নীহারিকা

নীহারিকা
অতনু সরকার



গ্রামের আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছি। কবির লেখায় যতটা সুন্দর হয় একটি গ্রাম, এই গ্রামটা তার থেকে বেশি বেশি সুন্দর। চওড়া আল পথের দু'ধারে সারি সারি গাছ।গরমের প্রচণ্ড তাপে তাই এই পথ দিয়ে হাঁটতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। অনেক বছর পরে আমি এই গ্রামে আসলাম। দশ বছর আগের যে গ্রাম দেখেছিলাম, সেই একই গ্রাম দশ বছর পরেও দেখছি। পৃথিবী বদলে গেছে অনেক। বিজ্ঞান এগিয়েছে অনেক দূরে। কিন্তু এই গ্রাম পড়ে আছে তার আপন মহিমায় আপন সৌন্দর্য নিয়ে। গ্রামটি বেশ বড়।চার-পাঁচটা বাড়ি তারপর আবার অনেকটা হাঁটা পথ আবার কয়েকটি বাড়ি আবার হাঁটা পথ। ধান ক্ষেত, আলু ক্ষেত, সবজি ক্ষেত আবার বাড়ি আবার খেত। অদ্ভুত একটা গ্রাম। এখনো এখানে ইটের বা ঢালাই রাস্তা নেই। অজপাড়া গাঁ বলতে যা বোঝায় এ গ্রামটি ও তাই। আরো বেশ খানিকটা পথ আমাকে হেঁটে যেতে হবে। তাই একটু জোরেই হাঁটছিলাম। গ্রামটির মাঝে রয়েছে বিরাট একটা পুকুর। পুকুরের পাশে কয়েকটি বড় বড় তালগাছ আর নারকল গাছ। পুকুর টার নাম তালসারি। তাল গাছের আধিক্য থেকেই হয়তো এনাম হয়ে থাকবে। তালসারি পুকুরের পাশ দিয়ে রাস্তাটা ডানদিকে বেঁকে গ্রামের যে দিকটা এগিয়েছে আমিও সেই দিকেই হেটে চলেছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। ছেলের দল তালসারি তে নেমেছে গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য। উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পুকুরের জলে।ওদের দেখে মনে পড়ে গেল ফেলে আসা কিশোর বয়সের কথা। আমরাও তো কত বিকেলে গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুকুরের জলে গিয়ে পড়তাম। ওদের দেখতে দেখতে হাঁটার গতি কমে এলো। বেশ ভালই লাগছিল পড়ন্ত বিকেলে বিরাট তালসারি টার চারিদিকে দলে দলে ভাগ হয়ে নেমেছে ছেলেরা। গ্রামের চারটি ভাগ উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিম পাড়া এবং পুব পাড়া। গ্রাম টি বড় বলে হয়তো এই ভাবেই ভাগ করা। গ্রামের নাম সোনাঝুরি। আমার এক বাল্যবন্ধু সৌম্য সোনাঝুরি তে থাকে। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় স্কুল জীবনে। শহরের স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিল ও। বোধহয় ওর মাসির বা পিসির বাড়িতে থেকেই হবে। পড়াশোনা শেষ করে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছিল ও। তারপর ফিরে যায় নিজের গ্রামে। না চাকরির খোঁজ ও করেনি। নিজেদের অনেক জমিজমা ছিল সেই জমি জায়গা গুলোতে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চাষ করছে। আর এর মধ্যে দিয়ে অন্যতম সেরা চাষীদের পরিণত হয়েছে ও। মূলত সৌম্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এখানে আসার জন্য। ভাবুন এই সেই গ্রাম যেখানে আজকের মত আধুনিক যুগেও ফোনের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। এই অজপাড়া গাঁয়ে ফোন থাকলেও ফোনের টাওয়ার পাওয়া যায় না। মোটামুটি ভাবে বলা যেতে পারে ফোনের ব্যবহার অনেকটাই কম।