সোনালি স্বপ্ন

  সোনালি স্বপ্ন 

অতনু সরকার  


ময়দান এর ভিতর দিয়ে এলোমেলো হাঁটতে থাকে  অনিস।  কোথাও  যাবার নেই। তবু উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে চলেছে উদভ্রান্তের মত । মরশুমের শুরুটা বেশ ভালো হলেও মাঝপথে এসে কেমন যেন একটা ছন্নছাড়া ভাব। বেশ কিছুদিন হল ফর্ম এর ধারে কাছে নেই  অনিস। এটা ভাবতেই ওর শরীরটা যেন মাতালের মত টলে যায়। যখন প্রথম বড় দলে এলো তখন বেশ ভালোই  খেলছিল । প্রথম বছর প্রথম একাদশে জায়গা পেয়ে গেল । প্রথমে দুটো ম্যাচ ভাল খেলেছিল। হঠাৎ কেন যেন ছন্দপতন হল বুঝতে পারছে না।  তাই বাড়ির দিকে না হেঁটে চলতে শুরু করল উল্টো পথে। ময়দানের উপর দিয়ে চলতে চলতে কখন যেন ভিক্টোরিয়ার সামনে এসে বসে পড়ে। আর তখনই ওর  বাড়ি যাওয়ার কথা মনে আসে ।  আসলে নানা রকম ভাবনা ওর মাথায় ঘুরছে । পরপর দুটো ম্যাচে ওর জায়গা হল রিজার্ভ বেঞ্চে । এটা মেনে নেওয়া এর পক্ষে সম্ভব নয় । খবরের কাগজের নানা রকম  লেখা বেরিয়েছে।  “উঠতি তারকা অকাল পতন” শিরোনামে একটা নামকরা দৈনিক প্রতিবেদন বার করেছে । কয়েক লাইন পড়ে আর কাগজটার দিকে ফিরেও তাকায় নি। অনিস মনে মনে ঠিক করে এ সব সমালোচনার জবাব ওকে মাঠেই  দিতে হবে। মনটা শক্ত করে,  তারপর বাড়ির জন্য বাস ধরে।

 

 রবি, সোম পরপর ছুটি কারণ সামনের সপ্তাহে ওদের কোনো ম্যাচ নেই । তাই বিশ্রামের জন্য ছুটি দিয়েছে। অনিস বসে থাকে না । ওদের বাড়ির পিছনে রয়েছে মস্ত একটা খেলার মাঠ। রবিবার সকালে পাড়ার  কয়েকজন ফুটবলার কে ডেকে প্র্যাকটিস শুরু করে।  কিছুক্ষণ  শুধু দৌড় তারপর একটু ফ্রি হ্যান্ড আর স্ট্রেচিং করার পর শুরু করে বল নিয়ে প্র্যাকটিস ।বিকেলে আবার মাঠে আসে। আবার  প্র্যাকটিস করে । ফিরতে ওকে হবেই, কিন্তু কোথায় যেন একটা গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। খেলতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। সোমবার পাড়ার ছেলেদের নিয়ে চলল প্র্যাকটিস, ছোট পাস বড় পাস গুলো যাতে  সঠিক হয় । তার জন্য চলতে থাকে নিরলস পরিশ্রম । মঙ্গলবার ক্লাবের প্র্যাকটিস থেকে ফিরল দুপুর দুটোয়। আবার চারটের সময় পাড়ার মাঠে বল কন্ট্রোল প্র্যাকটিস। প্রথম বছর বড় দলে সই  করে যদি কয়েকটা ম্যাচ খেলে বসে যেতে হয় তাহলে কপালে দুঃখ আছে।  প্র্যাকটিস ম্যাচে সব ঠিকঠাক হলেও আসল ম্যাচে গিয়ে যেন কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। বুধবার কোচ অসীম দা  আলাদা করে  ডেকে নিলো অনিস কে পাশে বসিয়ে অসীম দা বলল -  কি ব্যাপার বলতো তোর?

অনিস মুখ নিচু করে বলল -  বুঝতে পারছি না প্র্যাকটিস ম্যাচে সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে অথচ………...।

 অসীম দা বলল -  বাড়িতে তোর কোন সমস্যা চলছে কি?

