সখের মানুষ
অতনু সরকার
জানো, কি করে হলো সে আমার সখের মানুষ?
আমার সামনে তিলে তিলে খাটতে দেখেছি তাকে।
দেখেছি তাকে চৈত্রের রোদে পুড়তে,
দেখেছি বৈশাখের তপ্ত দুপুরে কাজে যেতে
আমি তখন ঘরের মধ্যে গরমে হাসফাঁস।
দেখেছি তাকে নির্দয় হয়ে আষাঢ়ের
বৃষ্টিতে কেমন ভিজছে অনায়াস।
শ্রাবণের অঝোর ধারায় ভিজে ভিজে
বাড়ি ফিরেছে, বলেনি চায়ের কথা।
আবার দেখেছি আশ্বিনের মুক্ত বাতাসে
প্রাণের আবেগে ভেসে যেতে।
ঘাম ঝরছে অনেক,
কোনো দিন বলেনি পারছি না,
এখন ও বলে না।
পুজোতে আমার কিনেছি নতুন জামা
তাকে দেখেছি পুরোনো টা
পরিপাটি করে পরে নিয়েছে।
আমরা জুতো পাল্টে ফেলেছি
অনেক বার, তার পায়ে টা বছর পার।
শীতের রাতে যখন আমি কাবু
সে তখন কাজে ব্যস্ত আমাদের জন্য।
আমাদের কষ্ট হবে ভেবে শীতের ভোরে
ডেকে তোলেনি কখনো।
খুব কাছ থেকে তাকে দেখছি,
আমাদের জন্য কি কঠোর পরিশ্রম
করে চলেছে দিন রাত।
আমি আগে কখনও ফিরে দেখিনি
তার দিকে ভালো করে।
আজ যখন ঘামে ভেজা শরীর টা নিয়ে
ঘরে ফিরে এলো, বসে ছিল মাথা নিচু করে।
দেখছিলাম মানুষ টাকে ভালো করে।
মনের মধ্যে কষ্ট হচ্ছিল খুব।
এমন করে তো কখনও ক্লান্ত হয়ে না।
তাহলে সে ও ক্লান্ত হয়?
কথা বলার সাহস হলো না।
মনে হচ্ছে মানুষের তো কত সখ থাকে
আমার কেনো সখ হয়না এই মানুষ তাকে নিয়ে?
আস্তে আস্তে বসি গিয়ে তার পাশে,
জড়িয়ে ধরি ঘামে ভেজা শরীর টাকে।
বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে তাকে
বলি আজ হতে তুমি আমার সখ।
সিনেমা নাটক দিলাম বিদায়,
বিদায় দিলাম অন্য আরো শখ।
আজ হতে তুমি আমার শখের মানুষ
তুমি ছাড়া নেই আমার অন্য কোনো শখ।
বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে পরম শান্তি পেলাম
শখের মানুষটাকে আজ আরো আপন করে নিলাম।
0 মন্তব্যসমূহ