নবম পর্ব
সকালে কলেজে একেবারেই হই হই পড়ে গেল। নতুন ক্লাসে ওঠার একটা আনন্দ ছোটবেলা থেকে সবারই থাকে। সেই আনন্দের ছাপ পড়লো সবার মধ্যে। বেশ কিছুক্ষণ পর প্রীতিশ আর বেশ কয়েকজন বন্ধুর ভর্তির কাজ শেষ হলো। প্রীতিশ তার প্রদীপ অনেক আগে গিয়ে বসেছিল গঙ্গার ঘাটে। এবার সেখানে এলো ঊর্মি। তিনজনের গল্প বেশ জমে উঠেছে।
প্রদীপ বলে - আমার না মাঝে মাঝে হিংসা হয় তোদের দেখে।
উর্মি উত্তর দেয় - কেন?
প্রদীপ - তোদের প্রেম দেখে।
প্রীতিশ হেসে বলে - তুইও কর না। তোকে তো আর আমরা বাধা দিচ্ছি না।
প্রদীপ - না বাধার কথা আসছে না।
উর্মি - তাহলে ?
প্রদীপ - মনের মানুষকে পাওয়ার দরকার তো নাকি?
ঊর্মি - কেন মৌমিতা তো তোকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু তুই বর…………
প্রদীপ - দেখ ওকে আমার ভালো লাগেনা। মানছি দেখতে ভালো। কিন্তু ওর আচারন আমার একদম পছন্দ হয় না।
ঊর্মি - দেখ এটা তোর ব্যাপার। তবে হ্যাঁ আমি মৌমিতাকে বললে ও নিশ্চয়ই সংযত হবে।
প্রদীপ - না থাক। দরকার নেই।
প্রীতিশ - তাহলে অন্য কাউকে যদি ভালো লাগে তো বল। আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
প্রদীপ - না আমি চাইনা। পরে দেখা যাবে।
প্রীতিশ - তাহলে তো ভালো কথা। দেখিস আবার হিংসা করে বসিস না।
কথাটা বলে ব্রিটিশ খুব হাসতে থাকে।
কিছু দিন পর প্রদীপ আর মৌমিতা কে একসঙ্গে দেখে, কিছুটা অবাক হয়ে ঊর্মি এগিয়ে এসে বলল - কিরে প্রদীপ, মৌমিতার ফাঁদে পা দিলি তো?
প্রদীপ উত্তর দেয় - শুধু তোদের জন্য। তোদের দেখে বড় হিংসা হতো তাই।
ঊর্মি - ভালো করেছিস। স্বয়ং ভগবান যদি প্রেম করতে পারে তাহলে আমরা করতে পারব না কেন?
মৌমিতা - ঠিক বলেছিস উর্মি।
হ্যাঁ কলেজ জীবনের এই প্রেমের মধ্যে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। যৌবনের দারুন উচ্ছ্বাসে কেটে যেত তাদের কলেজ জীবনের প্রতি দিন। এর পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। কলেজের স্মৃতি আজ ইতিহাস। কিন্তু ওদের প্রেম রয়ে গেছে, তাই প্রতিদিন কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারেনা। কিন্তু এখন জীবন প্রতিষ্ঠার লড়াই। চাকরির খোঁজে এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়ায় প্রীতিশ। এদিকে কিছু দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে প্রীতিশের লেখা বিখ্যাত কবিতার বই “তোমার পথ চেয়ে” এবং আরো এক সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়েছে আরও দুটি কাব্যগ্রন্থ “কাবেরী” এবং “নয়ন তারা”।