তাই গ্রামে গিয়ে বন্ধু কে ফোন করতে পারলাম না। একে ওকে জিজ্ঞাসা করে ওর বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে একেবারে ঢলে পড়েছে। সন্ধ্যা দেবী তখন একটু একটু করে উঠে আসছে গ্রাম্য প্রকৃতির বুকে। মায়ের আঁচলের তলায় ছোট্ট শিশুটি যেমন আশ্রয় নেয়, তেমন সন্ধ্যা দেবীর বিরাট আঁচলের তলায় এই গ্রামটি একটু একটু করে আশ্রয় নিতে থাকে। দীর্ঘ শহর জীবনের গতিময় জীবন থেকে যখন এমন একটা শান্ত সুশীতল গ্রাম্য পরিবেশে এলাম সত্যিই নিজেকে যেন অন্য রকমের বলে মনে হল। মনে পড়ে জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার কথা। সন্ধ্যার আকাশে একটা দুটো করে তারা দেখা দিয়েছে। আমি ওদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। ঘরে ঢুকে ব্যাগটা রেখে আবার বেরিয়ে পড়লাম সন্ধ্যাকালীন বাংলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। কখন যে আমার পাশে সৌম্য এসে দাঁড়িয়েছে জানিনা। আমার পিঠে হাত রেখে বলল-কি দেখছিস একা একা?
একটু ভয় পেয়ে গেলাম তারপর সৌম্য কে দেখে বললাম-দেখছি তোদের গ্রাম। গ্রামের সৌন্দর্য। কি যেন এক অদ্ভুত মাদকতা নিয়ে গ্রামটি দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর বুকে।
সৌম্য হাসতে হাসতে বলে- আমি তো ভেবেছিলাম তোর ভাল লাগবে না। তোদের শহরে জীবনের সঙ্গে আমাদের গ্রামের কোন মিল নেই। একেবারে অজপাড়া গাঁ।
আমি বললাম- এমন গ্রাম এমন সৌন্দর্য আগে কখনো দেখিনি। অনেক ছোটবেলায় একবার এসেছিলাম তখন এত কিছু বোঝার চোখ ছিল না।
সৌম্য বলল -চল ঘরে চল। কিছু খাবি চল কখন বেরিয়েছিস তার ঠিক নেই।
কোন কথা না বলে সৌম্যর সঙ্গে ওর বাড়ির দিকে হাঁটলাম। খিদে যে একটু পেয়েছিল একথা সত্য। সৌম্যর বয়স আমার বয়সীই হবে ।সদ্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বাড়ি ফিরেছে। বাড়িতে বাবা মা আর এক বোন আছে।আর আছে ওর কাকা কাকিমা। ওদের পরিবার মোটামুটি একটা বড় পরিবার। গ্রামের মধ্যে হলেও ওদের বাড়িটা দোতালা। আরো কয়েকটি পাকা বাড়ি এখানে আছে। এদের জমিজমার পরিমাণ অনেকটাই। চাষের পরিমাণ ও বেশি। সন্ধ্যার জলখাবার খেয়ে সৌম্য আর আমি দোতালায় ছাদে গিয়ে বসলাম। সবুজ ধান ক্ষেত এর উপর দিয়ে তখন সন্ধ্যার বাতাস বয়ে নিয়ে আসছে ধানের মিষ্টি সুবাস। শুধু ধান ক্ষেত আর মাঠ আর অনেক দুরে দুরে আলো দেখা যাচ্ছে রয়েছে কয়েকটি জনবসতি। সেখান থেকে জোসনা পোকার মত জ্বলছে। কি অদ্ভুত একটা রাত। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার রাত। গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। গল্পের মধ্যে উঠে এলো সৌম্যর ছোটবেলার প্রেমিকার কথা। সৌম্য কেমন যেন একটা আনমনা হয়ে গেল।
আমি বললাম -কিরে সৌম্য কোন উত্তর দিচ্ছিস না যে?
সৌম অনেকটা চুপ থাকার পর বলল- উত্তর দেবার মত ভাষা তো নেই। কি উত্তর তোকে দেবো বলতো?
মনের মধ্যে একটা কৌতুহল জেগে উঠলো তবুও সেটা কোনো রকমের সংবরণ করে নিয়ে বললাম-ব্যাপারটা কি একটু খুলে বল তো দেখি।
সৌম্য গম্ভীর মুখে বলল-কি হবে শুনে। জীবনের কত কিছুই তো হারিয়ে যায় কালের অন্ধকারে। এ ঘটনা তেমনি ধরে নে না।
আমি নাছোড়বান্দা বললাম- কি হয়েছে বলনা শুনি একটু। 
সৌম্য বলল - চল খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে শুয়ে অনেক কথাই বলব। অনেকদিন পরে আসলি কত কথা জমে আছে ঠিক নেই।

