যাত্রা পথে
৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ বিকেল চারটে দশ মিনিট, হাওড়া থেকে ছেড়ে দিল কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস। চলেছি তামিলনাড়ুর ডিন্ডিগালে। ২৫০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি পথ। এই প্রথম বাড়ির বাইরে কাজে চলেছি। বাড়ির সবার মন খারাপ। কিন্তু আমি মনকে শক্ত করে চলেছি একটা নতুন এডভেঞ্চার এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে। চ্যালেঞ্জ আমার বরাবরই ভালো লাগে।
দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। চারিদিকে সবুজ গাছপালা পাল্লা দিয়ে ছুটেছে। এক দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা শুরু হল। দুধারের প্রাকৃতিক দৃশ্য একাকীত্বকে দূর করছে।
১লা অক্টোবর ট্রেন ছুটে চলেছে আপন গতিতে। কোন বিড়ম্বনা ছাড়া একেবারে সঠিক সময়ে। আবছা অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে আলো ফিরছে একটা দিন। রেল লাইনের দুধারে কোথাও নারিকেল আবার কোথাও বিস্তৃত ধানক্ষেত। এক জায়গায় দেখলাম মাইলে পর মাইল জুড়ে রয়েছে আম বাগান। তার উল্টোদিকে আবার কয়েক মাইল দূরে ইউক্যালিপটাস গাছের সারি। বহুদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও দেখছি নতুন নতুন নারকেল বাগান। কোথাও বহুদূর সবুজ মাঠে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। সেই কবে গ্রীক বীর আলেকজান্ডার ভারতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এখন বুঝতে পারি তিনি কেন মুগ্ধ হয়েছিলেন।
এখানে নদীর পাড়ে সারি সারি গাছ, এখানে সূর্য ওঠে পাহাড়ের মাথায় অথবা সাগরের বুক চিরে।এখানে ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় মৃদু নরম বাতাস। ফাগুনে আমের বকুলের গন্ধে ম-ম করে চারিদিক। সমুদ্র তটে আছড়ে পড়ে বিরাট বিরাট ঢেউ।
বলতে বলতে এবার গোদাবরী নদী পার হচ্ছি। কি বিশাল চওড়া এই নদী, বর্ষার ভরা জল এখনো টলমল করছে। কয়েকজন জেলে মাছ ধরছে দেখলাম। তামিলনাড়ুর অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। সেখানে শুনেছি প্রচুর মাছ ধরা হয়।
এলো পড়ন্ত বেলা। নরম রোদ্দুর গায়ে লাগছে, তবে প্রকৃতির বুকে এক মায়াময় আলো ছড়িয়ে রেখেছে সূর্য। কত লোক এলো গেল। হয়তো আর কত লোক আসবে। নানান বৈচিত্রে ভরা একটা ট্রেনের কামরা বাড়ি ছেড়ে পরিজন আর প্রিয়জন ছেড়ে আসার দুঃখ মুছে দিচ্ছে।
এই নানান ভাষা বৈচিত্র্য আর পোশাকের বিচিত্র এক বৈচিত্র নিয়ে ভারত। সূর্য চলেছে অস্তাচলে, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মাথায় হঠাৎ দেখি সিঁদুর রাঙা। লালে লাল অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্য। মোবাইল বার করতে করতে হারিয়ে গেল সেই সুন্দর দৃশ্য। তখন রংয়ের মেলা পাহাড়ের মাথায়।কবির চোখে হয়তো সে রং আরো সুন্দর হতে পারতো কিন্তু আমার সাদা চোখেও খুব সুন্দর লাগলো। এখানে একটু দেরি করে সন্ধ্যা নামে।
তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। শেষ রাতে আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে ট্রেন। মোবাইলে টাইমার সেট করে শুয়ে পড়লাম। খুব ভালো ঘুম হলো না। রাতে স্টেশনে ট্রেন থামে লোক উঠে, লোক নামে। হইচই হয়। তাই বারবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাত দুটোর সময় ঘুম ভেঙে গেল। আর ঘুম এলো না। আমার সঙ্গে আরো দুজন তামিল সহ যাত্রী নামবে। ওরাও রেডি হল। একেবারে সঠিক সময়ে ট্রেন এলো গন্তব্যস্থলে। এখানে অপেক্ষা করছিল একাডেমির কোচ আনন্দ। ওর সঙ্গে এলাম একাডেমিতে।
ওরে বাবা এ তো বিরাট বড় ক্যাম্পাস! অনুগ্রহ ইন্টারনেটশনাল স্কুল। এখানেই থাকার ব্যবস্থা।
২ অক্টোবর আজ মহালয়া। বাংলা জুড়ে খুশি হওয়া। আমি সকালে গেলাম মাঠে। দীর্ঘ ট্রেন যাত্রার ধকল মাঠে গেলে কমতে পারে, ৬ঃ৩০ থেকে প্র্যাকটিস। না আজ আমি মাঠে নামেনি। সবাই বলেছিল এখানে খাওয়া-দাওয়া অন্যরকম। হতেই পারে। প্রথম দিন তো ভালোই লাগলো। আমার থাকার ঘর থেকে পর্বত চূড়া দেখা যায়। চারিপাশে প্রচুর গাছপালা কত জানা অজানা গাছ আর রংবেরঙের ফুল। জানালার ধারে একটা কৃষ্ণচূড়া গেছে প্রচুর লাল লাল ফুল ফুটে আছে। আরেকটা নাম না জানা গাছ অনেকটা লম্বা হয়ে তিন তলার জানালা পর্যন্ত উঠে এসেছে। তাতে অনেক সাদা সাদা ফুল ফুটেছে। দেখতে খুব সুন্দর, কিন্তু নামটা জানি না। থোকা থোকা ফুল ফুটে আছে সারা গাছ জুড়ে। দুদিন রাতে ঘুম হয়নি তাই এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে নেব।
0 মন্তব্যসমূহ