এই কাব্যগ্রন্থ গুলি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে বেড়েছে তার অনেক সম্মান এবং যশ। কলেজের তরুণ তরুণীরা সব প্রীতিশের ভক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু শুধু লেখার উপর ভিত্তি করে তো আর জীবন চলে না। বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে চাষবাস দেখাশোনা চলতে থাকে। তার মধ্যে চলে তার গৃহ শিক্ষকতার কাজ। এরই মাঝে আবার চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি। এলাকার সকল মানুষের মুখেই ওর নাম। অনেক পরিশ্রমের পর চাকরির আশা ত্যাগ করে ভর্তি হয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কারণ তাদের যা জমি জায়গা আছে তাতে বৈজ্ঞানিক উপায় চাষ করতে পারলে চাকরি দরকার হবে না। বুদ্ধিটা তাকে দিয়েছিলেন তার শিক্ষক। এরপর ঊর্মও তাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে। দু বছরের পাঠক্রম শেষ করে প্রীতিশ নিয়োজিত হয় বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি কাজে। প্রথম বছর প্রচুর ফসল উৎপাদন হলো। লাভ হলো প্রচুর। গ্রামে তার অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলো এই চাষ করার জন্য। না আর কোন চিন্তা নেই। সে এখন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষক বলে নিজেকে পরিচয় দিতে তার কোন দুঃখ বা লাজ লজ্জা নেই । প্রথম বছরই মেজদি সুমিতাকে বিয়ে দেয়। তারপর একটু একটু করে বাড়িঘর ঠিক করে। এর মধ্যেই শেষ করে ফেলেছে তার বিখ্যাত উপন্যাস “চোখের তারা” উপন্যাসটি। বইটি প্রকাশিত হলে লেখক মহলে প্রীতিশের স্থান আরো পাকা হলো। একদিন বিকেলবেলা মাঠের কাজ শেষ করে গুনগুন করে গান করতে করতে বাড়ি ফিরছে আপন মনে। হঠাৎ দেখে বাঁশ বনের একটি মেয়ে দৌড়ে আসছে তার দিকে। পরনে নীল রঙের শাড়ি। একটু কাছে আসতেই বুঝতে পারলো উর্মি। কিন্তু এই অবেলায় তো ওর আসার কথা নয়। একটু বিস্মিত হল প্রীতিশ। ঊর্মি দাঁড়াল প্রীতিশের সামনে, তারপর বলল - তোমাকে ধরার জন্য দৌড়ে এলাম।
প্রীতিশ- কেন এখন আসার কি দরকার?
ঊর্মি - দাড়াও একটু জিরিয়ে সব বলছি। তুমি আজ কাগজে দেখনি বুঝি?
প্রীতিশ - না আজ একদম সময় পাইনি। কিন্তু কেন বলতো ?
উর্মি - আচ্ছা আগে বল বললে কি দেবে?
প্রীতিশ মুখের ইশারায় দেখিয়ে দিল সে কি দিতে চায়।
ঊর্মি লজ্জা পেয়ে বলে - ধ্যাত তুমি না।
প্রীতিশ - হঠাৎ দৌড়ে আসার কারণটা তো আগে বল।
ঊর্মি - আজ সাহিত্য জগৎ পত্রিকায় বেরিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তোমার “চোখের তারা” এবং “তোমার পথ চেয়ে” এই দুটি লেখার জন্য তোমাকে পুরস্কার দেবে। এছাড়া রাজ্য সাহিত্য পরিষদ তোমাকে “সাহিত্য পুরস্কার” দেবে বলে ঘোষণা করেছে। আমি তো দুপুরে দেখেছি কিন্তু তখন আসার সময় পাইনি।
প্রীতিশ বলল - তুমি সত্যি বলছো। ঊর্মি আজ আমার জীবন সার্থক হলো।
ঊর্মি - সত্যি,সত্যি সত্যি।
ফাঁকা জনহীন প্রান্তরে প্রীতিশ আর উর্মি ছাড়া কেউ নেই। বিকেলের বাঁশ বনের মর্ম শব্দ ছাড়া প্রায় চারিদিকে নিস্তব্ধ। বাতাসে উর্মির চুলগুলি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তখন উনি বলল- চলো ফাকা জায়গায় না থাকাই ভালো।
প্রীতিশ বলে- তোমার প্রাপ্তি পুরস্কার নেবে না?
ঊর্মি - তুমি না।
প্রীতিশ এগিয়ে ঊর্মির কাছে গেল, ন তারপর……………………।
0 মন্তব্যসমূহ