দোতালার যে ঘরটায় সৌম্য থাকে সেখানেই আমারও শোয়ার ব্যবস্থা হল। খাওয়া-দাওয়া করে চলে এলাম দুজনে শোবার জন্য। তারপর দুজনে শুয়ে শুয়ে কত গল্প। সেই গল্পের মাঝে উঠে এলো নীহারিকার কথা। নীহারিকা সৌম্যর বাল্য বয়সের প্রেম। একই গ্রামের এ পাড়া আর ও পাড়ায় থাকত ওরা। স্কুল জীবনে কতবার শুনেছি নীহারিকার কথা ঠিক নেই। নীহারিকার কাছেও ও আমাদের কত কথাই বলত।মাঝে মাঝে নীহারিকা চিঠি লিখে আমাদের সঙ্গে কথা বলত সে অনেক কাল আগের কথা। তখন স্কুলে পড়ি। সৌম্য যখন বাড়ি যেত তখন একটা করে চিঠি নিয়ে আসতো নীহারিকার। উল্টোদিকে আমরাও সৌম্য র বাড়ি যাওয়ার সময় একটা করে চিঠি লিখে দিতাম। সেইসব চিঠিতে থাকত ভাল মন্দ নানান কথা ,পড়াশোনার কথা, গ্রামের কথা।
আমি বললাম-কি হয়েছে এবার বল দেখি।
সৌম্য আস্তে আস্তে বলতে থাকে-চার পাঁচ বছর আগের কথা। আমাদের খেতের পাশে দশ বিঘা জমি আছে ওদের। বর্ষাকাল ওর বাবা গিয়েছিল মাঠে চাষের কাজে।দুপুরবেলা ওর বাবা আর দাদার জন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে বেরিয়ে ছিল। খাবার দিয়ে যখন ফিরছিল তখন প্রচন্ড বৃষ্টি। আষাঢ় মাস ঘন কালো মেঘ জমেছে আকাশে। বজ্র বিদ্যুৎসহ মুষলধারে বৃষ্টি নেমে এলো। হঠাত করে বৃষ্টিটা এসেছিল। ওর কাছে বৃষ্টি নিবারণ এর কোনো উপায় ছিল না। ওড়নাটা মাথায় জড়িয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি ফিরছিল নীহারিকা। সেই সময় ঠিক সেইসময় মাঠে পড়লো বাজ। স্তব্ধ হয়ে গেল নীহারিকার জীবন। বাজ ওর গায়ের পাশেই পড়েছিল। শেষ হয়ে গেল নীহারিকা। শেষ হয়ে গেলাম আমি আর আমার প্রেম।
এই সামান্য কটা কথা বলতে বলতে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। কানের পাশ দিয়ে সেই জল এসে পড়ছে বালিশে। আমি কি বলব বা আমার ঠিক কি বলা উচিত এটাই আমি ভেবে উঠতে পারছিলাম না। কোনোক্রমে সামলে নিয়ে বললাম- চোখ মুছে ফেল। এটাই জীবন এটাকে মেনে নিতে হবে।
সৌম্য চোখ মুছতে মুছতে বলল -আর একটা আশ্চর্য ব্যাপার কি জানিস?
আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কি?
বিষন্ন মুখে সৌম্য বলল- আজও ওই তালসারি ধারে রাতের অন্ধকারে নীহারিকাকে দেখা যায়। মাঠের আলপথ ধরে উড়ে চলেছে সে। জানিস কত লোকে ওকে দেখেছে। তালসারির পাড়ে যে জায়গাটায় আমরা বসে কথা বলতাম, সেখানে জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে দেখেছে অনেকে। নীহারিকা সুন্দরী ছিল তাই সকলেই তাকে চিনতো। 
আমি আরো একটু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- তুই কখনো দেখিস নি?
সৌম্য তেমনি শান্ত গলায় বলল -আমার যাওয়ার সাহস হয়নি রে আমি যেতে পারিনি?
আমি সৌম্য কে জিজ্ঞাসা করলাম- নীহারিকা সঙ্গে তোর প্রেমের কথাটা তো বাড়ির সকলেই জানত তাই না?
সৌম্য মাথা নেড়ে জানালো , হ্যা।
আমি আগ্রহভরে বললাম-তোর যেতে ইচ্ছা করে না কখনো? দেখতে ইচ্ছা করে না তোর নীহারিকা কে?
সৌম্য বলল- দেখতে ইচ্ছা করে জানিস খুব দেখতে ইচ্ছা করে কিন্তু সাহসে ভর করে এগিয়ে যেতে পারি না।
আমি ওকে সাহস দিয়ে বললাম- আমার সঙ্গে যাবি, পারবি তুই আমার সঙ্গে যেতে?
আমার কথাটা শুনে সৌম্য কোন উত্তর দিল না। আমিও কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম ওকে ভাবার সময় দিলাম।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সৌম্য বলল - যাবো। খুব দেখতে ইচ্ছা করে ওকে। সাহস কুলায় না। 
আমি বললাম - কাল কে তালসারি যাবো। দেখব জায়গাটা কেমন। কোথায় বসে থাকে তুই জানিস?

