অপেক্ষা। অধ্যায় ১: বিদায়ের দিন

উপন্যাস: অপেক্ষা

অতনু সরকার

অধ্যায় ১: বিদায়ের দিন

অপেক্ষা




শ্রাবন মাসের শেষের দিক আনার বর্ষারও শেষভাগ। আকাশে ঘন মেঘ, মাঝে মাঝে

বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মেঘো ডাকছে ঘন ঘন।  নদীর পাড়ে ছোট্ট গ্রাম 'দেবগ্রাম'। যার

পাস দিয়ে বয়ে চলেছে বেতনা নদি।  সেই গ্রামেরই এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে একটি

কাঁচা ঘর। মাটির বাড়ি হলে কি হবে বেশ মজবুত করে করা। বাড়ির একটি ঘরের

জানালায় দাঁড়িয়ে আছে রাধা। বয়স তেইশ, চোখে গভীর বেদনার ছাপ। হাতের

আঙুলে ধরা অভিরূপের দেওয়া লাল চুড়ি, যা সে এখনও খুলে ফেলেনি।   

জানালার বাইরে অভিরূপ দাঁড়িয়ে, কাঁধে ব্যাগ, চোখে স্বপ্ন। কলকাতার ট্রেন ধরবে।

সেখানে গিয়ে চাকরি খুঁজবে, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। অভিরূপের মা-বাবা

অনেক আগেই মারা গেছেন। আপন বলে কেউ নেই তার। গ্রামের স্কুলে পড়া শুনা

কিছটা করেছিল। যখন যা পায় সেই কাজ করে কোন রকমে এক জনের সংসার

ছলে যেত। রাধা ছিল ওর ছোট বেলার একমাত্র আত্মার বন্ধু। তারপর বিপদে

আপদে ওই রাধাই ওকে দেখে। সমাজ কে উপেক্ষা করেই সে ছুটে যায় অভির

কাছে। সেই অভি বুকে একরাশ আশা আর মনে হাজারও স্বপ্ন নিয়ে কলকাতার

পথে পা বাড়ায়।  একজনের চোখে জল আর একজনের চোখে স্বপ্ন। রাধা জানালা 

অপর পাড় দিয়ে অভিরূপের হাত টা ধরে ধরা গলাইয় বলে - তুই ফিরে  আসবি তো,

চিঠি লিখবি তো?

 রাধার কণ্ঠ কাঁপছিল। চোখের কোনায় জল ছল ছল করেছে। 

অভিরূপ রাধার হাত শক্ত করে  ধরল তারপর বলল-   রাধা, আমার ফিরে আসাটা

তোর জন্যই হবে। আমি কিছু একটা করে ফিরব। তখন কেউ আমাদের আলাদা

করতে পারবে না। তুই আমার জন্য অপেখা করিস। 

রাধার চোখ দিয়ে জলের ধারা বইতে লাগল। আকাশ ধন কালো হয়ে এসেছে। অভি

তাড়াতাড়ি বিদয় নিল। রাধা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে অভির চলে যাওয়া দেখছিল।

কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল ওর মনে নেই। যখন বৃষ্টির দমকা ছাট এসে লাগল ওর মুখে

তখন সম্বিত ফিরে এলো। তবু সে সরলো না। আঁচল টা হাতে ধরে জানালা দিয়ে

প্রসারিত করে দিল তার হাত।

হয়তো অভি এতক্ষণে ট্রেন টা পেয়ে গেছে। আবার দেখা হবে কিনা রাধা জানে না।  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