 উত্তর দিলো -  কই না তো তেমন কোন সমস্যা তো নেই।

 অসীম দা পিঠে হাত রেখে বলল -  ক্লাবের কর্মকর্তারা কি তোকে কিছু বলেছে?

 অনিস আগেরবারের মতই উত্তর  দিল-  না তো।

 অসীম দা বলল -  তোর মন সংযোগ এর অভাব হচ্ছে,  যার ফলে এই সমস্যা বুঝলি । তুই এক কাজ কর।  প্রতিদিন  ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধ্যান কর।

 অনিস -  কিভাবে করব?

অসীম -  একটা ঘরে তুই শুধু একা জানলা দরজা বন্ধ। কয়েক  মিনিট চুপ করে বসে  থাকবি। মনটা কে স্থাপন করবি একটা স্থির বিন্দুর উপর। আজ থেকে শুরু করবি বুঝলি?

অনিস উত্তর দেয় -  আচ্ছা কখন করব অসীম দা?

অসীম -  যখন সময় পাবি তখন করবি, আর কটা দিন মন খুলে আড্ডা মার, খবরের কাগজ দেখবি না। পারলে সিনেমা দেখ। কথা শেষ করে অসীমদা উঠে চলে যায়। সেদিন থেকে খবরের কাগজ দেখা বন্ধ  করলো  অনিস। সন্ধ্যার সময় বারান্দায় চুপ করে বসে আছে।  রাস্তার আলো বারান্দায় পড়ে বলে আলো জ্বালতে হয় না। আধো আলো আঁধারিতে চেয়ারটা নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে অনিস। স্বপ্নের ফানুস আকাশে ডানা মেলতে  থাকে।  ২০২২  সালে ফুটবলের আসর বসবে কাতারে। সেখানে বাছাই পর্বের খেলা চলছে ভারতীয় দল বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র পেতে হলে চীনকে হারাতে হবে। চীনের গুয়াং - ঝু  স্টেডিয়ামে খেলা।  সকাল থেকে মনের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা বইছে সকলের মধ্যে অনিস  তার ব্যতিক্রম নয় । ভারতীয় দলের মাঝমাঠের প্রধান দায়িত্ব অনিসের এর উপর । অনিস ভারতের উঠতি তারকা। চীনের সময় অনুযায়ী বিকেল তিনটে খেলা শুরু হল। চীন - ভারত মাঠের লড়াই দারুন জমেছে । প্রথমার্ধ গোলশূন্য শেষ হলো। কেউ ভাবতেই পারিনি এত ভালো খেলতে পারে ভারতীয় দল। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলো অনিস  চমৎকার বল দিচ্ছে স্ট্রাইকারদের কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না । এবার অনিস মাঝমাঠ থেকে একটা বল পেয়ে দৌড় শুরু করল । সাপের মতো এঁকেবেঁকে দু-তিনজন কে টপকে বক্সে ঢুকে পড়ল । ছোট বক্স এর মাথায় পৌঁছে একবার চোখ তুলে দেখল গোলকিপার চিয়াং একটু এগিয়ে আছে। অনিস বলটা চামচের মতো তুলে লব করে দিল মাথার উপর  দিয়ে । সহ খেলোয়াড়রা ঝাপিয়ে পড়ল ওর গায়ে।  চীন কে হারিয়ে ভারত যোগ্য করল । দেশে উৎসব পালিত হচ্ছে। দেশের প্রথম সারাইর দৈনিক ছাপা হয়েছে অনিসের ফটো ।  দু'বছর পর কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হবে । ভারতীয় দল প্র্যাকটিস করছে ।  কলকাতায় কাতারে মতই বেশ গরম তাই কলকাতায়।  ব্রাজিলিয়ান কোচ লুইস জোরকদমে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন । বিশ্বকাপের ১০  দিন আগে ভারতীয় দল রওনা হলো কাতারের উদ্দেশ্যে। নীল শার্ট আর কালো ব্লেজার পরা ভারতীয় দলের মাঝ মাঠের প্রধান ভরসা বাংলার অনিস । ১৫  ই জুন ভারতের প্রথম ম্যাচ ।  ভারতের গুরুপে  আছে ভারত, ঘান্‌ উরুগুয়ে এবং ফ্রান্স ভারতের প্রথম ম্যাচ ফ্রান্স এর সঙ্গে । শক্তিশালী ফ্রান্স দলের সঙ্গে ভারতীয় ছেলেরা কিভাবে লড়াই করে সেটাই দেখার বিষয় । প্রথমেই মাঠে বাজলো ভারতের জাতীয় সংগীত । যেন দেখতে পাচ্ছে ১৫০ কোটি  লোক উঠে দাঁড়িয়েছে গোটা দল উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে বাংলা থেকে এবার আছে ৫ জন ।অনিস   মিড ফিল্ডার ব্যাক প্রীতম রায়, তুহিন স্ট্রাইকার দিব্যেন্দু এবং  গোলকিপার সুব্রত।  খেলার শুরুর বাঁশি বাজল কাতারের আল আমিন স্টেডিয়ামে হঠাৎ শোনা গেল বাংলায় চিৎকার  দিব্যেন্দু দিব্যেন্দু।  শক্তিশালী দল হলেও ফ্রান্সের উপরে চেপে বসেছে ভারত ।মাঝমাঠের দখল নিয়ে তীব্র লড়াই ভারতের প্রধান কান্ডারী অনিশ খেলে মোহনবাগানে এবং রাও  খেলে ডেম্পতে। ওদের বোঝাপড়াটা দারুন হয়ে গেছে খেলার ৭০ মিনিটের মাথায় অনিস গোল করে দিল।  ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে। অবিশ্বাস্য লাগছে স্কোর বোর্ড  খেলা শেষ হতে তখন আর মাত্র ১  মিনিট বাকি আবার গোল অনিশের দুরন্ত গোলে এগিয়ে গেল ভারত।  স্কোরবোর্ড তখন জ্বলজ্বল করছে ভারত ২-০।  খেলা শেষের  বাঁশি বাজবে এমন সময় বারান্দার গ্রিল টা শব্দ করে খুলে গেল । অনিশের  স্বপ্ন গুলো কোথায় যেন উড়ে  গেল। আলো-আঁধারিতে দেখল ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে  সুলগ্না । 