সৌম্য - না। শুনেছি। দক্ষিণ দিকের ঘাটে।

আমি কিছুক্ষণ কাপ করে থেকে বললাম - বেশ তো আগামী মঙ্গলবার রাতে যাবো। সাবধান কাউকে কিছু বলবি না। চল এখন ঘুমিয়ে পড়ি।
সৌম্য - তাই ভালো। 
দুজনে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু বহুক্ষণ ঘুম এলো না। তারপর কখন ঘুমিয়েছি জানি না। 

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো সৌম্যর বোনের ডাকে। সৌম্য কখন ওঠে মাঠে চলে গেছে জানি না। আমাকে ডাকেনি। ডাকলে ওর সঙ্গে যেতাম মাঠে। সৌমি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। কারণ ওর সাথে আমার আগে কখনও কথা হয়নি। এমন কি কাল কেও কোনো কথা হয়নি। যায় হোক। সকালের ঘুম ভাঙ্গলো সৌমির ডাকে।
সৌমি আমাকে ডেকে তুলে আমার সামনে জল আর চা দিয়ে চলে গেলো। একটু পরে আমি নিচে নেমে এলাম। মাসিমা কে বললাম - মাসিমা, সৌম্য কে কোথায় পাবো। আমাকে না নিয়ে চলে গেল।
মাসিমা উত্তর দিলেন - তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে, তাই তোমাকে আর ডাকেনি।

আমি - তাহলে আমি একটু মাঠের দিকে যায় দেখি ও কি করছে। একা বসে কি করবো।

আমার কথা শুনে মাসিমা সৌমিকে ডেকে বললেন - সুমি, যা তো মা ওকে আমাদের দক্ষিণ বিলের জমিতে তোর দাদার কাছে দিয়ে আয়। বেচারা বাড়িতে একা কি করবে। 
পাশের ঘর থেকে উত্তর এলো - একটু দাঁড়াতে বল। যাচ্ছি। 

আমি আর সৌমি সকালের ফাঁকা মাঠের আল পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। কেউ কোনো কথা বলছিলাম না। আমি নীরবতা ভেঙে বললাম – আপনাকে কি বলে ডাকবো সৌমি না সুমি। 
সৌমি হেসে বলল - যা ইচ্ছা। সৌমি আমার ডাক নাম। আপনি যা ইচ্ছা বলে ডাকতে পারেন।

আমি বললাম - কি নিয়ে পড়ছ।
সৌমি - এম এ করছি। এই বছরই শেষ হবে।
আমি - ওরে বাবা। তাহলে তো আপনার থেকে সাবধানে থাকতে হবে। আমি তো ইংরাজি কিছু বুঝি না।

সৌমি - দাদার কাছে আপনার কথা সব শুনেছি। আপনি আমায় লজ্জা দেবেন না। আমাদের বাড়িতে আপনি এসেছেন আমার খুবই খুশি।
আমি - আমি তোমার দাদার বন্ধু তো, তাই কিছু বাড়িয়ে বলেছে হয়তো।

সৌমি - আপনি দাদা কে যে চিঠি দিতেন সেগুলো আমার কাছে আছে। চিঠি যে অমন সুন্দর হতে পারে টা আমার জানা ছিল না। চিঠি না সাহিত্য সেটা নিয়ে আমার বন্ধু দের সাথে আলোচলা করতাম। 

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম - মানে।

সৌমি - মানে ওই চিঠি গুলো দাদার থেকে লুকিয়ে নিয়ে আমি বন্ধু দের পড়ে শোনাতাম। চিঠিতে অমন বাংলা ভাষার ব্যবহার আমাকে আকৃষ্ট করত। তখন ভাবতাম যে এত সুন্দর লেখে সে নিশ্চয়ই খুব সুন্দর।
কথা টা বলে সৌমি হাসতে থাকে। 
আমি লাজুক চোখে তাকালাম ওর দিকে। তারপর বললাম - তাহলে এখন ভুল ভাঙ্গলো তো। লেখা সুন্দর হলেও মানুষটা সুন্দর না হতে পারে। 
সৌমি এবার একটু লজ্জা পেলো। বলল - না, আপনি আমার ভাবনার থেকেও সুন্দর। 
কথা টা বলেই সনের দিকে দৌড় দিল। আমি আপন মনে হাটতে লাগলাম। হঠাৎ দেখলাম সৌমি আলের ওপর পড়ে গেল। আমি দৌড়ে গিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম। সে বলল - মনে হয় পা মচকে গেছে। ওই গর্ত টা তে পা পড়ে …..
আমি দেখলাম কোথাও ফলা নেই। মনে সামান্য একটু লেগেছে। আমরা যারা খেলা ধুলা করি তাদের কাছে এটা কোনো ব্যাপার না। আমি ওর পায়ের পাতা টা ধরে একটু চাপ দিলাম। ও একটু ব্যাথা পেলো ঠিকই কিন্তু উঠে দাড়ালো। আমি বললাম চলো আমি সাহায্য করছি। দু এক পা আমার কাঁধে ভর দিয়ে হাটার পর বলল - এবার ঠিক আছে। আপনি কি ডাক্তার নাকি।

আমি - ধুর। আরে আমাদের খেলতে গিয়ে এমন কতবার হতো। 
সৌমি - আপনার কাঁধে তাহ রাখলাম। গ্রামের কেউ দেখলে রক্ষা নেই। 

