সুতপা

 সুতপা

অতনু সরকার 




মাঘের শেষ। শীত প্রায় যায় যায়। এবার মনে হল শীতটা একটু আগেই চলে গেল। ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা। কাজ থেকে ফিরে দোতালার বারান্দায় চেয়ারটা  নিয়ে বসলাম। মুক্ত বাতাস বয়ে যাচ্ছে শরীরের উপর দিয়ে। এমন একটা নিরিবিলি শান্ত সন্ধ্যা প্রত্যেকেরই দরকার। আমি এখানে একাই থাকি। কর্মসূত্রে আমাকে একা থাকতে হয়। তাছাড়া সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। আমার ও ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে একাকী নিঃসঙ্গ  একটা জীবন। মাঝে মাঝে দুঃখ হয় কারণ বাড়ির পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা একটা একক পরিবার। নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে সন্ধ্যার বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায়। হাজার হাজার তারার ঝিকিমিকি আমার নিঃসঙ্গতা কে ভুলিয়ে দেয়। কখনও চাঁদের সঙ্গে সময় কেটে যায় দৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যমে। সন্ধ্যাতেই কেমন যেন নিস্তব্ধ নীরব হয়ে ওঠে। কবিদের পক্ষে জায়গাটা খারাপ নয়। দুঃখের বিষয় কবিতা আমার আসে না। প্রতিদিনের মতো দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে কত কিছুই না কল্পনা করতে থাকি। হঠাৎ দেখলাম সুন্দরী তন্বী একটি যুবতী এদিকেই আসছে। পাশের লাইট পোস্টের আলোয় তার মুখটা ভালই দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎ যেন চেনা মনে হল। কিন্তু সুদূর দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কে আমাকে চিনবে?  আর কেইবা আমাকে খুজবে? আমার বাড়ি চব্বিশ পরগনা জেলায়। সেখান থেকে নিশ্চয়ই কেউ আমাকে খুঁজতে এখানে আসবে না। বাঁশবনে ঘেরা তেজপাতা বাগানের ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা আরো গ্রামের মধ্যে চলে গেছে। সেই রাস্তার বাঁ দিকে একটা বটগাছ। গাছটা পেরিয়ে  একটু এগোলে আমার বাড়ি।  কর্মসূত্রে এখানে থাকি বলে বাড়িটা  কিনেছি। আমার কর্মক্ষেত্র থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ। সস্তায় পেয়ে গেলাম তাই নিয়ে নিলাম বাড়িটা। সেই মেয়েটি দেখলাম আমারি বাড়ির দরজায় টোকা দিলো। আমাকে হয়তো খেয়াল করিনি।

আমি চিৎকার করে বললাম -  কাকে চাই?

 মেয়েটি আমার দিকে তাঁকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অন্ধকারে ঠিকমতো দেখতে পেল না। তারপর বলল - এটা কি অর্পণ বাবুর বাড়ি?

 এবার আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম ।

আমি বললাম -  আমি অর্পণ,  বলুন কি ব্যাপার?

 মেয়েটি চিৎকার করে বলল -  নেমে এসো সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজছি। আমি বাড়ির আলোয় দেখলাম আমার খুবই পরিচিত আমার পাড়ার একটি মেয়ে। মেয়েটিকে আমি চিন্তা অনেক ছোট থেকে। আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত ও। ওর নাম ছিল সুতপা।

 আমি অবাক হয়ে বললাম -  কিরে  তুই এখানে? আমি যে এখানে থাকি সে কথা তুই জানলি কি করে?  ঠিকানাই বা কোথা থেকে পেলি?

  সুতপা বলল - সব কথা পড়ে শুনবে আমাকে একটু বসতে দাও।

 আমি সুতপাকে আমার বসার ঘরে নিয়ে এলাম। সামনে এগিয়ে দিলাম একটা কাঁচের জলের গ্লাস।

তারপর বললাম -  বস দেখি কিছু আছে কিনা।

ফ্রিজ ঘেটে কিছু পেলাম না। ফিরে এসে বললাম -  না রে খাবার কিছু নেই একটু বসতে হবে।

 সুতপা বলল - তাড়াহুড়ো করছো কেন?  আমি জানি তোমার এখানে কেউ থাকেনা।

 আমি বললাম - বলতো তোর এখানে আসার কারন কি? কি করে তুই আমার ঠিকানা যোগাড় করলি?  