 সুলগ্না বলল -  কি ভাবছিলে এতক্ষণ।  আমি কখন থেকে তোমাকে ডেকে যাচ্ছি।  অথচ কোন সাড়া নেই আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছ ।

অনিশের এর চোখে তখন একটু আগে দেখা স্বপ্নের ঘোর লেগে আছে।  অনিস চুপ করে রইল।  তারপর বলল -  একটা কথা ভাবছিলাম। কিন্তু তুমি হঠাৎ আমার এখানে ?

সুলগ্না -  অনেক ভেবে দেখলাম আমি তোমাকে ছাড়া একটুও অন্য কিছু ভাবতে পারছিনা। 

 অনিস চুপ করে রইল। কদিন আগে দুজনের মধ্যে একটু  ঝগড়া হয়েছিল।  কারণটা ছিল অনিশ আর  সুলগ্না প্রথমে খুব ভালো বন্ধু ছিল। যতটা ভালো বন্ধু হওয়া যায় ঠিক ততটা।  কিন্তু অনিশ হঠাৎ করে ওকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় যেটা  সুলগ্না্র মোটেই ভাল লাগেনি।  সেই দিন সুলগ্না রাগ করে বাড়ি চলে গিয়েছিল। সেই সুলগ্না একেবারে বাড়িতে এসে হাজির।  অনিশ কে চুপ করে থাকতে দেখে সুলগ্না  বলল কি হলো -  কথা বলবে না।  খবরে বেরিয়েছে তুমি ভালো খেলতে পারছ না। 

 অনিস আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কোন উত্তর দিল না।

 সুলগ্না আবার বলল - আসলে প্রথমে আমার রাগ হয়েছিল পরে ভাবলাম তোমাকে না দেখে আমার একটুও ভালো লাগছে না। তাই তোমার কাছে ছুটে এলাম,কথা দিচ্ছি তোমার পাশে সারাজীবন থাকবো।  

অনিশ  সুলগ্নার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোণে একটা খুশির ঝলক বয়ে যাচ্ছে। 

“তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না তুমি আমার …………………। কথাগুলি বলতে গিয়ে অনিশের এর গলা ধরে এল। 

সুলগ্না বলল - আমার জন্য কি তোমার মন খারাপ?