আমি চারিদিকে তাকিয়ে বললাম - এখানে কেউ নেই। 
 সৌমি - জানি মশাই। না হলে আমি আপনার কাঁধে ভোর দিতাম না। বসে থাকতাম ওখানে।

আমি হেসে বললাম - আমি কিন্তু বলে দেবো সবাই কে। 
সৌমি - বলুন। এই যে খেলোয়াড় মশাই ওই দেখুন আপনার বন্ধু মাঠে চাষ করছে। যান।

আমি - আপনি যাবেন না। 
সৌমি - আমি তো চাষীর বোন। আমাকে কে কি কেউ পাত্তা দেবে। যান আপনি যান আমি ঘরে যায় না হলে মা আবার একা পারবে না। 
আমি বললাম - কিন্তু আপনি একা এতটা পথ যাবেন।

সৌমি - পৌঁছে দেবেন নাকি। (হাসতে থাকে) আচ্ছা আপনি যান। এখানে আমার কোনো ভয় নেই। ওই দেখুন মাঠে কত লোক আসছে। 
আমি তাকালাম পিছনে। সত্যি অনেকেই মাঠে আসছে যে যার জমিতে কাজে নেমে যাচ্ছে।
আমি বললাম - আপনার পায়ের ব্যথাটা?
সৌমি - চিন্তা নেই ডাক্তার ভালো। রোগ সেরে গেছে।
কথা টা বলে মুচকি হেসে চলে গেলো। আর ফিরে তাকালো না। আমি ওর চলে যাওয়া দেখছিলাম। কতক্ষন জানিনা। হঠাৎ কাঁধে একটা হাত পড়তেই সম্বিৎ ফিরে পেলাম। সৌম্য এসে দাঁড়িয়েছে আমার পিছনে। সে বলল - কি রে কখন আসলি? এখানে চিনলি কি করে?
আমি - সৌমি দিয়ে গেলো। 
সৌম্য হেসে বলল - ওদিকে দেখছিলি?
আমি লজ্জা পেয়ে বললাম - মাঠে ওরা কি ভাবে কাজ করছে তাই দেখছিলাম। 
সৌম্য একটু হাসলো বলল - এটা গ্রামের জীবন। এ আমার সাথে। 
আমি ওর সাথে গেলাম। ও সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল - এই সামনের বড় মাঠ পুরোটাই আমাদের। এখানে ত্রিশ বিঘা জমি আছে। বাকি আছে অন্য মাঠে।
আমি বিস্ময়ে বললাম - অনেকটা বড়। সব কি একাই দেখিস? 
সৌম্য - ধুর অনেক লোক আছে। এখন তো সবে ধান ফলতে শুরু করেছে। তাই লোক কম। এমনিতে শর বছর পাঁচ - ছয় জন কাজ করে। কিন্তু যখন ধান বা অন্য় ফসল ওঠে তখন কুড়ি পঁচিশ জন লাগে। মোট সত্তর বিঘা টে ধান হয়। দু ফসলি জমি। আমার চাকরি করে কি লাভ। আর বাকি জমি তে সবজি চাষ হয়। আমাদের কিনতে হয়না কিছু। 
আমি বললাম - দারুন ব্যাপার তো তাহলে। আমি খুব খুশি। যে তুই অন্তত কারোর গোলামী করছিস না। 
সৌম্য হাসলো, তারপর বলল - আয় মাঠ টা ঘুরে দেখাই। একটা জমি তে জল দিয়ে চলে যাব।
আমি দু চোখ ভরে দেখছিলাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য। কাব্য আমার আসে না। কিন্তু মনে মনে কত কবিতা ঘুরতে লাগলো। 

সকাল দশটায় মাঠ থেকে ফিরে এলাম। উঠোন পা দিতেই সুমি চিৎকার করে বলল - দাদা তোর নতুন চাষি বন্ধুকে নিয়ে খেতে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি। 
সৌম্য - সুমি কি হচ্ছে কি এসব। 
আমি জোরে বললাম - আপনিও একটু শিখিয়ে দেবেন। 
সুমি এবার বেরিয়ে এসে বলল - দাদা কিন্তু ভালো শিক্ষক। জানেন কত লোক আসে শিখতে।
আমি - সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনার দাদা আমাকে শেখাবে না। যদি আমিও চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে আসি, সেই ভয় আছে।

সুমি - আমরা মশাই ভয় পাই না। আপনাকে সব সময় সাহায্য করব। কবে আসবেন চাকরি ছেড়ে।

মাসিমা ভিতর থেকে বলল - কি হচ্ছে সুমি। দাদার বন্ধু তো। কি যা ইচ্ছা বলছি।

সুমি - বা রে আমি খারাপ কি বললাম।

আমি - মাসিমা, বলতে দিন। সৌম্য এর থেকে জেনেছে মনে হয় শহরে থেকে ট্রেন জার্নি করে চাকরি করা কতটা কঠিন। 