সুতপা গ্লাসের জলটা ঢকঢক করে খেয়ে রাখল টেবিলের ওপর তারপর বলল - অনেক কথা অনেক সময় লাগবে।

আমি বললাম - বল যত সময় লাগে লাগুক।

সুতপা  একটু হাসল তারপর বলল - কোচবিহার কলেজে একটা কাজ নিয়ে এসেছি। হঠাৎ একদিন দেখলাম তোমাকে। তোমার পিছু নিলাম কিন্তু তুমি অফিসে ঢুকে গেলে। তোমার অফিস থেকেই তোমার ঠিকানা টা জোগাড় করে নিলাম। তারপর চলে এলাম এখানে। কিন্তু ভাবছো এই রাতে কেন আমি এখানে এলাম তাই তো?

কিন্তু  প্রশ্নটা তো স্বাভাবিক -  আমি বললাম।

সুতপা - ঠিক বলেছ এখানে আমি এসেছি দুদিন হল। যে বাড়িটায় উঠেছি। এই বাড়িওয়ালা আজ বাড়ি নেই।ওনার  ছেলেটা রয়েছে একা। হঠাৎ ও আমার ঘরে ঢুকলো। আমাকে না জড়িয়ে ধরতে গেল।আমি  ছুটে এলাম বাইরে। কোথায় যাব কি করব বুঝতে পারলাম না তাই এখানে ছুটে এলাম। এবার কি করবো জানিনা।

আমি ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম ওর  চুলগুলো কেমন যেন এলোমেলো মুখে একটা ভয়ের স্পষ্ট ছাপ।

আমি আর ওখানে থাকবো না।রাতটা  কাটিয়ে আমার সব জিনিস নিয়ে অন্য কোথাও  যাব।তুমি আমাকে সাহায্য করতে পার এই আশাতেই এখানে এসেছি।

আমি বললাম - নিশ্চয় আমি তোমাকে সাহায্য করবো কিন্তু একটা অবিবাহিত মেয়ে রাতে একটা অবিবাহিত ছেলের বাড়িতে থাকা সমাজ কিভাবে দেখবে জানিনা।

- কিন্তু অখানে  রাতে নিরাপত্তা নেই । ছেলেটার চোখ দুটো যেন কেমন বীভৎস নিষ্ঠুর । না না আমি ওখানে থাকবো না।

আমি আর কথা বাড়ালাম না বললাম - বেশ তো আমার ওপরের ঘরটায় তুই থাক। আমি নিচের ঘরে থাকবো।

সুতপা বলল -  তোমায় রান্না করে দেয় কে, দেখা শুনা করে কে?

আমি বললাম - আমি নিজেই নিজেকে দেখি। এইতো বেশ ভালো আছি।

সুতপা -  অর্পণদা  তোমার নিচের ঘরগুল ভাড়া  দিতে পারো না?  অচেনা মানুষ তো পাবে। সকাল বিকাল একটু  কথা বলার সুযোগ পাবে।


ভেবে দেখলাম কথাটা মন্দ নয়। ভাড়া দিলে মন্দ হবে না। অন্তত আমি কথা বলার একটা লোক পাবে।

সুতপা – যদি তুমি চাও আমাকে ভাড়া দিতেই পার?

আমি বললাম - বেশ তোমার যখন আপত্তি নেই আমার আর আপত্তি থেকে কি লাভ।

সুতপা বলল -  কি ভাবছো দুজনে অবিবাহিত হলে সমস্যা?

একটু হাসে সুতপা বলল -  তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে কালই চলে আসবো এখানে। জিনিসপত্র বলতে শুধু জামাকাপড় আর  একজন মানুষের  রান্নার সামান্য উপকরন।

