অপরাজেয় প্রেম ৮

  অষ্টম পর্ব  




 অষ্টম পর্ব  


দিদির বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল।  চারিদিক নিঝুম। অতি প্রয়োজন ছাড়া পথে কেউ যাতায়াত করে না। একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার ঘটেছে, প্রীতিশ  সেই অঞ্চলে আসার পর চোর ডাকাতের ভয় একটু কমেছে। সত্যি বলতে ও আসার পর একদিনও ডাকাতি হয়নি এই অঞ্চলে। কিন্তু কেন? সে তো আর  জাদু  জানে না। যাই হোক বাড়ির মধ্যে যখন ঢুকলো তখন বাড়িময় পাড়ার মহিলাদের ভিড়।  এর মধ্যে পাড়ার সবাই ব্যাপারটা জানলো কি করে?  পারমিতা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। কে সামলাবে এত সম্পত্তি? প্রীতিশ ঘরে ঢুকে সোজা উপরে গেল।  অভিষেক ঘরে বসে একা পড়ছিল । মামাকে দেখে আরো জোরে পড়া শুরু করল সে। রুপার মা উপরে এসে জিজ্ঞাসা করল।-  হ্যাগা তোমাগো বাড়িতে খবরটা দাও নাই তো? 

প্রীতিশ শান্তভাবে বলল - না। 

রুপার মা আবার বলল - ভ্যালাই করছো। এহন খবর দেওয়া দরকার নাই। তুমি খাইছো কিছু? 

প্রীতিশ - তোমাদের চিন্তা নেই। তোমরা দিদিকে একটু সামলাও।   

রুপার মা - আমি দেখত্যাছি।  

বলে আবার নিচে চলে এলো। 


দশ বছরের অভিষেক নিচে মাকে বিষন্ন অবস্থায় দেখে এসেছে।  কিন্তু সে বুঝতে পারিনি কি হয়েছে।  এবার সে প্রীতিশ কে জিজ্ঞাসা করল -  মামা তুমি কি জানো মায়ের কি হয়েছে?

প্রীতিশ  কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। 

অভিষেক আবার বলল - ও মামা বলো না।  

প্রীতিশ অন্য মনস্ক হয়ে উত্তর দিল - শরীর খারাপ হয়েছে,  মাথা যন্ত্রণা করছে।  

অভিষেক  - ও তাই।  

অভিষেক আবার পড়া শুরু করলো।  নিচে একে একে সব প্রতিবেশীরা বিদায় নিল।  রুপার মা প্রায় সকল সময় পারমিতার কাছে থাকে।  

সকলে চলে গেলেও সে বলল -  বৌঠান তুমি বিশ্রাম করো।  রাতের রান্না আমি কইর‍্যা যাবো।  

পারমিতা -  তুমি যাও আমি করে নেব। তোমারও তো বাড়িতে কাজ আছে। যাও বাড়ি যাও। আর শোন কিছু লাগলে বোলো । 

রুপার মা - আজ লাগবো না।  কাল দুমুঠা চাউল দিও।  

পারমিতা - তা নিয়ে যেও যখন দরকার।  


বিপদে আপদে পাড়ার মানুষের পাশে থাকে বলে পাড়ার সব লোক তাকে ভালোবাসে। একমাস কেটে গেল প্রীতিশ বাড়ি আসার জন্য ছটফট করছে। প্রীতিশ কয়েকবার কলকাতায় গেছে অলোকের কাছে।  কোন ফল হয়নি। অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।  কিন্তু পাড়ার লোক কথা দিয়েছে পারমিতা দির কোন ক্ষতি তারা হতে দেবে না।  তারা সবসময় সবরকম সাহায্য করবে।  এইতো কদিন আগে ধান উঠার সময় পারাময় লোক এসে সাহায্য করেছে।  ব্যাপারটা প্রীতিশের বাবা-মা জেনে গেছে।  শশীকান্তবাবু কুসুমপুরে এলেন প্রীতিশ কে বাড়ি নিয়ে যেতে।  কলেজের রেজাল্ট বের হয়ে গেছে। এক বন্ধু বাড়ি এসে খবর দিয়ে গেছে।  প্রীতিশ পাস করেছে তাই পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়া দরকার। প্রীতিশ ও গুছিয়ে নিয়েছে বাড়ি ফেরার জন্য। নতুন ক্লাসে ভর্তির জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা দরকার। পারমিতা বাবা ও ভাইকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিল।

 

প্রীতিশ যখন বাড়ি ফিরল তখন প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে। পাড়ায় বাড়ি বাড়ি মা মাসিরা সন্ধ্যে দিচ্ছে। প্রীতিশ সবে মাত্র বসেছে ঠিক তখন প্রদীপ এসে খবর দিল কাল নতুন ক্লাসে ভর্তি দিন। প্রীতিশ প্রদীপকে বসালো তার কাছে, তারপর বলল-  হ্যা রে কে কেমন রেজাল্ট করলো? 

প্রদীপ -  আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সবাই ভালো ফল করেছে।  আর তুই তো সবার থেকে বেশি নাম্বার পেয়েছিস।  

প্রীতিশ  প্রদীপের কানে কানে বলল-  ঊর্মির খবর কি ? 

প্রদীপ -  খুব ভালো তবে তোর ধারের কাছে নেই কেউ।  

প্রীতিশ - উর্মি আমার কথা কিছু জিজ্ঞাসা করেনি?  

প্রদীপ -  হ্যাঁ করেছিল। বলেছি তুই এখনো ফিরিস নি।  

প্রীতিশ - কাল তাহলে সবার সঙ্গে দেখা হবে কি বলিস?  

প্রদীপ - কালতো সবাই যাব।  ও হ্যাঁ,  তোকে স্যার দেখা করতে বলেছে।  আর শুনেছিস তুই এবার কলেজের সেরা কবি নির্বাচিত হয়েছিস।  

প্রীতিশ আগে ঊর্মির কাছে শুনেছে, কিন্তু এখন না শোনার ভান করে বলল -  তাই।  

প্রদীপ-  সবাই জানে এ খবর।  এবার তোর সেই প্রেমের কবিতাটা ছাপা দেখবি বাজারে খুব চাহিদা আছে তোর।  

প্রীতিশ -  আর কটা দিন সময় দে।  পুরটা শেষ করি আগে।  মানে এখনো শেষ হয়নি। আগে শেষ করি তারপর দেখা যাবে। 

কথা বলার ফাঁকে প্রীতিশের মা দুটো বড় বাটিতে করে মুড়ি আর চপ নিয়ে এলো। বলল - নে গরম গরম চপ আর মুড়ি,  বেশ ভালো লাগবে। 

প্রদীপ - বাড়িতে ভাজলেন মাসীমা?  

প্রীতিশের মা উত্তর দেয় -  হ্যা বাবা আজ চপ খেতে ইচ্ছা করছিল তাই বাড়িতেই।  আচ্ছা তোরা খা। এখন আমি যাই।   মা কাজের জন্য চলে গেল। দুই বন্ধুতে জমিয়ে চপ মুড়ি খেয়ে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিল। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