সুমি আর কিছু বলল না। কথা বলতে বলতে আমাদের প হাত মুখ ধোয়া হয়ে গেল। 
সৌম্য বলল - আয় খেতে আয়। তোর বোধ হয় দেরি হয়ে গেল খেতে?
আমি বললাম - না রে ঠিক আছে। এমন সবুজ ধান ক্ষেত, সবুজ প্রকৃতি দেখে খিদে ভুলে গেছিলাম।
সুমি চট করে বলল - যা, আর কিছু ভুলে যাননি তো?
সৌম্য - কি হচ্ছে সুমি। তখন থেকে ওর পিছনে পড়েছিস। হ্যাঁ রে ওর কোথায় কিছু মনে করিস না। আসলে ও খুব মজা করতে ভালো বাসে। কিন্তু জানে না সে টা কার সাথে করতে হয়। 

সুমি - আমার মনে হয়, উনি কিছু একটা ভুলে গেছেন।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। 
সুমি বলল - আপনার ঘড়ি টা হাত মুখ ধোয়ার সময় কল ঘরে রেখে ছিলেন। আর বোধ হয় মনে ছিলনা। 

আমি - তাইতো। 
সুমি - আপনার ঘরে রেখেছি। 
আমি - ধন্যবাদ আপনাকে।
সৌম্য - আপনি কে রে। তুই ওকে আপনি করে বলছিস। আর সুমি তুই একবার ও প্রতিবাদ করছিস না। এই তুই করে বলবি। আর সুমি তুই ও কি আপনি আপনি করছিস নাকি। 
সুমি - কি করবো তোর বন্ধুই তো আমাকে আপনি আপনি করছ। টা আমার আর কি দোষ।

আমি বেচারা পড়লাম মুশকিলে আপনি থেকে তুই। 
সৌম্য - যা রুটি নিয়ে আয়, আর তোর থালা টাও আনবি। 
সুমি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল - দাদা মশাই তোমায় কি আর একটু তরকারি দেবো?
সৌম্য - সুমি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। 
আমি হেসে বললাম - ঠাম্মা তরকারি টা খুব ভালো হয়েছে একটু বেশি দিলেও ক্ষতি নেই।
সুমি - ঠাম্মা?
কপট রাগ দেখিয়ে চলে গেলো রান্না ঘরে। 
সৌম্য জোরে বলল - দেখ এবার কেমন লাগে।

খুনসুঁটি চলতে থাকে। আমারও খারাপ লাগে না। দেখতে দেখতে তিন দিন হয়ে গেল। সকালে ক্ষেতে আর বিকেল বেলা সারা গ্রাম ধুর বেড়াতাম। মাটির রাস্তা, দু ধারদিয়ে বড় বড় গাছের সারি। কোথাও বড় বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়ে রাস্তাটা একেবেঁকে চলে গেছে। বর্ষা কালে এ রাস্তা দিয়ে চলা যে মুস্কিল টা বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু আমরা যারা শরের ইটকাঠ পাথরের জীবনে অভ্যস্ত তাদের কাছে এ গ্রাম নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। জীবনের খেয়া তৈরি বাইতে বাইতে জানি না কোথায় গিয়ে পড়ব। এখন একাকী জীবনের রঙিন দিন গুলো তাই উপভোগ করতে পিছুপা হই না। জীবন বড় বিচিত্রময়। হয়তো তাই কোন এক অমোঘ টানে ছুটে এসেছি এখানে। আর এখানে না এলে এই সুন্দর গ্রামটি দেখা হতো না। দেখা হতনা রূপসী বাংলা। 

আজ সোমবার। শুক্লা পক্ষের বাঁকা চাঁদ আকাশকে আলোক মালায় সাজিয়ে দিয়েছে। কালী পূজোর রাতে যেমন বাড়িতে আলোক মালা দিয়ে সাজানো হয় তেমনি কেউ মনে হয় সারা আকাশ টা সাজিয়ে দিয়েছে। ঝিকমিক করছে হাজার হাজার তারা। তার মাঝে কোথাও কোথাও সাদা সাদা মেঘ উড়ে চলে মুক্ত ডানা মেলে। রাত তখন দশটা। আমি খেয়ে উপরে চলে এসেছি। আজ আমি একা। সৌম্য আজ ওর এক আত্মীয়র বাড়িতে গেছে। ফিরবে কাল দুপুরে। কাল কে আবার রাতে তালসারী যাবো।
আজ আমার ঘুমানোর তারা নেই। একটা চেয়ার নিয়ে বসে বসে দেখছিলাম রাতের এই অপূর্ব রূপ। এখন বেশ মনোরম বাতাস বইছে। দূরে ধান ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে এক দল শিয়ালের ডাক আসছে। ঠিক তখনই পিছন ফিরতেই চমকে গেলাম। মুহূর্তে আমার হৃদ স্পন্দন থেমে যাওয়ার যোগাড়। আমার ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে এক রমনী। কে নীহারিকা ? নাকি অন্য কেউ? মুখ দিয়ে কথা বেরোল না। সেও আমার মত তাকিয়ে আছে দূরে। তাহলে কে। মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে বললাম - কে? কে তুমি? 
শেষের কথা গুলো কেমন যেন অস্পষ্ট হয়ে গেলো।
আমার কথা শুনে হঠাৎ সেই রমনী হেসে উঠলো। হালকা নরম হাসি হলেও সেই নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভেদ করে দ্বিগুণ হয়ে ফিরে এলো আমার কানে। 