আমি বললাম - বেশ তাই হোক কালকেই তাহলে চলে আয়।

সুতপা - রান্নাঘরটা কোন দিকে।

 আমি ওকে দেখিয়ে দিলাম। সুতপা উঠে গেল রান্নাঘরের দিকে। আমি বসে রইলাম ঘরে। বেশ কিছুক্ষণ পর সুতপা দুটো প্লেটে করে চাউমিন করে নিয়ে এলো। আমার ঘরে চাউমিন এর প্যাকেট রাখা ছিল সেটা হয়ত ওর চোখ এড়িয়ে যায় নি। ভালোই হলো দুজনে গল্প করতে করতে খাওয়া যাবে। যখন এক পাড়ায় থাকতাম তখন খুব একটা কথা হতো না। কাজ আর পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। পাশের বাড়ির মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও প্রথম এত কাছ দেখছি আর কথা বলছি। আমি চার বছর হলো এখানে এসেছি। চার বছর আগে তখন ও পড়াশোনা করত। কথা হতো না। আসলে কথা বলার প্রয়োজন হতো না। মাঝেমধ্যে দেখতাম আমাদের বাড়িতে আসতে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে এটুকুই। সুন্দরী তন্বী সুতাকে ভালো লাগে না যদি বলি তবে  নিজের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। কখনো কখনো আমরা আমাদের ভালোলাগা গুলো কি প্রকাশ করি না। কারণ প্রকাশ করার মতো জায়গা তৈরি হয় না। আজও যে প্রকাশ করব সে ভাবনা আমার নেই। এত অসহায় মেয়েকে বাড়িতে থাকতে গিয়ে সেই দুর্বলতার মুহূর্তে আমার ভালোলাগা খারাপ লাগাটা তাকে জানাতে চাই না। তবে একথা ঠিক যৌবনের ধর্ম মেনেই যুবক মন যুবতী মনকেই খুঁজে বেড়ায়। আমি তার ব্যতিক্রম নই ।তার মানে এই নয় যে সুতাপা কে আমার ভালো লাগা জানাতে হবে। জীবনে কত সুন্দরী কে দেখলাম মনে মনে কত ভালোবাসলাম ,কত ভালই লাগলো কিন্তু আপন করে কাউকে কে পেলাম কি? যাকে চাই সব সময়ই তাকে পাওয়া যায়না,  আবার যাকে পাই সেও সবসময়ই নিজের মনের মতো হয় না। একথাও ঠিক আমাকেও তো তার মনের মতো হতে হবে। তবেই তো সেই আমার মনের মত হবে। খেতে খেতে সুতপা বলল – অর্পণ দা বিয়ে করতে পারতো? এতো কষ্ট করে রান্না খাওয়া কি দরকার?

- আমি একা আছি একথা ঠিক। কষ্ট হয়না একথাও ঠিক নয়। কিন্তু এই দূর দেশে অচেনা এক মানুষ কে, কেই বা তার মেয়েকে বিয়ে দেবে। তবে হ্যা  সুযোগ পেলে চেষ্টা করা যেতে পারে।

সুতপা -  তোমার মত ছেলেকে যদি কেউ মেয়ে বিয়ে না দেয়, তবে দেবে কাকে?

আমি -  তোর  ভুল ধারণা। আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি। জীবনের প্রয়োজনে আর বন্ধুত্বের খাতিরে বা  নিঃসঙ্গতা কাটাতে, আমরা কিন্তু একে অপরের পরিপূরক খুজে নেই।

সুতপা - তোমার এ কথা ঠিক কিন্তু এ কথাও ঠিক যারা কাজের খাতিরে নিজের জীবনসঙ্গীনিকে বেছে নিতে পারেন না। তাদেরও বিয়ে হয়। আসলে তুমি চেষ্টা  করনি।

আমি  - হবে হয়তো, চেষ্টা করিনি।

সুতপা - চেষ্টা করতে হবে কেন?  বাড়িতে কাকিমা আছেন উনি তোমার জন্য মেয়ে  দেখাশোনা করবেন।

আমি - বললাম দেখাশুনা নিশ্চয়ই করবেন কিন্তু আমি তো বারণ করেছি ।চারটি বছর একা একা থাকতে থাকতেই কেন জানি না  একাকিত্ব থাকেই ভালোবেসে ফেলেছি। দূরে থাকলে  একটু একটু করে তুমিও তোমার একাকিত্ব তাকে ভালোবেসে ফেলবে।

সুতপা -  আমি একা  থাকতে পারি না। জানেন কলেজে আমি খুব হৈচৈ করি।

আমি কলেজের নতুন অধ্যাপক তাই সকলেই সেটা মেনে নেয়। পুরনো হলে বলবে বেলেল্লাপনা।হয়ত বলবে কিন্তু যত দিন কাটানো যায় আলমগীর আনন্দ করতে ক্ষতি কি।

আমি -  ক্ষতি?  লাভ ক্ষতির অংক আমরা তখনই কসবো যখন জীবন সায়ান্নে দাঁড়িয়ে আর একবার ফিরে দেখব আমাদের জীবনকে।

