরটা শুনি তারপরে নাহয় অন্য কথা। 

প্রীতিশ- উর্মি আমি চাকরিটা পেয়েছি আমাদের সেই স্কুলে। আজ হাতে পেলাম জয়েনিং লেটার। 

ঊর্মির চোখমুখ আনন্দের নিচে উঠলো আর হুররে বলে চেঁচে উঠল। 

প্রীতিশ - আরে লোকে কি বলবে?

উর্মি- যে যাই বলুক না আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আর এই খবরটা তুমি আমাকে আগে বলনি।

প্রীতিশ - দেখা তো হল এখন বলব তাহলে কখন? আজ সকালে এই খবরটা পেয়েছি তাই ঠিক করেছিলাম বিকেলে জানাবো তোমায়।। 

উর্মি উত্তর দেয় - আমার যদি আনন্দ হচ্ছে না তা বলার নয়। 

প্রীতিশ - আনন্দ আমার হচ্ছে এবার ঘর বাধার পালা। 

উর্মি - আর অপেক্ষা করতে বলো না বাবা মা পিসিকে আনতে গেছে সন্তসের সঙ্গে কথা বলার জন্য। 

প্রীতিশ - এতদূর।

উর্মি -তবে আর বলছি কি। সন্তোষ তো রোজ আসতে শুরু করেছে। ও এলে অবশ্য আমি অন্য ঘরে চলে যাই আর ওর সঙ্গে একদম কথা বলতে ইচ্ছা করে না। আর তুমি তো এতদিন আমায় ভুলে যেতেই বসে ছিলে।

প্রীতিশ হাসতে হাসতে উত্তর দেয় - ভুলে যাব তোমায় আসলে চাকরিটা জন্য খুব ব্যস্ত ছিলাম অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। 

উর্মি - তোমার দিদি চলে গেছে?

প্রীতিশ - ও হ্যাঁ বলাই তো হয়নি দিদি মাকে তোমার কথা বলেছে মা তো খুব খুশি তোমাকে একবার দেখতে চেয়েছে মা। যদি আজ যেতে চাও তো ভালই হয়। 

উর্মি - আজ তাও আবার এই পোশাকে শাড়িটাড়ি পড়া থাকলে ভালো হতো।

প্রীতিশ - তাতে কি মেয়েরা বিয়ের আগে তো শাড়ি খুব কমই পরে আর তুমিও তো আজ ফ্রি আছো তাই বলছিলাম। 

উর্মি আর পিছু হটল না বলে চলো তাহলে l দুজনে আবার হাঁটা শুরু করলো। দুজন দুজনার হাত ধরে এগিয়ে চলে তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিম আকাশে সূর্যদেব বিদায় নিয়েছে। ধীরে ধীরে গ্রামের সবুজ ঘাসপালার ভেতর দিয়ে আঁধারে নেমে আসে। পাড়ায় বাড়িতে বাড়িতে তুলসী মঞ্চে সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বলে ওঠে। শঙ্খের ধ্বনিতে আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হতে থাকে বাড়িগুলি। মনে হয় দুজনকে বরণ করে দিচ্ছে পাড়ার লোক। কথাটা প্রীতিশ হাসতে হাসতে বলেও ফেলে -দেখলে তুমি ধোকা মাত্রই পাড়ার লোক কেমন সংকর ধনিয়ার উলুধ্বনি করতে শুরু করেছে। 

উর্মি এক গাল হেসে বলে-আমি কিন্তু শহর থেকে আসিনি। 

পৃথিশা যখন বাড়ির ঢোকার মুখে এসে দাঁড়ালো তখন তার মা তুলসী তলায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রীতিশ উর্মিকে দেখিয়ে দিল তার মাকে। 

প্রীতিস ডাকলো ওর মাকে - মা ওমা,  দেখো কে এসেছে। 

ওর মা উত্তর দেয় - কে?

উর্মি তাড়াতাড়ি গিয়ে একটা প্রণাম করে। 

প্রীতিশের মা বুঝতে পারে বলে - তুমি কি  উর্মি ? তবে এই সন্ধ্যেবেলা মা লক্ষ্মী ঘরে এলো এসো আমার সঙ্গে ঘরে চলো। 

উর্মিকে কোন কথা বলতে না দিয়ে উর্মির হাত ধরে ব্রিটিশের মা তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল নানা রকমের গল্প। 

কিছুক্ষণ পর উনি উঠে দাঁড়ায় বাড়ি ফেরার জন্য। তাকে বাড়ি ফিরতে হবে কারণ তার বাড়িতে কেউ নেই হয়তো তার বাবা-মা এক্ষুনি এসে পড়বে। তারা বাড়ি ফিরে এসে উর্মিকে না দেখে হয়তো অবাকই হবে। তাই তাদের বাড়িতে ফিরতে হবে। প্রীতিশ উর্মিকে বাড়িতে পৌঁছে দেবার জন্য আবার পথে নামল।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