দিবা স্বপ্ন

 দিবা স্বপ্ন

অতনু সরকার 




 সকাল থেকে আজ মেঘ করে আছে।  বর্ষা আসব আসব করেও এখনো আসেনি। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ চলছে, হয়তো দু-একদিনের মধ্যে বর্ষার সমারোহ নিয়ে হাজির হবে। গরমের প্রচন্ড তাপদাহ কিছুটা হলেও কমবে। আশা করা যায় যে, রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমটা হবে। পরপর  দু রাত ভালো করে ঘুমাতে পারিনি শুভময়।  সামনে জি বাংলা  ফুটবল লিগ শুরু হবে। খেলাগুলি  সরাসরি দেখানো হবে টিভিতে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য কলেজে পা দেওয়া সময় সুযোগ পেয়েছে জেলা দলে। মনের মধ্যে ভিড় করে আছে  ১৮ বছরের এক অদম্য উচ্ছ্বাস। রাতে চোখ বুজলেই রাশি রাশি স্বপ্ন মনের মধ্যে ভিড় করে আসে। স্বপ্ন আর উত্তেজনায় রাতে ভালো করে ঘুম হয় না সেই সঙ্গে আছে প্রচন্ড  গরম । মাটির বাড়ি টিনের চাল সামনে এক টুকরো উঠোন। এইটুকু সম্বল নিয়ে অনেক বড় হয়ে ওঠার অদম্য প্রয়াস সময়ের মধ্যে । তারমধ্যে জি বাংলা ফুটবল এনে দিয়েছে বড় হওয়ার একটি যোগ্য মঞ্চ। সে স্বপ্ন দেখে তার খেলা সকলেই দেখবে । বাড়ির লোক দেখবে সারা ভারত দেখবে। আর এই মঞ্চ থেকেই সে তার যোগ্যতার প্রমাণ করবে আর উঠে আসবে সকলের নজরে। হুগলি জেলার  সুদূর কোন এক গ্রামের এক তরুণ যুবকের স্বপ্ন সারাদিন ঘুরপাক খেতে থাকে মনের মধ্যে। খেলার দিন যত এগিয়ে আসে, মনের মধ্যে উত্তেজনা আর ভালো খেলার জেদ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ।

 বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়, আম বাগান একটু আগে একটা বড় বটগাছ তারপরে  খেলার মাঠ। ছোটবেলায় খেলার মাঠ থেকেই গড়ে উঠেছিল ফুটবল খেলার স্বপ্ন আর আজ সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার সময় হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে এক চরম উত্তেজনা কাজ  করছে । সব থেকে বড় কথা খেলা চলার সময় হয়তো মাঠে উপস্থিত থাকবে কলকাতার বড় বড় দলগুলির কর্মকর্তা এবং কোচেরা। যদি তাদের নজরে পড়ে যেতে পারে তাহলে হয়তো শুভময় কি আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না।  বাড়ির লোকেরাও টিভির পর্দায় তার খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাড়িতে টিভি নেই। পাশের বাড়ি যাদের টিভি আছে তাদের দু একজনের সঙ্গে বলে রেখেছে অন্তত খেলা চলার সময় যেন তারা সকলে মিলে শুভময় এর খেলাটা দেখতে পারে। পাড়ার মধ্যেও শুভময় কে নিয়ে একটা নতুন স্বপ্ন তৈরি  হয়েছে। শুভময় সেটা বোঝে তাই ভালো খেলার তাগিদে সময়ের আগে অনুশীলনী চলে আসে। জীবনের কঠিন পরিশ্রম সময়ানুবর্তিতা কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা মেনে চলার শিক্ষা তার ছেড়া তাকে  দিয়েছেন। শুভময় সেটা মেনে চলার চেষ্টা করেন প্র্যাকটিসের অনেক আগেই  তাকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। কারণ চুঁচুড়ার যে মাঠে প্র্যাকটিস হয় সে মাট্টা তার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। সুদূর গ্রাম থেকে অনেক কষ্ট করে তাকে  আসতে হয়। 

 বন্ধুদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করার পর ক্লান্ত শুভময় মাঠের এক কোণে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। একরাশ ক্লান্তি তাকে ঘিরে ধরেছে। একটু বিশ্রাম নিয়েই তাকে ফিরে যেতে হবে  বাড়ি। ক্লান্তিতে চোখটা বুজে আসে……………

 হুগলির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে শুভময়। আজ প্রথম খেলা। স্বপ্ন আবেগ উত্তেজনা প্রত্যেকের মধ্যে  চেপে বসেছে ।  জীবনে প্রথম কোনো বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ আর নিজের জেলাকে জেতানোর তাগিদ নিও মাঠে নামে  শুভময় এর দল।  কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় গ্রাম থেকে উঠে আসা বেশির ভাগ ছেলেরাই টেনসনে নিজেদের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারে না। দ্বিতীয় খেলা গুলি থেকে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে শুভময় এর দল। জয়ের স্বাদ খোঁচা খাওয়া বাঘের মতন করে তোলে  তাদের।  একটু একটু করে নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে শুরু করে তারপর গোলের পর গোল আসে তার পা থেকে…...।

 বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তা কোচ খোঁজ নিতে থাকে শুভময় সম্পর্কে তাকে নেওয়ার জন্য তখন হুড়োহুড়ি। শুভময় বাংলা এবং ইন্ডিয়া টিমের ডাক পায়। শুভময় এর চারিদিকে হাজার হাজার দর্শকের চিৎকার বাঁশির শব্দ বিভিন্ন ঝনঝনানি আর মাঝে মাঝে গ্যালারি থেকে উড়ে আসছে শুভময় শুভময় শুভময়  ধ্বনি ।  চারিদিকে শুধু রঙিন রঙিন রঙিন স্বপ্ন ।   যুবভারতীর মাঠে খেলা চলছে অনুর্ধ কুড়ি বিশ্বকাপ সেখানে খেলছে শুভময় বিপক্ষ দল জার্মানি, খেলার প্রথমার্ধেই জার্মানির বিপক্ষে গোল করে বসে শুভময়। গ্যালারি থেকে গগনভেদী চিৎকার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে  শুভময় শুভময় শুভময়...।

 

 হঠাৎ  কে যেন সময়ের পিঠে হাত রাখে।  কিরে বাড়ি যাবি না। শুভময় বাস্তব জগতে ফিরে আসে। চোখ খুলে দেখ তার সামনে সবুজ বিস্তৃত চুঁচুড়া  মাঠ।  সামনে দাঁড়িয়ে আছে বন্ধু সুমন।

 সুমন বলে -  কিরে বাড়ি যাবি না, মাঠে ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?

 উত্তর দিতে পারে না, এতক্ষণে দেখা স্বপ্নটাকে বুকের মধ্যে সম্বল করে রাখে। এই স্বপ্নটাকে তাকে সফল করতেই হবে। জি বাংলা কর্তৃপক্ষ যে সুযোগ তার সামনে এনে দিয়েছে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে  হবে। মাটিতে হাত রেখে শুভময় মনে মনে শপথ করে তাকে হতে হবে ভালো থাকে খেলতে হবে স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে হবে ।  সুমন সবাইকে নিয়ে চলে যায়। এর মধ্যে তখনো স্বপ্নটা দোলা দিয়ে ওঠে। খেলা শুরু এখনো  দুদিন বাকি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