সুতপা - তুমি খুবই বে রসিক।

আমি  - বললাম তা হয়তো হবে। আচ্ছা যাক সে কথা এখানে কলেজে চাকরি কেমন লাগছে।

সুতপা - এইতো কদিন হল এলাম দাঁড়াও আর কটা দিন যেতে দাও তারপর তো।

গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। ঘড়ির কাঁটা কখন যেন এগারোটার ঘর ছুঁয়েছে। আমি আৎকে উঠে বললাম আরেএগারো টা বাজে খাবার করতে হবে তো।

সুতপা বললে - ও চিন্তা নেই।  আমি আছি আমি আজ তোমাকে রান্না করে খাওয়াই।

 এই বলে ও রান্নাঘরে চলে গেলে, আমি চলে গেলাম  দোতলায় বিছানা করার জন্য। দোতলায় বিছানা করে নেমে এলাম নিচে। দরজার আড়ালে থেকে দেখছিলাম অসামান্য এক সুন্দরী নারীর সদ্য বিকশিত যৌবন। আমি আমার চোখ কিছুতেই অন্যদিকে ফেরাতে পারলাম না। অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। শাড়ীটা  সেই তখন থেকে পরে আছে। এটাই পরে হয়তো ওকে শুতে হবে কারণ আমার এখানে মেয়েদের পোশাক নেই, তাই শাড়ী বদলানোর উপায় নেই। খাবার সাজানো হলে সুতপা ডাকলো। আমি আড়াল থেকে বেরিয়ে ঢুকলাম খাবার ঘরে। অনেকদিন মেয়েলি হাতের রান্না খাওয়া হয়নি, তাই বেশ চেটেপুটে খেলাম।

 সুতপা বলল -  রান্না কেমন হলো বললে না তো

আমি - ভালো না হলে কি চেটে খেতাম।

সুতপা খিলখিল করে হেসে উঠে বলল - রান্নাটা আমি পারি না বললেই চলে কিন্তু কর্মসূত্রে এখানে আমাকে করতে হয়। তাই বলতে পারো একটু একটু করে শিখেছি।

খাওয়া শেষ হলে বললাম - তুমি উপরের ঘরে চলে যাও আমি বিছানা করে রেখেছি। কোন অসুবিধা হলে আমাকে ডেকো। যদিও কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সুতপা হাতের কাজগুলো শেষ করেই উপরে উঠে গেল।

আমিও নিচের ঘরে শুয়ে পড়লাম। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে  যাচ্ছে এক সুন্দরী নারী কে নিয়ে। কত ভাবনা, কত চিন্ত্‌ কত স্বপ্ন যেন কিলবিল করছে মনের মধ্যে। তবু এই সবকে উপেক্ষা করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলতে পারিনা।  একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। আমার গায়ে হাত দিয়ে কে যেন ডাকছে। ঠাণ্ডা শীতল একটা হাত। লাফিয়ে উঠলাম বিছানায়। ঘুম চোখে দেখলাম সুতাপা এসে দাঁড়িয়েছে আমার বিছানার পাশে।

 আমি বললাম -  কি ব্যাপার তুই এখানে?

 - আমার বড্ড ভয় করছে

আমি বললাম -  তুই যখন একা থাকতিস, তখন ভয় করতে না।

সুতপা উত্তর দিল - না তখন ভয় করত না। তোমার ওই উপরের ঘরটা কেমন যেন গা ছমছমে।

আমি বললাম আমার তো কোন দিন মনে হয় নি।

সুতপা বলল - আমাকে তোমার এখানে শুতে দাও। আমি ওখানে একা থাকবো না।

আমি -  তা কি করে হয় তুমি আর আমি এক বিছানায় না না হতে পারে না।

সুতপা আর  কোন কথা না বলে জোর করে ঢুকে পড়ল বিছানায়।

আমি বললাম - তুই এখানে শুয়ে পড়, আমি বরং মেঝেতে শুয়ে পড়ি।

সুতপা - দরকার হবে না।  তুমি একটু সরে  শুয়ে পড়।

যাই হোক আমি পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। পাশে এক সুন্দরী তরুনীকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমুতে যাওয়ার কি যন্ত্রণা, সে কথা পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে বলা যায় না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। হঠাৎই  অনুভব করলাম আমার গায়ের উপর ঠান্ডা বস্তু রয়েছে। ঘুমটা ভেঙে গেল মৃদু জিরো পাওয়ারের আলোয় দেখলাম আমার বুকের ওপর রয়েছে একটা আস্ত বড় কঙ্কালের হাত। পাশেই রয়েছে কঙ্কাল । তাহলে সুতপা,  সুতপা কোথায়?  ভয়েই মুখ থেকে আমার কোন কথাই বের হল না। কেমন যেন ঠাণ্ডা হয়ে ছিল আমার শরীর। তবু চিৎকার করে উঠলাম। মশারির ভিতর থেকে কোনরকমের বেরিয়ে আলোটা জ্বেলে দিলাম। সুতপা বলে উঠলো - কি ব্যাপার চিৎকার করে উঠলে যে ভয় পেলে নাকি?