 অনিস -  জানি না।

সুলাগ্না অনিশের  কাছে যায়।  হঠাৎ  জড়িয়ে ধরে অনিশ কে। অনিশের শরীর জুড়ে বয়ে যায় একটা বিশেষ অনুভূতি।

সুলগ্না – দৌড়ে পালায়।

অনিশ  উঠেপড়ে। হাঁটতে হাঁটতে পাড়ার ক্লাবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বেরিয়ে যায়।

 

 সকাল সকাল অনিস কলকাতায় পৌঁছে আজ মোহামেডান ম্যাচ টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একে একে সব প্লেয়ার চলে এল।  অসীমদা টিম লিস্ট করে দিয়েছে।  ১৮ জনের দলে রয়েছে অনিশ, তবে  প্রথম একাদশে ওকে রাখা হয়নি।  যাইহোক অনিস একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। এ কটা দিন অনিস নিজেকে গুছিয়ে নিতে পেরেছে। মানসিক যন্ত্রণা টাও এখন আর নেই।  তাই বেশ হালকা বোধ হচ্ছে এখন।  খেলা শুরু হলো যুবভারতীতে বেশ কয়েক হাজার লোক হয়েছে।  ওর জায়গায় খেলছে মনিপুর থেকে আসা পাইতে। হাফ টাইম এর আগে একটা গোল দিয়ে দিল মহামেদান।  সবার মন খারাপ।  বিরতির সময় অনিশ  সকালের  সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ল।  হঠাৎ  অসীম দা এসে খবর দিল হাফটাইমের পর মাঠে নামতে হবে।  অনিশের  মনে আশার আলো জ্বলে উঠলো।  ভালো করে গা গরম করে নিল।  দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই পাইতের জায়গায় নামল অনিশ।   গ্যালারিতে একটা মৃদু গুঞ্জন চলছে।  মাঠে নেমেই মাঝ মাঠ  নিজের দখলে নিয়ে নিল অনিশ।  অসীম দা একটু অবাক হল।  হঠাৎ এত ভালো খেলতে শুরু করল যে দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটের মাথায় গোলটা শোধ করল দিব্যেন্দু। অনিশের একটা অসাধারণ পাশ এসে পড়ল দিব্যেন্দু পায়ে।  দিব্যেন্দু নিখুঁতভাবে বল গোলে পাঠাল।  খেলার ফল তখন ১-১।

 খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে তিন জনকে কাটিয়ে একটা অসাধারণ দূরপাল্লার শটে গোল করল অনিশ। সারা মাঠে তখন গগনচুম্বী চিৎকার।

 পরের দিন খবরের কাগজের শেষের পাতায় বড় বড় করে অনিশের ছবি বেরিয়েছে।  সঙ্গে লেখা আবার দুরন্ত ছন্দে ফিরলো অনিস । অনিস খবরের কাগজ পড়ল না।  কলেজে যাওয়ার পথে সুলগ্না এল কাগজটা নিয়ে।  প্রথম শ্রেণীর সমস্ত দৈনিকে অনিশের খবর রয়েছে।  সুলগ্না  ঘরে ঢুকে সোজা চলে গেল রান্না ঘরে।  অনিশের মায়ের কাছে। সুলগ্না ঘরে ঢুকে চিৎকার করে বলল -  মাসিমা আজকের কাগজ টা একটু দেখো দেখেছো।

রান্নাঘর থেকে অনিশের মা বলল -  নারে এখনো দেখা হয়নি।

সুলগ্না - এই নাও তুমি এই কাগজ টা দেখো একবার।

মাসিমা -  রাখ পরে দেখব।

সুলগ্না - রাখলে হবে না।  আমি এটা কলেজে নিয়ে যাবো।  তুমি তাড়াতাড়ি দেখে নাও।  গোল করার ছবিটা এই কাগজেই দিয়েছে।  দাও খুন্তিটা আমার কাছে।

 মাসিমা -  তুই কলেজের পোশাক পড়ে  খুন্তি ধরবি?

সুলগ্না উত্তর দেয় -  কিছু হবে না,  দাও তো।

সুলগ্না জোর করে অনিশের মাকে কাগজটা দেখালো।  সেই সময় এক ফোটা আনন্দ অশ্রু এসে পড়ল কাগজের উপর।  সুলগ্না  দেখল ওর চোখেও জল।  আজ যেন ওর মনের আনন্দের বাঁধ ভেঙে গেছে।  ঘর থেকে বেরোনোর সময় একবার অনিশের ঘরে উঁকি দিল।  

তারপর বললো - কাগজটা দেখা হয়েছে নাকি?