তারপর সে বলল - ভয় নেই। আমি সুমি।
আমি - তুমি সুমি। কিন্তু এত রাতে, এই ছাদে? তোমার ভয় করে না।
সুমি - ভয়? ভয় তো করে। কিন্তু আজ করছিল না। এসেছিলাম তোমাকে একটা কথা বলবো বলে। কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখলাম তুমি নেই। তখন ছাদে এলাম। দেখলাম তুমি তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছো। ভাগ্যিস শিয়াল গুলো ডাকলো, না হলে তো এদিকে তাকাতে না।
আমি বললাম - সুমি তোমার কিন্তু এত রাতে এখানে আসা ঠিক হয়নি। হাজার হোক আমি তোমার দাদার বন্ধু।
সুমি - আমরা গ্রামের মেয়ে। সহজ সরল যেমন তেমন মানুষ চিনতে ভুল করি না। আসলে তুমি আসার পর থেকে আমি তোমাকে অনেক জ্বালাতন করছি। তাই ভাবলাম একটু ভুল স্বীকার করে আসি। না হলে আমার সম্পর্কে একটা বাজে ধারণা নিয়ে যাবে তুমি। 
আমি বললাম - আর না আমি কিছু মনে করিনি। আমি তো বেশ উপভোগ করছি ব্যাপার টা।
সুমি - মা বলছিল তুমি নাম করা মানুষ তোমার সাথে যেন আর অমন করে কথা না বলি। কাল থেকে হয়তো সেই ভাবে আর কথা বলা হবে না। তাই বলে গেলাম। কথা না বললে আবার বলবেন আমি অহংকারি। কোথায় যায় বলুন তো।
আমি - তোমার মা বলেছে আমি নাম করা মানুষ, আচ্ছা আমার ব্যবহারে কি তার কোনো চাপ আছে। আমি তো কোনো নাম করা মানুষ নই। সাধারণ আর পাঁচ জনের মতো আমার জীবন। 
সুমি - তোমার যত ছবি কাগজে বেরোত, দাদা এনে রাখতো। সেগুলো দেখতাম। তখন থেকে ভাবটা। তোমাকে একবার সরাসরি দেখব। 
আমি - তোমার দাদার পাগলামি। আসলে আমরা ছিলাম খুব কাছের বন্ধু।
সুমি - জানি। দাদা সব সময় তোমার কথা বলত।
আমি - তাই?
সুমি - একটা কথা রাখবে?
আমি - কি?
সুমি - আমার বন্ধুরা আপনার কথা শুনেছে। তারা তোমার সাথে কথা বলতে চায়। আমি বলেছি নিয়ে যাব তোমায়। যাবে?
আমি হেসে বললাম - যাবো। কিন্তু কোথায় যাবো?
সুমি - আমার সাথে। নদীর পাড়ে।
আমি - যাবো। 
সুমি - সত্যি যাবে তো। 
আমি - বিশ্বাস হচ্ছে না। যাবো।
সুমি - দাদা যখন তোমার খেলা দেখতো টিভিতে তখন আমিও দেখতাম। তখন চিনে নিয়ে ছিলাম তোমায়। তখন একরকম মনে হোত। এখন দেখছি তুমি আমার মতই সহজ সরল।
আমি - আমি বরাবরই সহজ সরল মানুষ। মানুষ আমায় ভুল বুঝলে কি করবো।
সুমি - দেখো চাঁদের ঠিক মাঝে একটা তারা কেমন জ্বল জ্বল করছে। 
আমি সেই দিকে তাকিয়ে বললাম - ঠিক তোমার মত সুন্দর। 
কথাটা বলার পর আমি একটু লজ্জা পেলাম। কি জানি সুমি যদি কিছু মনে করে। দেখলাম সুমিও লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। একটু পরে সে বলল - সুন্দর না ছাই। কেউ তো পছন্দ করে না। 
কথাটা শেষ করেই সে দৌড়ে চলে গেল নিচে।
 