আমি অবাক হয়ে দেখলাম আমার পাশের সেই কঙ্কালটি কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। সেখানে শুয়ে রয়েছে সুতপা। তাহলে ক কোন  স্বপ্ন দেখলাম।

সুতপা বলল - ভয়ত আমার পাওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনাটি যে উল্টো হয়ে গেল। এসো আমার কাছে এসো।

 আমি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। সুতপা উঠে এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেল বিছানায়। তারপর আমাকে জাপ্টে ধরে বলল - ভয় নেই আমিতো আছি তোমার পাশে। অনুভব করলাম সুতপার শরীর শীতল স্নিগ্ধ গলার স্বর শান্ত। কেমন যেন মরার মত সুতপার দুই বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চোখ বুঝলাম। কখন ভোর হয়েছে জানিনা সূর্যের তীব্র আলো এসে পড়ল আমার গায়ে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ন'টা বাজে। অনেকটা বেলা হয়ে গেছে। এতবেলায় কখনো ঘুম থেকে উঠি নি। প্রথমেই চোখ পড়লো আমার পাশে, অবাক হয়ে দেখলাম সুতপা সেখানে নেই। ভাবলাম হয়তো টয়লেটে বা স্নান করতে গেছে। বাথরুমের দিকে এগিয়ে  যেতেই দেখলাম দরজাটা খোলা বাড়ির সমস্ত ঘর ভেতর থেকেই বন্ধ। তাহলে তাহলে কি উপরের ঘরে। গেলাম উপরের ঘরে কিন্তু সেখানেও ফাঁকা। আবার ফিরে এলাম নিচে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ রাস্তা থেকে একটা চিৎকার কানে এলো একদল জনতা চিৎকার করে কি যেন বলছে। জানালাটা খুলে বাইরের রাস্তার দিকে তাকালাম। অনেক লোক জড়ো হয়েছে সেখানে। একজন চেনা-পরিচিত লোককে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম কি হল রে। লোকটি উত্তর দিল একটি মেয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গেছে। সম্ভবত রাতের দিকে হবে। আমি ছুটে গেলাম সেখানে। দেখলাম সেই আমার পরিচিত সুতপা।  চারিদিকে রক্ত জমাট বেধে কালো হয়ে রয়েছে। সেই চোখ সেই শাড়ি। আমি ছুটে গেলাম ওর কাছে। সুতপা, সুতপা বলে পাগলের মত চিৎকার করলাম। একজন পাশ থেকে বলল আপনার আত্মীয়। আমরা জানতাম নাতো। সত্যিই তাদের জানার কথা নয়। আমার দুচোখে তখন জল।  একজন বলল সন্ধ্যের দিকে এদিকে একটা চিৎকার শুনে ছিলাম, গাড়ির ব্রেক কষার বিকট শব্দও শুনছিলাম। এক ভদ্রমহিলা বললেন কাল সন্ধ্যের দিকে তিনি যাওয়ার পথে দেখেছিলেন একটি ট্রেকার ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। জরুরী কাজ থাকায তিনি এবং তার স্বামী দাঁড়াতে পারেননি। ভেবেছিলেন কেউ না কেউ নিশ্চয়ই উদ্ধার করবে ।মেয়েটি যেভাবে মারা যাবে ভাবতেও পারিনি। সকলের দিকে  হাসপাতাল ময়নাতদন্ত তারপর ওর বাড়িতে মৃতদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করে যখন ফিরলাম তখন রাত দশটা। আগের দিন রাতের এঁটো থালা  দুটি তখনো আমার রান্নাঘরে পড়ে আছে।

সোফায় বসে যখন ভাবছি সেইসব কথা। তাহলে কি আমি মৃত সুতাপা সঙ্গে এক বিছানায় রাত কাটালাম। শরীরটা ভারী হয়ে এলো।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