 অনিস এতক্ষণ ওদের কথা লুকিয়ে শুনছিল।  সুলগ্না  কে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে পড়েছে।  

সুলগ্নার কথার উত্তর না দিয়ে বললো  - কলেজে দেরি হবে না ।

সুলগ্না -  দেরি হলে তো হবে। কেউ যদি একটু পৌঁছে দিত।  অনিশের মা রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বললো - অনি ওকে একটু পৌঁছে দে না । দেরি হয়ে গেল মেয়েটার।

 অনিশ উত্তর দিল - আমার সময় নেই।

 সুলগ্না বলল  - বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি এসো।

 অনিশ জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল সুমনা দাঁড়িয়ে আছে।  তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল অনিশ।  

গাড়িতে যেতে যেতে অনিশ বলল - আজ আর কলেজে গিয়ে কাজ নেই।  

সুলগ্না - কলেজে যেতে হবে।  খবরের কাগজটা বান্ধবীদের না দেখানো পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।

  অনিস জানতে চায়-  কেন?

 সুলগ্না - তুমি বুঝবে না।  প্লিজ অন্য একদিন তোমার সঙ্গে যাব। যেখানে বলবে সেখানে যাব।

 অনিশ - ঠিক তো?

সুলগ্না  - ঠিক ঠিক ঠিক।

 অনিশ সুমনাকে কলেজের সামনে নামিয়ে দেয়।  সেই মুহূর্তে একদল ছেলে দৌড়ে এসে ঘিরে ধরলো অনিশ কে।  সবার আবদার অটোগ্রাফ দিতে হবে।  মেয়েরাও জানতে পেরে ছুটে এলো।  অগত্যা সবাইকে অটোগ্রাফ দিতে হলো।  এত কাছে অনিশকে পেয়ে যাবে কেউ ভাবতেই পারেনি।  তাই কেউ সুযোগের অপব্যবহার করল না।  সুলগ্না মিটমিট করে হাসছে।  সবার অটোগ্রাফ দেওয়া হয়ে গেলে সুলগ্না বলল  - কখন আসছে নিতে।  

প্রশ্নটা ইচ্ছা করেই করল।  অনিস বল বল কখন আসতে হবে? কলেজের সবাই জেনে গেল অনিশের এর বান্ধবী সুলগ্না । সুলগ্না ওর বান্ধবীদের দেখালো কাগজটা।  মনে মনে ওর ভীষন গর্ব হচ্ছে।  সুমনা সুন্দরী কলেজের ছেলেরা যারা ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখত তাদের স্বপ্ন ভেঙে গেল।  ওরা জেনে গেছে সুলগ্নার মনের মানুষ এক বিখ্যাত ফুটবলার।

 বিকেলের সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সোনালী সূর্যের আভায় চারপাশটা কেমন সুন্দর হয়ে উঠেছে।  গঙ্গার ধার দিয়ে একটা সরু মাটির রাস্তা চলে গেছে।  সেই পথ ধরে  হাতে হাত রেখে হেঁটে চলেছে অনিশ আর সুলগ্না  সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো - - - সেদিন যদি তুমি উপহারটা না দিতে ...।

সুলগ্না - একটু অবাক হয়ে বললো কোন উপহার? 

 অনিশ বললো - মনে নেই  আমার মুখে দিয়ে দৌড়ে পালালে।

সুলগ্না একটু লজ্জা পেয়ে বলল -  ও বুঝেছি?

 অনিশ- সামনে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ।  আর তার আগের দিন যদি দুগালে দুটো পাই ।

সুলগ্না - শুধু দুষ্টুমি বুদ্ধি...

অনিশ - বিশ্বাস করো ওটা আমার শক্তি।

সুলগ্না একটু হেসে বলল - বেশ তো চেষ্টা করব শক্তি বাড়াতে।

অনিশ  মুখটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল - এখন যদি একটা পাই।

লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে  সুলগ্না বলে -  দুষ্টুমি করো না তো ।

অনিশ  নিজেই সুলগ্নার গালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে । অভিমানি সুলগ্না রাগে অনিশের পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে।  একসময় বাড়ির কাছাকাছি এসে উপস্থিত হয় তারা।  



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