সে রাতে আমার ঘুম এলো না। কত হিজিবিজি চিন্তা আমার মনের মাঝে উথালপাতাল করতে লাগলো। আমার মনের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে চোরা স্রোত। যখন ফুটবল খেলতাম তখন প্রথম প্রথম বড় ক্লাবের খেলা থাকলে এমন হতো রাতে। যদিও পরে ঠিক হয়ে গেছিল। আজ কেনো এমন হচ্ছে বুঝি না। আগেও জীবনে অনেক নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। যখন আমি আমার খেলোয়াড়ী জীবনের তুঙ্গে ছিলাম এমন অনেক সুন্দরী নারী এসেছে বন্ধুত্ব করতে। কিন্তু তখন আমি এতটাই অন্তর মুখী ছিলাম যে, কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারিনি। তাই আমার কোনো দুঃখ নেই। বাড়িতে মা, আছে ভাই আর ভাই বউ আছে। ভাইও চাকরি করে সরকারি অফিসে। আমার বিয়ে টে তেমন আগ্রহ ছিল না। তাই এখনও একা এক ঘুরতে পারি মনের সুখে। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে মন টা কেমন যেন উদাসীন লাগছে। এই উদাস প্রকৃতি আমাকে উদাসীন করে তুলেছে। তার পর আজ মনে হলো সুমি কে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। সুমি সুন্দরী। যৌবনের আতিশয্যে তার সৌন্দর্য যেন ভরা গঙ্গার মতো বহমান। কিন্তু ওকে নিয়ে আমি কেন ভাবছি। সে তো আমার বন্ধুর বোন। না না আর ভাবা ঠিক না। 

কখন ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। সকাল নয়টায় ঘুম ভাঙ্গলো। গ্রামে এখন অনেক বেলা। সবাই চলে গেছে মাঠের কাজে। নিচে নামলাম। দেখি মাসিমা সুমির ঘরের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। তার মানে সে ও ওঠেনি। আমার মত কি ওর ও রাতে ঘুম হয়নি? কি জানি। 

আমাকে দেখে মাসিমা বললেন - কি হলো আজ এত দেরি যে। 
আমি চট করে বললাম - মাসিমা একটা গল্পের বই পড়ছিলাম তাই দেরি করে ঘুমিয়েছিল।
মাসিমা - কিন্তু সুমির কি হলো। সেও কি ? 

কথা বলার ফাঁকে সুমি দরজা খুলে দিলো। ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বলল - কটা বাজে মা?

মাসিমা - বেলা গড়িয়ে দুপুর হলো। আজ কি হলো তোর। 
সুমি কোনো কথা না বলে কল ঘরের দিকে চলে গেলো। মাসিমা আমাকে বললেন - চলো বাবা খাবে চলো। 
আমি বললাম - আপনি যান আমি আসছি। 
মাসিমা এবার জোরে বলেলন - এই যে রাজ রানি খাবি আয়। দুজনে খেয়েনে। 

দুপুরে সৌম্য ফিরলো। দুপুরের খাওয়া শেষ করে আমি আর সৌম্য উপরের ঘরে চলে এলাম। আমি সৌম্য কে বললাম - কি রে আজ যাবি তো?
সৌম্য - কোথায় রে?
আমি - ভুলে গেলি? তালসারি।
সৌম্য - আমার না কেমন ভয় করে।
আমি - আমার ওপর ভরসা নেই তোর?
সৌম্য - আরে তোর ওপর কেন ভরসা থাকবে না। তোর ওপর ভরসা আছে বলেই তো ….
আমি - কি?
সৌম্য - চল যাবো। কিন্তু বাড়িতে যদি জানতে চায়? 
আমি - মাসিমা কে আমি সামলে নেব। সবাই যখন ঘুমাবে তখন বেরোনো। শোন একটা টর্চ লাগবে। একটা ছুরি। জোগাড় কর। 
সৌম্য - হয়ে যাবে। এখানে টর্চ আছে। ছুরিটা নিচ থেকে নিয়ে নেবো। 
আমি - মনে থাকে যেন। রাত এগারোটায় বেরোব। 
সৌম্য - বেশ। শোন না আমি তো ছিলাম না, সুমি তোকে জ্বালাতন করেনি তো। আরে বলিস না, ছোট। থেকেই খুব দুরন্ত। বাড়িতে যে আসে তাকেই জ্বালায়। দয়া করে ওর কোথায় কিছু মনে করিস না। 
আমি মনে মনে খুশি হয়ে বললাম - না রে। আমাকে জ্বালাতন কেন করবে। 
সৌম্য - বিয়ের কথা হচ্ছে। কিন্তু ওর তো কাউকে পছন্দ হয় না। আমায় বলে তুই আগে বিয়ে কর। 
আমি হেসে বললাম - ঠিক তো তুই করে ফেল বিয়ে টা। আবার আসবো তোর বিয়েতে।
সৌম্য - কেনো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